আরতি মজুমদার
স্বামী মারা যাওয়ার পরে আয়ার কাজ করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন তিনি। বড় ছেলে যে ইদানীং সিন্ডিকেট ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, তা-ও অজানা ছিল না তাঁর। কিন্তু ব্যবসার সেই গোলমাল যে তাঁর কোল খালি করে বড় ছেলেকে কেড়ে নেবে, ভাবতেও পারেননি ঠাকুরপুকুর বিশ্বাসপাড়ার আরতি মজুমদার।
বুধবার রাতে হরিদেবপুরের কবরডাঙার মো়ড়ে একটি পানশালার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন আরতিদেবীর বড় ছেলে রাহুল ওরফে রাজা। তার পর থেকে আরতিদেবীর মনে একটাই প্রশ্ন, ‘‘পাড়ার দোকান ছেড়ে ছেলে কয়েক কিলোমিটার দূরে কবরডাঙা মোড়ে কেন সিগারেট কিনতে গেল?’’ আবার তিনিই উত্তর দিয়েছেন, ‘‘নিশ্চয়ই কেউ ফোন করে ডেকেছিল।’’ কিন্তু কে ডেকেছিল, তা বলেননি আরতিদেবী। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রাজার মোবাইল ঘাঁটতে পুলিশকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
আরতিদেবী জানান, বছর তিনেক আগে তাঁকে ছেলে এসে বলেছিলেন, বন্ধু ভজা এবং আরও কয়েক জনের সঙ্গে ব্যবসা করবেন। পাড়ায় বাড়ি-ফ্ল্যাট তৈরির জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট সরবরাহের কাজ করবেন তাঁরা। ছেলের ভাল কোনও চাকরিও ছিল না। তাই এই কাজে আর নিষেধ করেননি মা। তা ছাড়া, স্থানীয় কাউন্সিলর ঘনশ্রী বাগও ছেলেকে ব্যবসায় সাহায্য করতেন বলে চিন্তা আরও কমেছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই ছেলেই এই কাজ ছেড়ে আবার চাকরি করবেন বলে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই কাজে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু কী ঝুঁকি? তা অবশ্য খোলসা করে বলেননি আরতিদেবী।
আরতিদেবীর বক্তব্য, ‘‘আমার ছেলেটা তো সবে জীবন শুরু করেছিল। সেই জীবনটাই কেড়ে নিয়ে মায়ের কোল ফাঁকা করল যারা, তাদের শাস্তি চাই।’’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বার-এ গোলমালের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আবার চলে গেল কেন? তারা ঘটনাস্থলে থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় গুলি চলল কী করে?’’ এর কোনও উত্তর অবশ্য মেলেনি।
এরই মধ্যে রাজার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজার বাড়ি গিয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাঁদের পাড়ায় ঢুকতে দেননি। পরে রূপা বলেন, ‘‘মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার মানে হয় না।’’