আনন্দ: বৃহস্পতিবার, অ্যাকাডেমির সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভোমিক
ঋতুপর্ণ ঘোষ অভিনীত ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ ছবিটি দেখিয়ে পরিবারের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। বোঝাতে চেয়েছিলেন, তাঁর মতো আরও অনেক মানুষ আছেন।
পরিবারের কাছে নিজের পরিচয় দিতে হয়? ‘‘সমকামী হলে অবশ্যই দিতে হয়,’’ বলছিলেন চিলের ‘পন্টিফিসিয়াল ইউনিভার্সিটি অব ভালপারেসো’-এ থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের গবেষক কলকাতার ছেলে বছর পঁত্রিশের দেবরাজ রায়। বৃহস্পতিবার ৩৭৭ ধারা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনে ফোনে তিনি বলে চলেন, ‘‘আগামী প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের অন্তত এ বার নিজেদের প্রিয়জনেদের বোঝাতে হবে না যে, তাদের জীবনধারা অপরাধমূলক নয়।’’ এইটুকু স্বস্তি দেওয়া যাবে ‘সমকামী’ সন্তানদের বাবা-মাকে। তাঁদের আর ভয় পেতে হবে না এই ভেবে যে, ভদ্র সুপ্রতিষ্ঠিত সন্তানের গায়েও ‘অপরাধী’র তকমা পড়ার আইন আছে। তবে ওইটুকুই! সামাজিক সম্মান পেতে এখনও ঢের দেরি আছে, সেটা তিনি জানেন। তিনি বলেন, ‘‘সমাজ বা আইন নয়, নিজের কাছে একটু পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ মিলল। চারপাশের আচরণের জেরে অনেক সময়ে নিজের প্রতি সম্মান নিয়েই যেন প্রশ্ন ওঠে মনের মধ্যে। শুধু আমার নয়, অনেকেরই এমন হয়।’’ দক্ষিণ ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সৌরভ বসুরও বক্তব্য, এই রায় শুধু সেই স্বস্তিটুকুই দেবে। এ দিন সকালে পুরনো এক ছাত্রীর কাছেই তিনি প্রথম শোনেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা। যৌন-প্রান্তিকদের লড়াইয়ের প্রতিটা ধাপ খেয়াল করে ওঠে না নিজের কাজের চাপে। তিনি বলেন, ‘‘সমকামী হলেই যেন এক জনের পরিচয় শুধু তাঁর যৌনতা দিয়েই নির্ণয় করা হয়। এই ভাবনায় বদলটা কবে আসবে, সেইটাই এখন ভাবছি। আমাদেরও তো বাকি পাঁচ জনের মতোই রোজের কাজ-কর্ম থাকে। সে সবে বাধা দেয় সমাজের এই ধারণাটা।’’ এ শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন সৌরভ। অনেকেই তাঁর সমকামী পরিচয় সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। তবু মধ্যবয়স্ক সৌরভ বলেন, ‘‘বাকিদের মতো সসম্মানে সব জায়গায় যাওয়া যায় না, নিজের সমকামী পরিচয়টা দিলে। বাড়ির লোকেদেরও সামাজিক সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়।’’
দেবরাজ কিংবা সৌরভ, কেউই যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন না। তবু এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে তাঁরা নিজের ‘সমকামী’ পরিচয়টাই সামনে আনতে চান। সমাজের বিভিন্ন স্তরে, নানা কাজে যে যুক্ত যৌন সংখ্যালঘুরাও, মূলস্রোতকে তা মনে করাতে চান।
যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী পবন ঢালের ভাবনাও তেমন। তিনি বলেন, ‘‘এ বার বৈষম্য, নাগরিক অধিকার, অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইটা শুরু করা যাবে।’’ এমন দিনে সমাজের নানা স্তরের মানুষ এগিয়ে আসুন, সেটাই চান তিনি।