আনাড়ি চোরই চিন্তার কারণ, নিশ্চিত পুলিশ

কলকাতা শহরে এর আগে চুরি করতে এসে দু’টি ঘটনায় দুষ্কৃতীরা বাড়ির লোককে মেরে রেখে গিয়েছিল। স্রেফ চুরির জন্য এসে যে ভাবে গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীকে খুন করা হয়েছে, তাতে চুরির ধরন নিয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল লালবাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত ও ধৃত এক যুবক কিছুটা স্বস্তি দিল লালবাজারের গোয়েন্দাদের। নুর ইসলাম শেখ নামে বারুইপুরের ওই যুবককে বেলেঘাটার কাছে এক বাড়িতে চুরির ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

কলকাতা শহরে এর আগে চুরি করতে এসে দু’টি ঘটনায় দুষ্কৃতীরা বাড়ির লোককে মেরে রেখে গিয়েছিল। স্রেফ চুরির জন্য এসে যে ভাবে গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীকে খুন করা হয়েছে, তাতে চুরির ধরন নিয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল লালবাজার। শহরে চুরির এটি নতুন প্রবণতা কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। তাই বেলেঘাটার ঘটনা কিছুটা হলেও পুলিশকে স্বস্তি দিয়েছে।

লালবাজারের এক কর্তা বলেন, দাগি চোরেরা সাধারণত অপরাধ করার সময়ে বাড়তি কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না। কারণ, বাড়তি ঝুঁকি নিলে অপরাধের প্রমাণ রেখে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই জুন মাসে নেতাজিনগরে এবং অগস্ট মাসে নিউ আলিপুরে দু’টি বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে দুষ্কৃতীরা কেন দু’জনকে খুন করল, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছিল লালবাজার। তবে বেলেঘাটার ঘটনার পরে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন পুলিশ কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, যেখানেই চোর দাগি, সেখানে কিন্তু খুনখারাপি হচ্ছে না। যেখানে চোরেরা খুব একটা অভিজ্ঞ নয়, সেখানেই সমস্যা হচ্ছে। নেতাজিনগর এবং নিউ আলিপুরের ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীরা ছিল নেহাতই অনভিজ্ঞ।

Advertisement

বেলেঘাটার বাড়িতে যে মেয়েটি থাকবে, ধৃত নুর কিন্তু তা আন্দাজ করেনি বাড়িতে ঢোকার আগে। তা সত্ত্বেও চুরির আগে মেয়েটির মুখ-হাত বেঁধেই সে ক্ষান্ত হয়েছে। যা হয়নি এর আগে নিউ আলিপুরে বা নেতাজিনগরে। ওই দু’টি ঘটনার পরে অল্প অভিজ্ঞ চোরদের নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যান গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, বন্ধ ব্যাঙ্ক বা ফাঁকা বাড়িতে চোর ঢুকলে খুনের ঝুঁকি থাকছে না। এমনকী, দাগি চোরের উপস্থিতি যদি গৃহস্থ বা বাড়ির লোক টেরও পান, তা হলেও নয়। আনাড়িদের আয়ত্তে না আছে চুপিসারে চুরির কৌশল, না আছে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিদ্যা।

বেলেঘাটার চাউলপট্টি রোডে চুরির কিনারা হওয়ার পরে তাঁদের সেই তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত হল বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, নুর ইসলাম শেখ ওরফে চাঁদ এক জন দাগি, পেশাদার চোর। গত বছর শিয়ালদহে একটি চুরির ঘটনায় গোয়েন্দারা তাকে গ্রেফতার করেন। এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, ‘‘অতীতে শুধু ওই একটি নয়, আরও কয়েকটি চুরির ঘটনায় নুর অভিযুক্ত। কলকাতা ও শহরের বাইরে পুলিশের খাতায় দাগি চোর হিসেবে ওর নাম আছে।’’

ওই অফিসার বলেন, ‘‘এদের উপস্থিতি গৃহস্থ বা বাড়ির লোক টের পেলেও খুনের ঝুঁকি তেমন নেই। কারণ, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, সেই মতো ‘প্ল্যান বি’, ‘প্ল্যান সি’ মাথায় রেখেই এরা কাজে নামে।’’ গোয়েন্দাকর্তার ব্যাখ্যা, চাউলপট্টি রোডের বাড়িতে চুরি করতে নুর মুখে রুমাল বেঁধে ঢুকেছিল। সে জানত, বাড়িতে কেউ নেই। তা সত্ত্বেও ওই আগাম সতর্কতা। এটাই পেশাদারিত্ব। এমন কাজই দাগি চোরের লক্ষণ।

গোয়েন্দাদের মতে, নেতাজিনগর ও নিউ আলিপুরে এই পেশাদারিত্ব ও অভিজ্ঞতারই অভাব প্রকট ছিল চোরদের মধ্যে। তাই গৃহকর্তা বা কর্ত্রী জেগে গিয়ে বাধা দিতে গেলে তারা দিশাহীন হয়ে, ভয় পেয়ে খুন করেছে।

তবে নুরের সৌজন্যে গোয়েন্দাদের বুক থেকে কার্যত পাথর নামলেও তাঁদের দুশ্চিন্তা পুরোপুরি কাটেনি। চাউলপট্টি রোডের ঘটনায় নুরের মতো দাগি ঢুকেছিল বলে দশ বছরের মেয়েটি রক্ষা পেয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, সব জায়গায় দাগি দুষ্কৃতী চুরি করতে ঢুকবে না। তখন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন