কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে

টোল আদায়ে ‘অনিয়ম’, অভিযোগ অভব্যতারও

মাঝরাতে এক রোগীকে দেখে ফিরছিলেন হৃদ্‌রোগ-চিকিৎসক বিজনবিহারী রথ। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের মুড়াগাছার কাছে টোল প্লাজায় গাড়ির লম্বা লাইন।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

টোলপ্লাজায় গাড়ির সারি। — সজল চট্টোপাধ্যায়

মাঝরাতে এক রোগীকে দেখে ফিরছিলেন হৃদ্‌রোগ-চিকিৎসক বিজনবিহারী রথ। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের মুড়াগাছার কাছে টোল প্লাজায় গাড়ির লম্বা লাইন। টোলকর্মীরাই পরামর্শ দেন, লেন ভেঙে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য। পরিবর্তে ছোট গাড়ির জন্য বরাদ্দ ১৫ টাকা টোল না দিয়ে ১০ টাকা দিলেও হবে। শুধু মিলবে না রসিদ। কিন্তু রসিদ ছাড়া টোল দিতে রাজি না হওয়ায় ওই চিকিৎসককে অপেক্ষা করতে হয় লাইনে।

Advertisement

একই অভিজ্ঞতা ব্যারাকপুরের নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে সল্টলেকে যাওয়ার সময়ে তাঁর গাড়ির মতো অনেক গাড়িকেই টোলকর্মীরা নিয়ম ভেঙে পার করে দিতে চাইছেন দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। অভিযোগ, কর্মীরা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। নন্দিনীদেবীর অভিযোগ, ‘‘টোল বৈধ হলে সরকার-নির্ধারিত কর নেওয়া উচিত সরকারি রসিদ দিয়ে। কিন্তু যার কাছ থেকে যেমন খুশি টাকা নিয়ে গাড়ি পার করিয়ে দিচ্ছেন টোল কর্মীরা। প্রতিবাদ করলে অভব্য আচরণ করছেন। পুলিশ নীরব দর্শক।’’

কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে নতুন করে টোল প্লাজা চালু হয়েছে গত বছরের শেষে। সোদপুর মুড়াগাছা, ব্যারাকপুর কুণ্ডুবাড়ি মোড়, কাঁচরাপাড়া কাঁপা মোড়— এই তিন জায়গায় টোল বসেছে। কিন্তু ওই টোলপ্লাজার পুরোটাই সিঙ্গল লেন। রাস্তার দু’ধার মাত্রাতিরিক্ত উঁচু হওয়ায় ওভারটেক করতে গিয়ে বা বাঁকের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়ি বা মোটরবাইকের উল্টোনো ছাড়া গতি নেই। সোদপুর মুড়াগাছা থেকে নিমতা এম বি রোডের মুখ পর্যন্ত এই রাস্তা দু’লেনের। কিন্তু এম বি রোডের পর থেকে এক্সপ্রেসওয়ে আর তৈরি হয়নি। ১৯৯৯ থেকে তিন বার জমি মাপজোক ও রাস্তার প্রস্তাবিত মানচিত্র বদল হয়েছে। কিন্তু রাস্তা আর হয়নি। কাঁপা মোড় পর্যন্ত যেটুকু রাস্তা হয়েছে, তাতে এক্সপ্রেসওয়ের নিয়মকানুন মানা হয়নি বলেও অভিযোগ। গত বছরই কেএমডিএ-র থেকে রাজ্য সড়ক নিগমের হাতে আসে এই রাস্তার দায়িত্ব। ফের নতুন করে টেন্ডার ডাকা হয় টোলের জন্য।

Advertisement

রাজ্য সড়ক নিগমের কর্তারা জানান, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণ ও রাস্তা সংস্কারের জন্য টোল আদায় জরুরি। না হলে খরচ সামাল দেওয়া অসম্ভব। নিগমের সঙ্গে নতুন ঠিকাদার সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী বছরে ১০ কোটি টাকা আদায়ের কথা হয়। সংস্থার প্রজেক্ট ডিরেক্টর কুণাল বড়ুয়া বলেন, ‘‘নতুন ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। ওই সংস্থার তরফে ১৫ দিনে ৩৮ লক্ষ টাকা আমাদের দফতরে জমা করার কথা। সেই নিয়ম ভাঙলে এমনিই চুক্তি বাতিল হয়ে আবার টেন্ডার ডাকা হবে।’’ টোলের কর্মীদের আচরণ ও নিয়ম ভাঙার বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে ব্যারাকপুর প্রশাসনের কাছেও। ডিসি (ট্র্যাফিক) কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘আমরা নজর রাখছি টোলগুলিতে। ওখানে আমাদের হেল্পলাইন নম্বর-সহ বোর্ড লাগানোরও পরিকল্পনা আছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন