জনরোষ: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিয়োনেল মেসিকে ভাল করে দেখতে না পাওয়ার ক্ষোভে তুমুল বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর দর্শকদের। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
ফুটবলের মহাতারকাকে চোখের দেখা দেখতে সকালের উন্মাদনা কয়েক ঘণ্টাতেই বদলে গেল গণবিক্ষোভে! হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে লিয়োনেল মেসিকে এক ঝলক দেখতে যাঁরা শনিবার ভোর থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বাইরে ভিড় করেছিলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারমুখী হয়ে উঠলেন তাঁরাই। মেসিকে দেখতে না পাওয়ার ক্ষোভে দর্শকদের একাংশ স্টেডিয়ামের ভিতরে তো বটেই, বাইরে বেরিয়েও বিক্ষোভ দেখালেন। যা চলল মেসি কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও। মেসিকে দেখতে না পাওয়ার হতাশায় দর্শকদের কেউ কেউ বাইরে বেরিয়ে হাউহাউ করে কাঁদলেন, কেউ ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে উদ্যোক্তাদের উপরে।
দর্শকদের উপরে লাঠি চালান নিরাপত্তারক্ষীরা (ডান দিকে)। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
এ দিন স্টেডিয়ামের বাইরে একাধিক সরকারি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে উত্তেজিত জনতা। শাহরুখ খানের গাড়ির উপরে আক্রমণের আশঙ্কা করে পুলিশ তাঁর গাড়ি কোনও মতে বার করে দেয়। এমনকি, সল্টলেক স্টেডিয়ামের বাইরে পূর্বাচলে একটি পেট্রল পাম্পেও উত্তেজিত জনতা চড়াও হওয়ার চেষ্টা চালায়। বড়সড় দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ পেট্রল পাম্পটি বন্ধ করে দেয় বলে খবর। মাঠের ভিতরে বসানো শামিয়ানার লোহার স্তম্ভ নিয়ে স্টেডিয়ামের সুদৃশ্য টানেলের কাচ ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ।
স্বপ্নভঙ্গ: কেউ মধুচন্দ্রিমা বাতিল করে এসেছিলেন মেসি-দর্শনে। তাঁকে দেখতে না পেয়ে হতাশ তাঁরা। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন বেলার দিকে বিক্ষোভ-উত্তেজনায় সল্টলেক স্টেডিয়াম উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও সকালের ছবিটা ছিল আলাদা। আর্জেন্টিনার তারকা মেসিকে এক ঝলক দেখতে শুক্রবার রাত থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে ছিল নীল-সাদা জার্সির ঢল। কেউ কেরল থেকে কলকাতায় এসেছেন, কেউ বা এসেছেন উত্তরবঙ্গ থেকে। কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা থেকেও মেসি-ভক্তেরা সেই ভিড়ে শামিল হন। নির্ধারিত সময় মেনে সকালে স্টেডিয়ামের দরজা খুলতেই ভিতরে ঢোকেন দর্শকেরা। কিন্তু কয়েক ঘণ্টাতেই বদলে যায় গোটা পরিস্থিতি।
কেউ ভিআইপি টিকিট কেটে এসেছিলেন মেসি-দর্শনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
যুবভারতীর মাঠের ভিতরে এ দিন সর্বসাকুল্যে ১৬ থেকে ১৮ মিনিট থেকেই বেরিয়ে যান আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। যেটুকু সময়ে মাঠে ছিলেন, তার মধ্যে মেসিকে কার্যত দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ দর্শকদের। বরং অধিকাংশ সময়ে তিনি ছিলেন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রী এবং তাঁদের সঙ্গীদের ঘেরাটোপে। মাঠের মধ্যে সেই জটলায় কার্যত আড়ালেই থেকে যান ফুটবলের মহাতারকা। যার ফলে স্টেডিয়াম থেকে মেসি বেরিয়ে যেতেই দর্শকদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে মাঠের ভিতরে ও বাইরে। স্টেডিয়ামের বাইরে ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গেটের বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই দর্শকেরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
হাবড়া থেকে অমিত ঘোষ, হাওড়া থেকে সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়, বরাহনগর থেকে অভিজিৎ দাস, পুরুলিয়া থেকে সুজিত মাহাতোর মতো অসংখ্য দর্শক স্টেডিয়ামের বাইরে বেরিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে জানান, চার থেকে ১২ হাজার টাকার টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু কেউ দেখতেই পারেননি। পুরুলিয়ার সুজিতের কথায়, ‘‘এত দামের টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে এসে মন্ত্রীর সেলফি তোলা দেখতে হচ্ছে। আমাদের বলা হয়েছিল, মেসি ঘণ্টাখানেক মাঠে থাকবেন, পেনাল্টি শট মারবেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অসংখ্য লোক মেসিকে ঘিরে রাখায় তাঁকে দর্শকাসন থেকে দেখাই যায়নি।’’
এ দিন ১১টা ৫২ মিনিট নাগাদ মেসি মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। যদিও এর পরে দুপুর পর্যন্ত মাঠের বাইরে বিক্ষোভ দেখান দর্শকেরা। অনেককে দেখা গিয়েছে, স্টেডিয়ামের ভাঙা চেয়ার, ফুলের টব হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে। স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের সরাতে এ দিন পুলিশকে লাঠি চালাতেও দেখা যায়। দর্শকদেরএকাংশ স্টেডিয়াম সংলগ্ন হোটেলে গিয়েও বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বিক্ষোভের জেরে ই এম বাইপাসে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। গাড়ির গতি মন্থর ছিল সল্টলেকের ভিতরের রাস্তাতেও।
উন্মাদনা: তখনও শুরু হয়নি গোলমাল। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উৎসাহী দর্শকেরা। শনিবার।— নিজস্ব চিত্র।
এ দিন স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভ দেখানো দর্শকদের একাংশ আয়োজকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সন্তোষপুর থেকে মেসিকে দেখতে মাঠে আসা স্পন্দন গুহ বললেন, ‘‘হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে আমাদের আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা করা হল। এই ঘটনায় যে কলকাতার মুখ পুড়ল, তার দায় কে নেবে?’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে