দর্শক: পুলিশের চোখের সামনেই চলছে আইপিএল-এর টিকিট নিয়ে কালোবাজারি। রবিবার, ইডেন গার্ডেন্সের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কথা হচ্ছিল হায়দরাবাদ দলের এক খেলোয়াড়ের নাম করে। তিনি কত রান করবেন এ নিয়ে তর্ক চলছে দুই যুবকের মধ্যে। পাশে দাঁড়ানো সোনালি চুলের এক যুবক উত্তেজিত ভাবে ফোন ধরে ওই খেলোয়াড়ের নাম করে বললেন, ‘‘২০। ২০ রানেই আউট হবে। আমার হয়ে চার বাক্স লাগা।’’ ফোন রেখে বললেন, ‘‘চার বাক্স মানে ২০ হাজার টাকা। প্রতি বাক্স পাঁচ হাজার!’’
ম্যাচ শেষে অবশ্য দেখা গেল, হায়দরাবাদের ওই খেলোয়াড় ৮৫ রান করেছেন। এ ভাবে টাকা
লাগিয়ে যুবকের কত ক্ষতি বা লাভ হয়েছে জানা যায়নি। তবে রবিবার দুপুরে মরসুমে কেকেআর-এর প্রথম ম্যাচের আগে ইডেন গার্ডেন্সের বাইরে দেখা গিয়েছে, ব্যাপক টাকার লেনদেন।
খেলোয়াড়দের নাম করে বাজি ধরার পাশাপাশি টিকিটের দেদার কালোবাজারিও চলেছে এ দিন। ঘোড়-পুলিশ এবং কলকাতার একাধিক থানার কর্তব্যরত আধিকারিকদের সামনেই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এ সব চলেছে বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। যা দেখে এক পুলিশকর্মীকেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমাদের যদি আর ভয় না পায়, তা হলে এ সব আটকানো কঠিন।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিন বিকেল চারটে থেকে শুরু হওয়া ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনার অভাব ছিল না। দুপুর ১২টা থেকেই ইডেন গার্ডেন্স চত্বরে ভিড় জমতে শুরু করে। বেলা বাড়তে বেশি ভিড় দেখা যায় মহমেডান তাঁবু লাগোয়া
টিকিট কাউন্টারের সামনে। সেখানেই জনা দশেক যুবককে টিকিট
কাউন্টার ঘিরে থাকতে দেখা গিয়েছে বহু ক্ষণ। তাঁদের হাত ঘুরে ৪০০ টাকার টিকিটেরই দাম উঠছে হাজার টাকা। ১২০০, ১৫০০ টাকার টিকিটের জন্য চাওয়া হয়েছে দ্বিগুণ। সাড়ে তিন হাজার টাকার টিকিটের জন্য এক মহিলার কাছ থেকে আবার সাত হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ!
প্রথম বার টিকিট কিনতে ইচ্ছুকদের দিকে ওই যুবকেরা ছুড়ে দিচ্ছিলেন, ‘‘কটা লাগবে? সব হয়ে যাবে। কিন্তু নগদে।’’ সামান্য থমকে দাঁড়ালেই এর পরে তাঁরা আশ্বস্ত করে বলছেন, ‘‘এখানে শুধুই কথা হবে। টাকা নেওয়া, টিকিট দেওয়া সবই কাউন্টারের পিছনে তাঁবুর সিঁড়ির নীচে।’’ এমনই এক টিকিট বিক্রেতা জানালেন, পুলিশের চোখে ফাঁকি দিতে ত্রিস্তরীয় বন্দোবস্ত করেছেন তাঁরা। সামান্য উদভ্রান্ত ভাবে হাঁটতে দেখলেই কয়েক জন টিকিট লাগবে কি না প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। রাজি হওয়া ক্রেতাদের ধরে তাঁবুর সিঁড়ির নীচে নিয়ে যাওয়া দায়িত্বে রয়েছেন অন্য কয়েক জন। সেখানে টিকিট দিয়ে লেনদেনের জন্য রয়েছে আরেক পক্ষ। তবে ক্রেতা ধরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব যাঁরা রয়েছেন তাঁদের বলা আছে, কেউ তাঁবুর নীচে যেতে ভয় পেলে বাইরেই তাঁদের টিকিট বেচে দিতে হবে। ‘মূল মন্ত্র’ একটাই।— কোনও ভাবে ক্রেতা হাতছাড়া করা যাবে না।
ম্যাচের সময় যত এগিয়ে এল ততই বেপরোয়া হয়ে উঠতে দেখা গেল ওই টিকিট বিক্রেতাদের। পরিস্থিতি ঘোরালো দেখে সেই সময়ে বাড়তি তৎপর হল পুলিশও। পুলিশকে আড়াল করতে ক্রেতা আর বিক্রেতাকে ঘিরে থাকতে শুরু করলেন দলের বাকিরা। তবু ধরা পড়লে টিকিট বিক্রেতাদের পুলিশকে বলতে শোনা গেল, ‘‘দেখুন টিকিট আগেই কেটেছি। কোন দিকে গেট সেটাই জানতে চাইছিলাম!’’
কী বলছে পুলিশ? এ ধরনের অভিযোগের প্রসঙ্গ উঠলেই লালবাজার বলে, কড়া নজরদারি ছিল। কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ দিন অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম। বিষয়টি শুনেই ফোন কেটে দেন তিনি।
অতএব, দাম চড়ল ৪০০ টাকার টিকিট দেড় হাজার, দু’হাজারে।