ফেটে পড়ছে বহু বছরের জমা ক্ষোভ

পড়াশোনার মান থেকে শৌচাগারের হাল, ক্লাসরুমে পাখা থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষিকাদের একাংশের ব্যবহার— এই সব নিয়ে কয়েক বছর ধরেই স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরে ক্ষুব্ধ বহু অভিভাবক। তাঁদের বক্তব্য, সমস্যা সমাধানের জন্য প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপ্যালের কাছে গেলে বেশির ভাগ সময়ে তাঁদের দেখা পাওয়া যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৭
Share:

বিভ্রান্ত: কবে শুরু ক্লাস? বন্ধ গেটের সামনে ছাত্রীরা। জি ডি বিড়লা স্কুলে, সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দিনের পর দিন নয়, ক্ষোভ জমেছিল বছরের পর বছর ধরে। স্কুলের মধ্যেই চার বছরের এক ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় সেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভই বেরিয়ে আসছে গলগলিয়ে। জমে থাকা সব রাগ, অসন্তোষ এ বার উগরে দিচ্ছেন রানিকুঠির জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের ছাত্রীদের মা-বাবারা।

Advertisement

পড়াশোনার মান থেকে শৌচাগারের হাল, ক্লাসরুমে পাখা থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষিকাদের একাংশের ব্যবহার— এই সব নিয়ে কয়েক বছর ধরেই স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরে ক্ষুব্ধ বহু অভিভাবক। তাঁদের বক্তব্য, সমস্যা সমাধানের জন্য প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপ্যালের কাছে গেলে বেশির ভাগ সময়ে তাঁদের দেখা পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, কার্যত দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের। কখনও প্রি়ন্সিপ্যালের সাক্ষাৎ পেলেও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, না পোষালে সন্তানকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে হবে— এমনটাই দাবি বহু পড়ুয়ার মা-বাবার। ক্ষোভ তাই শুধু জমেনি, চরমে উঠেছে।

যার ফলে এখনকার প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপ্যালকে কোনও ভাবেই আর স্কুলে রাখা যাবে না বলে স্পষ্ট দাবি তুলেছেন অভিভাবকেরা। আজ, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় স্কুল চত্বরে শিক্ষা দফতরের মধ্যস্থতায়, পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে এই দাবির কথা বলিষ্ঠ ভাবে জানাবেন অভিভাবকেরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: তরজা স্কুল অচল নিয়ে

এমনকী, সোমবার দুপুরে স্কুলের সামনে অভিভাবকদের জমায়েতে যখন চাউর হল যে প্রিন্সিপ্যালকে লালবাজারের গোয়েন্দারা জেরা করবেন, তখন অভিভাবক-ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মানসী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘যে সব ক্লাস টিচার দুর্ব্যবহার করেন, তাঁরাও এ বার সতর্ক থাকুন।’’ মানসীদেবীর মেয়ে ওই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘স্কুলবাস না এলে স্কুল এসএমএস অ্যালার্ট পর্যন্ত দেয় না।’’

যাদবপুরের বাসিন্দা দেবদ্যুতি ঘোষের মেয়ে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। দেবদ্যুতি জানান, স্কুলের শৌচাগারের অবস্থা শোচনীয়, প্রচণ্ড অস্বাস্থ্যকর। তাঁর মেয়ে সকাল ৯টায় বেরোয়, দুপুর ২টো পর্যন্ত স্কুলে থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েকে বলেছি, জরুরি না হলে স্কুলে বাথরুমে যাবে না। অসুস্থ হয়ে পড়বে।’’ কিন্তু অস্বাস্থ্যকর, অপরিষ্কার শৌচাগারে গেলে যেমন রোগ হওয়ার ভয়, তেমনই বাথরুম চেপে রেখে ছাত্রীদের একাংশের কিডনির সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাদের বাবা-মা।

পেশায় কলেজশিক্ষক, ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, ‘‘বহু ক্লাস ঠিক মতো হয় না। কয়েক জন শিক্ষিকা ছাত্রীদের বই পড়তে বলে নিজেরা পিরিয়ড জুড়ে হোয়াটসঅ্যাপ করেন। কিছু ক্লাস ছাত্রীদের সংখ্যার অনুপাতে ছোট। ৪০ জনের সঙ্কুলান হয়, এমন ঘরে ৬০ জনকে বসতে হচ্ছে। চেয়ার-টেবিলও এত ছোট যে নড়াচড়া করতে অসুবিধে হয়।’’

দেবদ্যুতির আরও অভিযোগ, ‘‘কখনও ক্লাসরুমের দু’টো ফ্যানের মধ্যে একটা চলে, আর একটা খারাপ পড়ে থাকে দিনের পর দিন। গরমে চরম দুর্ভোগ হয়।’’ মাসে মাসে যেখানে মোটা টাকা নেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই সমস্যা কেন, প্রশ্ন অভিভাবকদের। সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা স্বরচিতা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এক সময়ে স্কুলের শৌচাগারে মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্ট থাকতেন। বছর দুয়েক ধরে তা বন্ধ হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্ট না থাকার সুযোগেই চার বছরের মেয়েটির সঙ্গে এমন ঘটল। নিরাপত্তা শিকেয় তুলে স্কুল কর্তৃপক্ষ খরচ কমাচ্ছেন বেশি মুনাফা লুঠতে। বহু অভিভাবকের দাবি, চার বছর অন্তর হওয়া স্কুলের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ‘স্পেকট্রাম’ তুলে দিতে হবে। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, ওটা স্কুলের তরফে টাকা লুঠে নেওয়ার কৌশল। অথচ সেই সময়ে দিনের পর দিন ক্লাস হয় না।

এ দিন স্কুলের সামনে জমায়েতে অভিভাবকদের ফোরামের পক্ষে বলা হয়, খাতায়-কলমে স্কুলে সব সময়ের জন্য এক জন ডাক্তার ও এক জন নার্স আছেন। তবে অভিভাবকদের একাংশের দাবি, বাস্তবে তাঁদের অস্তিত্ব নেই। ওই দু’জনের নাম কী এবং কবে নিয়োগ করা হয়েছে, তা মঙ্গলবার জানতে চাইবেন অভিভাবকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন