ভোটের প্রয়োজন ফুরোতেই অথৈ জলে উড়ালপুল-তদন্ত

পোস্তার কাছে নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে কেটে গিয়েছে ৩৬ দিন। কিন্ত উড়ালপুলের বাকি অংশ নিরাপদ কি না, তা আশপাশের বাসিন্দারা এখনও জানতে পারলেন না।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

পোস্তার কাছে নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে কেটে গিয়েছে ৩৬ দিন। কিন্ত উড়ালপুলের বাকি অংশ নিরাপদ কি না, তা আশপাশের বাসিন্দারা এখনও জানতে পারলেন না। বুঝতে পারলেন না, কেন উড়ালপুল নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী সরবরাহে অভিযুক্ত রজত বক্সীকে এখনও ধরতে পারল না পুলিশ। রজত বক্সী তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক স্মিতা বক্সীর আত্মীয়। তাই ভোটের আগে যে রজতকে গ্রেফতার করা হবে না, তা ধরেই নিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু কলকাতায় ভোট মিটে যাওয়ার পরে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও পুরো বিষয়টি ধামাচাপা অবস্থাতেই থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পোস্তা, গণেশ টকিজ এলাকার মানুষ।

Advertisement

এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘বিবেকানন্দ উড়ালপুলের বাকি অংশটি নিরাপদ কি না, তা এখনও জানানো হল না। বাকি অংশ ভেঙে কখন যে সবাই চাপা পড়ব, সেই আশঙ্কায় রাতে ঘুমোতে পারি না। এই ঘটনা নিয়ে এত আলোড়ন হল, বিদেশি সংবাদপত্রে খবর বেরোল। কিন্তু উড়ালপুলের নির্মীয়মাণ অংশটি ভেঙে পড়ার জন্য কে বা কারা দায়ী, তা জানতে পারলাম না। রজত বক্সীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠল। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা হল না।’’ আর এক স্থানীয় বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘এত জন নিরীহ মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও পুলিশ কিংবা রাজ্য প্রশাসনকে নাড়াতে পারল না।’’

দুর্ঘটনার পর থেকে দোকান খুলতে না পারা এক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এলেন, রাহুল গাঁধী এলেন, বড়, মেজো, ছোট কত নেতা ঘুরে গেলেন। হাজার হাজার আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল। কিন্তু আমরা দোকানই খুলতে পারলাম না এখনও। পরিবার নিয়ে পথে বসার জোগাড় হয়েছে। জমানো পুঁজি শেষ হয়ে আসছে।’’ আর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘কবে দোকান খুলতে পারব জানি না। অনেকে বলছেন, নতুন সরকার এলে সমস্যার সমাধান হবে। তত দিন কি না খেয়ে থাকব? আমাদের কোনও দোষ নেই অথচ আমরা ভুগছি। আর রজত বক্সীদের মতো যারা নিম্ন মানের মাল সরবরাহ করে ডোবাল, তারা দিব্যি আছে। নির্মাতা সংস্থার কয়েক জনকে ধরে পুলিশ ও সরকার চোখে ধুলো দিল।’’

Advertisement

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে রবিবার দুর্ঘটনাস্থলে মৃতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি শান্তি কামনাও করা হয়। দুগ্ধ ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে যেমন যজ্ঞ হয়েছে, তেমনই প্রার্থনা করেছেন ইমামেরাও। ২৫ বৈশাখের দিন বহু মানুষ এসেছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। তাঁদের একটা বড় অংশ ভিড় করেছিলেন ঘটনাস্থলে। ওই ভিড় স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও উস্কে দিয়েছে। উড়ালপুল সরানোর দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই গড়ে তুলেছেন ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’। এ দিন সংগঠনের সদস্যেরা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। এক সদস্যের কথায়, ‘‘ভোট মিটে গিয়েছে। শাসক-বিরোধী সব পক্ষই তাই এখন চুপ। প্রশাসনও চুপচাপ বসে।’’

এলাকার (২৩ নম্বর ওয়ার্ড) বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝা বলেন, ‘‘আসল অভিযুক্তদের ধরা হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমে রজত বক্সীর বিরুদ্ধে এত লেখা হল। তৃণমলের অনেক নেতার নামও বেরোল। কিন্তু পুলিশ তাঁদের নাগাল পেল না! শাসক দলের চাপে পুলিশ রাঘব বোয়ালদের কাউকে ঘাঁটাচ্ছে না।’’ ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলোরা সাহা বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করছে। মামলাও চলছে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে। আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ রজতের কাকা সঞ্জয় বক্সীর মন্তব্য, ‘‘আমাকে এ সব প্রশ্ন করে বিরক্ত করবেন না। যা প্রশ্ন করার পুলিশকে করুন। আমার কিছু বলার থাকলে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলব।’’

বিবেকানন্দ উড়ালপুলের বাকি অংশ নিরাপদ কি না, তা এখনও কেন জানাতে পারল না কেএমডিএ?

কেএমডিএ-র সচিব গোলাম আলি আনসারি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হয়েছে। উড়ালপুল নিরাপদ কি না, তা বলবে তারাই।’’ নবান্ন সূত্রে খবর, ওই কমিটি এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি। তবে নিম্ন মানের ইস্পাত দিয়ে দিয়ে যে ৪০ নম্বর স্তম্ভটি তৈরি হয়েছে, তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে ওই কমিটি। নিম্ন মানের মাল সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে রজত বক্সীর বিরুদ্ধে। তবু কেন অধরা তিনি? কেনই বা তাঁকে এক বারের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদ করল না পুলিশ? কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এখন ঘটনার তদন্ত করছে। এক অফিসার বলেন, ‘‘আমাদের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন