নায়ারের ৭০০ বই কবে নেবে পুরসভা?

কলকাতায় গাঁধীজি কোথায় কোথায় থেকেছেন, তা নিয়ে আগামী বইমেলায় আরও একটি বই বেরোবে নায়ারের। তার চূড়ান্ত প্রুফ ইতিমধ্যে লেখক দেখে রেখেছেন। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫০
Share:

পরমেশ্বরন থনকপ্পন নায়ার

বাংলা বলার চেষ্টা করতেন না। কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হত না একটুও। প্রিয় শহরের কথা বলার সময়ে সম্প্রতি কয়েক জন কলকাতাপ্রেমীর সামনে তাঁর দু’চোখ সজল হয়ে উঠেছিল। এই শহরের সঙ্গে ছয় দশকের সম্পর্ক ছেদ করে বৃহস্পতিবার সকালেই বিমানে কলকাতা ছেড়ে গেলেন পরমেশ্বরন থনকপ্পন নায়ার।

Advertisement

এমন একনিষ্ঠ পদাতিক গবেষক এ শহরের ভাগ্যে কদাচ জুটেছে। গবেষণার শ্রম ও অধ্যবসায়ে নায়ারের বিকল্প যে নায়ারই হতে পারেন, এমন ভাবনাতেই স্থিত শহরের সারস্বত সমাজ তথা পুরনো কলকাতা-অনুরাগীরা। নিজের সংগ্রহের বিপুল বইয়ের ভাঁড়ার তিনি দিয়ে গিয়েছেন কলকাতা পুরসভাকেই। কিন্তু মেয়র বদল নিয়ে ডামাডোলের মধ্যে পুর কর্তৃপক্ষ কবে সেই কাজ সেরে উঠতে পারবেন, তা এখনও অনিশ্চিত। ‘কলকাতা ক্রনিকলার’ নায়ারের এক জন পুরনো ছাত্রীর উপরে ভার, তাঁর রেখে যাওয়া বইয়ের শেষ সম্ভারটুকুর গোত্র ভাগের কাজটা শেষটা করার। তার পরেই আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া মেনে ৭০০ বই গ্রহণ করার কথা পুর কর্তৃপক্ষের।

পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগে ১৯৯৯ সালে নায়ার তাঁর তিন হাজার বই দশ লক্ষ টাকায় পুরসভার মাধ্যমে টাউন হলকে দিয়েছিলেন। টাউন হলের গ্রন্থাগারে সাধারণ পাঠকেরা সচরাচর পড়ার সুযোগ পান না। কিন্তু গবেষকেরা পড়াশোনা করেন। এখন সংস্কারের কাজে বন্ধ টাউন হলে বইগুলি বেসমেন্টে রাখা আছে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রাক্তন সম্পাদক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘কলকাতার কোনও কোনও বিশিষ্ট গবেষকের বইয়ের সংগ্রহ বিদেশে বিপুল টাকায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে। নায়ার কিন্তু চেয়েছিলেন, তাঁর বইয়ের সংগ্রহ অন্তত কলকাতায় থাকুক। সেই ভাবনা থেকে আগেও কলকাতা পুরসভাকে বেশ কিছু বই দিয়ে যান।’’ এ শহরে নায়ারের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এ বারও তিনি চেয়েছিলেন, সামান্য টাকাতেই পুর কর্তৃপক্ষকে আরও ৭০০ বই দিয়ে যেতে।

Advertisement

৮৫ বছরের নায়ারের জ্ঞানভাণ্ডারের উত্তরাধিকার নিয়ে রয়েছে আরও কিছু দুশ্চিন্তা। নিউ টাউনের একটি স্কুলে ভূগোলের শিক্ষক তথা পুরনো কলকাতা-পাগল স্বর্ণালী চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘ওঁর লেখা ৬২টি বইয়ের সব ক’টির হদিস নেই। এটাও আক্ষেপের বিষয়।’’ গোড়ায় চাকরি করতে এ শহরে এলেও মধ্য তিরিশেই সব ছেড়ে একনিষ্ঠ গবেষণায় ব্রতী হয়েছিলেন নায়ার। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানেন, ১৯৭০ থেকে প্রায় এক রুটিন। স্ত্রী কেরলে স্কুলে চাকরি করতেন। নায়ার একা থাকতেন শহরে। ভোর ৫টায় রান্নাবান্না সেরে তাঁর নিজের কাজের জন্য তৈরি। সকালে খুঁটিয়ে কাগজ পড়া থেকে শুরু। দুপুর পর্যন্ত চলত জাতীয় গ্রন্থাগারে অধ্যয়ন। বিভিন্ন সূত্র জোগাড় করে তার পরে চলত পায়ে হেঁটে কলকাতা সফর। এ ভাবেই কলকাতার নানা পর্বের ইতিহাসের সঙ্গে জড়ানো রাস্তাঘাট, বাড়ির বিষয়ে চর্চা করেছেন। কলকাতায় গাঁধীজি কোথায় কোথায় থেকেছেন, তা নিয়ে আগামী বইমেলায় আরও একটি বই বেরোবে নায়ারের। তার চূড়ান্ত প্রুফ ইতিমধ্যে লেখক দেখে রেখেছেন।

কাঁসারিপাড়ার ছোট্ট ফ্ল্যাটে বইয়ের সংসার ছাড়া টিভি-ইন্টারনেট-আড্ডা, ছিল না কিছুই। পাকাপাকি ভাবে সে আস্তানা ছেড়ে যাওয়ার সময়ে স্ত্রী সীতাদেবী সঙ্গে ছিলেন। বিমানে বেঙ্গালুরু হয়ে রাত ৮টার পরে কোচি পৌঁছনোর খবরটা তাঁকে ফোন করেই জানা গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন