মেলার মাঠে জমজমাট শ্রীপঞ্চমীর গল্পগুজব

সরস্বতী পুজোর দিন নাকি বই ছুঁতে নেই! খাস বইমেলায় ঢুকেও ঋষিবাক্যের নড়চড় হল না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ঝাঁকটা অপেক্ষা করছে মেলার ভিআইপি গেটের সামনে। বুধবার বিকেলে সেখানেই খচাখচ সেল্‌ফি আর ফেসবুকের আপডেট।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২২
Share:

নিজস্বী হুল্লোড়। বুধবার বইমেলায়। ছবি:শুভাশিস ভট্টাচার্য

সরস্বতী পুজোর দিন নাকি বই ছুঁতে নেই!

Advertisement

খাস বইমেলায় ঢুকেও ঋষিবাক্যের নড়চড় হল না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ঝাঁকটা অপেক্ষা করছে মেলার ভিআইপি গেটের সামনে। বুধবার বিকেলে সেখানেই খচাখচ সেল্‌ফি আর ফেসবুকের আপডেট। অর্থনীতির স্নাতকোত্তর পড়ুয়া হিন্দোলা বসু বললেন, ‘‘আজ আড্ডাই ভাল! সকাল থেকে ঘুরে বইটই কেনার এনথু পাচ্ছি না!’’

হিন্দোলা, তানিয়া, প্রতীক, শ্রুতি, সোনালীদের মতোই দশা সাগ্নিক, নিকিতা, স্বাগতা, অনুভবদের। সল্টলেকের বিডি স্কুলের বন্ধুদের দলটা এখন ক্লাস ইলেভেন। মাধ্যমিক পার করেও বন্ধুত্ব ফিকে হয়নি। মু্ক্তমঞ্চের দিকে পিঠ করে নিজস্বী-চর্চার ফাঁকে হেসে গড়িয়ে পড়ছে।

Advertisement

বাগ্‌দেবীর বীণা বা হাঁসের চিহ্ন না-থাকলেও বইমেলার মাঠই যেন বুধবার স্কুল-কলেজ ক্যাম্পাসের শাখা। মাঘের মরচে ধরা শীতে জ্যাকেট-সোয়েটারের পরোয়া নেই। সরস্বতীর সৌজন্যে শাড়ি-পাঞ্জাবিই বইমেলার উর্দি। ফুডকোর্টে ঘি সুরভিত খিচুড়ি-বেগুনভাজার অভাব নেই। বই কারবারিরাও কিন্তু হতাশ নন। গিল্ড-কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সাড়ে তিন লক্ষের ভিড় হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মেলার সেরা বিক্রিও সরস্বতী পুজোতেই হল।’’

বইয়ের টান মিলিয়ে দিয়েছে কয়েক দশকের পুরনো স্কুলতুতোদেরও। সপ্তর্ষি-র স্টল থেকে ফোন করে ২০০৮ ব্যাচের মাধ্যমিক শারদ্বত মান্না খুঁজছেন ২০০১-এর শুভ্রাংশু দত্ত, দেবপ্রিয় সমাদ্দারদের। ওঁরা সবাই পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের প্রাক্তনী। ওই স্কুলেরই ‘সিনিয়র দাদা’, অধুনা বিশ্বভারতীর শিক্ষক বিশ্বজিৎ রায়ের ‘ইস্কুলগাথা’ বইটিতে ’৯০ এর দশকে বোর্ডিং স্কুলের যুগচিত্র। বইয়ের টানে মেলায় এসে স্কুলবেলার সরস্বতী পুজোর স্মৃতিরও অমোঘ হাতছানি।

আশুতোষ কলেজের দুই ব্যাচমেট, কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসের কর্তা ওঙ্কারপ্রসাদ ঘোষ ও কলেজশিক্ষক সার্থক রায়চৌধুরীরও মেলার মাঠে হঠাৎ দেখা। নিবেদিতা হলের পাশাপাশি স্টলে দু’জনেরই কবিতার বই বেরিয়েছে। ওঙ্কার তাঁর ‘চৌরঙ্গির মাথায় অরোরা বোরিয়ালিস’ দিলেন সার্থককে। গুরুচণ্ডালী থেকে প্রকাশিত ১৯ জন কবির বইয়ের সেট ‘এক ব্যাগ নব্বই’-এর অন্যতম কবি আবার সার্থক। শিবপুর বি ই কলেজ তথা আইআইইএসটি-র প্রাক্তনী শঙ্খ করভৌমিকও তাঁর প্রথম বই ‘সাত ঘাটের জল’ (লিরিকাল) তুলে দিলেন মাস্টারমশাই অজয় রায়ের হাতে। ত্রিপুরার ছেলে শঙ্খের শৈশব, প্রথম যৌবনের বর্ণময় অভিজ্ঞতা তাতে ধরা পড়েছে। ‘কারিগর’-এর স্টলে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক বিপ্রদাস ভট্টাচার্য তাঁর কবিতার বই ‘ভুর্জপত্রে দিনলিপি’ সই করে দিলেন প্রাক্তন ছাত্রকে।

সিগনেট প্রেস-এর স্টলে নতুন বইয়ে সই দিতে ব্যস্ত নামী কবি সুবোধ সরকার-শ্রীজাতরা। প্রিয় কবি কখন থাকবেন, তা ফেসবুকেই চাউর সকালে। সাহিত্যরসিকদের বড় আকর্ষণ, বইমেলার কলকাতা লিটেরারি ফেস্টিভ্যাল-এর প্রস্তুতিও এর মধ্যে সারা হল। আজ, বৃহস্পতিবার শঙ্খ ঘোষ, স্পেনের কবি ফ্রান্সিসকো মুনিয়োস, সোলেরদের উপস্থিতিতে মেলার নয়া অধ্যায় শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন