bus service

বেলা গড়াতেই বাস উধাও, বেশি ভাড়ায় চলছে অটো-শাটল

অভিযোগ, দিনের শুরুতে বাসের দেখা মিললেও দুপুর গড়াতেই কার্যত তা উধাও হয়ে যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে নাকাল যাত্রীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ০৭:২১
Share:

ভোগান্তি: পর্যাপ্ত গণপরিবহণের অভাবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের দিনলিপি অব্যাহত। শনিবার, বাসের জন্য লম্বা লাইন ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

পথে অমিল বাস। তাই কোথাও ছোট মালবাহী গাড়িতে চালকের পাশের আসনে চড়ে বসছেন তিন জন। অবস্থা এমনই যে, চালকের পক্ষে গিয়ার নিয়ন্ত্রণ করার জায়গাটুকুও নেই! গাড়ির পিছনেও গাদাগাদি ভিড়। কোথাও আবার ছোট গাড়িতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ছেন ছ’-সাত জন যাত্রী। এর মধ্যেই আবার চলছে ব্যক্তিগত নম্বর প্লেটের শাটল গাড়ির রমরমা। গত ১ জুলাই থেকে গণপরিবহণে রাজ্য সরকার ছাড় দেওয়ার পর থেকে শহরের ছবিটা এমনই। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দিনের শুরুতে বাসের দেখা মিললেও দুপুর গড়াতেই কার্যত তা উধাও হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়ি ফেরার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে নাকাল যাত্রীদের। কেউ কেউ বিকল্প গণপরিবহণের পথে হেঁটে বাড়তি ভাড়ার কোপে পড়ছেন বলেও অভিযোগ। কারণ, বাসের আকাল বুঝে শহরের প্রায় সব অটো রুটেই দ্বিগুণ বা তিন গুণ ভাড়া হাঁকছেন চালকেরা। রাত বাড়লে সেই ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে আরও কয়েক গুণ। ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন ট্যাক্সিচালকেরাও।

Advertisement

এর মধ্যে পথচারী থেকে পুলিশ-প্রশাসনের কালঘাম ছোটাচ্ছে শাটল গাড়ির রমরমা। অভিযোগ, ব্যক্তিগত নম্বর প্লেট লাগানো বহু গাড়ি এই মুহূর্তে শহরের রাস্তায় শাটল খাটছে ও যেমন খুশি ভাড়া হাঁকছে। বাড়ি ফেরার তাড়ায় নিরুপায় হয়ে সেই ভাড়া গুনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। যেমন, শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ হাজরা মোড় থেকে ডানলপের দিকে যাওয়ার বাস পাচ্ছিলেন না সুমেধা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘৩০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে। তবু একটাও বাস নেই। এতটা পথ তো আর অটোয় যাওয়াও সম্ভব নয়। কয়েকটি হলুদ ট্যাক্সি ওই পথ যেতে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা চাইছিল। শেষে আরও পাঁচ জন যাত্রীর সঙ্গে ৩০০ টাকার শাটলে ফিরলাম।’’ সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে উল্টোডাঙায় ফেরার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা সুশোভন ঘোষ বললেন, ‘‘রাত ৮টার পরে এমনিতেই সল্টলেকের রাস্তাগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। বাস নেই, অটো ২০০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ করে যেতে হবে বলে জানাল। বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে শেষে বেশি টাকায় অটোতেই চড়তে বাধ্য হলাম।’’ মল্লিকবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অসুস্থ বাবাকে দেখে বেরোনো সোহিনী হালদার আবার বললেন, ‘‘বাড়িতে মা অসুস্থ। ৪৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি, একটাও গাড়ি নেই। গাড়ি যদি পাওয়া না-ই যায়, তা হলে গণপরিবহণে ছাড় দেওয়ার মানে কী?’’

বাসমালিক সংগঠনগুলির দাবি, জ্বালানির দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে পুরনো ভাড়ায় যে বাস চালানো সম্ভব নয়, সেটা রাজ্য সরকারকে বার বার বলেও লাভ হয়নি। তাই এখন দুপুরের পরে গাড়ি চালানো সম্ভব নয় বুঝেই বাসমালিকেরা বাস তুলে নিচ্ছেন। ফলে বাড়ছে অটোর এবং বেআইনি শাটল গাড়ির দৌরাত্ম্য। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশের কী ভূমিকা? কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) অরিজিৎ সিংহ বললেন, ‘‘যেখানেই অনিয়ম নজরে এসেছে, সেখানেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত দু’দিনে বেআইনি শাটলের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা রুজু হয়েছে। আগামী দিনেও কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ লালবাজার যদিও মনে করছে, ভাড়া নিয়ে টালবাহানা না মিটলে পথে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি-সমস্যার সুরাহা মেলা কঠিন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন