একটি ঐতিহ্যের অবসান হল!
লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপের দায়িত্ব ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স)-এর হাত থেকে কেড়ে দেওয়া হল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধানকে।
লালবাজার সূত্রে খবর, সেন্ট্রাল লক-আপের পাহারায় থাকা পুলিশদের একাংশের বিরুদ্ধে বন্দিদের জুলুম, হেনস্থা, মারধর করার অভিযোগ ওঠার জেরেই এই সিদ্ধান্ত। ৫০ বছর ধরে ওই লক-আপের দায়িত্বে ছিলেন ডিসি (আরএফ)। ১৭ মে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার নির্দেশ জারি করেছেন, সেন্ট্রাল লক-আপকে যুগ্ম কমিশনারের (অপরাধ দমন) অধীনে আনা হল। ইনস্পেক্টর থেকে কনস্টেবল, সেখানকার সব পুলিশকর্মী যুগ্ম কমিশনারের (অপরাধ দমন) অধীনে আসবেন।
লালবাজারের় ট্র্যাফিক ভবন ও কন্ট্রোল রুমের মাঝখানে তিনটি তলা জুড়ে সেন্ট্রাল লক-আপ। একতলায় দু’টি, দোতলায় পাঁচটি ও তিনতলায় চারটি সেল। যার মধ্যে মহিলাদের দু’টি। সব মিলিয়ে দেড়শো অভিযুক্ত থাকতে পারেন। সাধারণত সব সময়ে দু’জন সার্জেন্ট, দু’জন এসআই বা এএসআই, ১০ জন কনস্টেবল ও মহিলা কনস্টেবল ও মহিলা হোমগার্ড মিলিয়ে আরও চার জন এর পাহারায় থাকেন। তাঁদের উপরে আছেন এক ইনস্পেক্টর, যিনি সেন্ট্রাল লক-আপের ওসি। বন্দিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এক জন চিকিৎসক আছেন।
সেন্ট্রাল লক-আপ নিয়ে কিছু দিন ধরেই নানা অভিযোগ আসছিল। বন্দিদের থেকে টাকা চাওয়া, না পেলে মারধর, নির্দিষ্ট পোশাক দিতে অস্বীকার, পরিষ্কার পানীয় জলের বদলে নোংরা জল খাওয়ানো— পাহারার দায়িত্বে থাকা পুলিশদের একাংশের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ ছিলই। কিন্তু একবালপুরের বাসিন্দা ফারদিন খান নামে এক যুবকের মৃত্যুর পরে লালবাজার নড়ে বসে।
ওই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু হয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর ফারদিন মারা যান এসএসকেএমে। এ বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট ওই ঘটনার তদন্তভার কলকাতা পুলিশের হাত থেকে নিয়ে দেয় সিআইডি-কে। যা বিড়ম্বনায় ফেলেছে লালবাজারকে।
ছিনতাই দমন শাখার গোয়েন্দারা গত ১৬ নভেম্বর ফারদিনকে হাতে পান। ওই রাতে তিনি ছিলেন সেন্ট্রাল লক-আপে। পরদিন গোয়েন্দারা ফারদিনকে আদালতে হাজির করিয়ে জানান, তাঁকে আর পুলিশি হেফাজতে রাখার দরকার নেই। বিচারক ফারদিনকে জেলে পাঠান। কিন্তু প্রেসিডেন্সি জেলে ঢোকার সময়ে দেখা যায়, ফারদিন অসুস্থ। তাঁর শরীরে আঘাতও আছে।
লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, সেন্ট্রাল লক-আপে ফারদিনের উপরে জুলুম হয়েছিল। সিপি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘সেন্ট্রাল লক-আপের বন্দিদের অধিকাংশই গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত।...সুতরাং গোটা বিষয়টির উপরে নজর রাখবে, এমন একটি কাঠামো গোয়েন্দা বিভাগকে শীর্ষে রেখে গড়া হল।’
লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘গোয়েন্দা বিভাগের হাতে থাকা মামলার অভিযুক্তদের উপরে সেন্ট্রাল লক-আপে জুলুম হচ্ছে। আদালতে, মানবাধিকার কমিশনে সমস্যায় পড়ছেন গোয়েন্দা অফিসারেরা। সিপি তারই প্রতিকার করতে চেয়েছেন।’’