Kolkata

Market Price: বন্ধ ট্রেন, বাড়ছে খরচ পরিবহণের, আনাজের দামের দাপুটে ব্যাটিংয়ে দিশেহারা শহরের জনতা

ট্রেন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্তের জেলা থেকেও গাড়িতে করেই আসছে সমস্ত আনাজ। সেই গাড়ির ভাড়া আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ০৭:১৩
Share:

ফাইল চিত্র

পেট্রল-ডিজ়েলের পাশাপাশি ময়দানে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেছে ওরাও— বেগুন, লঙ্কা আর ক্যাপসিকাম! পটল, ঢ্যাঁড়স, উচ্ছেও কম যায় না। হাফ সেঞ্চুরির আশপাশে রয়েছে তারাও। রান তুলছে পেঁয়াজও। যে গতিতে সে এগোচ্ছে, তাতে হাফ সেঞ্চুরি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন অনেকেই। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আর সাম্প্রতিক কালের অতিবৃষ্টিতে চাষের তো ক্ষতি হয়েছেই, সেই সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে পেট্রল-ডিজ়েলের অস্বাভাবিক হারে মূল্যবৃদ্ধি। যার জেরে পরিবহণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আনাজের দাম নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে শহরের মধ্য ও নিম্নবিত্তের। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ট্রেন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্তের জেলা থেকেও গাড়িতে করেই আসছে সমস্ত আনাজ। সেই গাড়ির ভাড়া আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গিয়েছে। তবে বাজার সমিতিগুলির মতে, জ্বালানির দাম কমলে এবং লোকাল ট্রেনে আনাজ বহনের ছাড়পত্র মিললে দাম কিছুটা হলেও কমবে।

Advertisement

গড়িয়াহাট বাজারের আনাজ বিক্রেতা আসিফ মণ্ডল বলছেন, “আনাজ বাজারে আনব কী, এখন তো গাড়িভাড়াতেই সব টাকা শেষ! করোনাকালে গাড়িভাড়া এমনিতেই বেশি। তার উপরে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়ায় সেই ভাড়া আরও বেড়েছে। বনগাঁ থেকে ছোট ট্রাকে আনাজ আনতেই ভাড়া লাগছে পাঁচ হাজার টাকা। ট্রেন চালু থাকলে ওই একই পরিমাণ আনাজ আনতে খরচ হত বড়জোর এক হাজার টাকা।”

মানিকতলা বাজারের জনা কয়েক বিক্রেতা জানালেন, গাড়িভাড়া বেশি দিয়েও বেশি আনাজ আনা যাচ্ছে না। কারণ, এখনও বাজার সারা দিন খোলা রাখার অনুমতি নেই। এ দিকে, আনাজ সবটা বিক্রি না-হলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই যেটুকু আনাজ আনা হচ্ছে, তা বিক্রি করেই গাড়িভাড়ার টাকা তুলতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। মানিকতলা বাজার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবলু দাস বললেন, “অতিবৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড়কে তো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, কিন্তু জ্বালানির দামটা যদি সাধ্যের মধ্যে রাখা যেত, তা হলে আনাজের দাম কিছুটা হলেও কমত।” গড়িয়াহাট বাজার সমিতির সম্পাদক দিলীপ মণ্ডলের কথায়, “স্পেশ্যাল ট্রেন চালু হলেও তাতে ভেন্ডরের কামরা নেই। রেলের কাছে আমাদের অনুরোধ, ওই সমস্ত ট্রেনে আনাজ নিয়ে উঠতে দিন। তা হলে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে, যার হাত ধরে আনাজের দামও কমবে।”

Advertisement

কিন্তু ট্রেনে আনাজ বহন শুরু হলেই যে দাম কমবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? চাষি ভেন্ডর অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তথা কোলে মার্কেটের জনসংযোগ আধিকারিক কমল দে-র মতে, “এখন গাড়িভাড়ায় যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম খরচ হবে ট্রেনে। সেই হিসেবে আনাজের দাম কিছুটা তো কমবেই। ভেন্ডর কামরায় আনাজ ভর্তি থাকে বলে ৪০ জনের বেশি ব্যবসায়ী উঠতে পারেন না। তাই সংক্রমণের আশঙ্কাও খুব কম। তার চেয়ে বরং সাধারণ কামরায় অনেক বেশি ভিড় হয়।’’ কমলবাবুর মতে, গাড়িভাড়া বৃদ্ধির ফলে শুধু খোলা বাজারেই নয়, পাইকারি বাজারেও দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে আনাজ কিনে ফের গাড়ি ভাড়া করে তা স্থানীয় বাজারে নিয়ে যেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। ফলে, আনাজের দাম প্রতিটি ধাপে বেড়ে যাচ্ছে। খুচরো বাজারে যখন আনাজ আসছে, তখন দাম দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাচ্ছে।
বাগুইআটি বাজারের কয়েক জন বিক্রেতার দাবি, শুধু গাড়িভাড়া বৃদ্ধিই নয়, বাজারে আনাজ বিক্রিও হচ্ছে কম। আগে সাধারণ ক্রেতাদের পাশাপাশি বেশ কিছু পাইস হোটেলও প্রচুর পরিমাণ আনাজ কিনত। করোনাকালে বহু পাইস হোটেলই বন্ধ। ফলে, আনাজ কিনছে না তারা। সব মিলিয়ে আনাজের দাম বেশি হলেও বিক্রেতারা কিন্তু তেমন লাভের মুখ দেখছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন