মুখোমুখি: প্রবেশিকার দাবিতে অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বললেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। সোমবার যাদবপুরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার মতো ‘ক্ষমতা’ উপাচার্যের হাতে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি তাঁকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে সোমবার এই অভিমত জানিয়েছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।
অচলাবস্থা কাটাতে আচার্য-রাজ্যপালের পরামর্শ চেয়েছিলেন উপাচার্য। আচার্য তাঁকে একটি লিখিত রিপোর্ট দিতে বলেন। রাজভবন সূত্রের খবর, উপাচার্য ৮-১০ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট দেন। রাজ্যপাল ঠিক দু’টি অনুচ্ছেদে তাঁর মতামত জানিয়েছেন। মূলত দু’টি বিষয়ে উপাচার্যকে লিখেছেন তিনি। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট অনুযায়ী কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত অনুসারেই কাজ করতে হবে উপাচার্যকে। দ্বিতীয়ত, কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সামলাতে স্ট্যাটিউটে উপাচার্যকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া আছে।
অর্থাৎ তাঁর যা ক্ষমতা আছে, তার ভিত্তিতে উপাচার্য এখন চাইলে নিজে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আচার্য-রাজ্যপালের কাছ থেকে নির্দেশ আসার পরেই আজ, মঙ্গলবার বেলা ২টোয় কর্মসমিতির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে যাদবপুরে।
বিধি বলে...
• কর্মসমিতির বৈঠকের সিদ্ধান্ত কি মানতে বাধ্য উপাচার্য?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ‘আইন ১৯৮১’ হিসেবে মানতে বাধ্য। তবে আইনের ১০(৬) ধারা অনুযায়ী কোনও জরুরি ভিত্তিতে উপাচার্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদিও সেটা পরের কর্মসমিতির বৈঠকে অনুমোদন করাতে হবে। না হলে পাঠাতে হবে আচার্যের কাছে। আচার্যের মতামতই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
• কর্মসমিতির কোনও সিদ্ধান্ত ১২০ দিনের মধ্যে পরিবর্তন করা যায় কি?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিধির ৬৭ (১৩) এবং ৬৮ (৪) ধারা অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে কর্মসমিতি কোনও সিদ্ধান্ত বদল করতে পারবে না।
• আচার্যের কী করণীয়?
কোনও আইনগত সমস্যা ও জটিল পরিস্থিতিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ দিতে পারেন। আধিকারিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, বিধি ও আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আচার্যের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
রাজভবন থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল যাদবপুরের সুনাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি উদ্বিগ্ন অনশনরত পড়ুয়াদের শারীরিক অবস্থা নিয়েও। অনশন তুলে নেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের আবেদনও জানিয়েছেন আচার্য। রাজভবন সূত্রের খবর, এ ক’দিনে শিক্ষামন্ত্রী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র সদস্য— যিনিই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন, আচার্য তাঁকেই প্রশ্ন করেছেন, যাদবপুরের প্রবেশিকা বিতর্কে পড়ুয়াদের ভূমিকা থাকবে কেন? পাশাপাশি রাজ্যপাল বলেছেন, যাদবপুরে যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বারবার কর্মসমিতির বৈঠক ডাকা হচ্ছে— এই সব বিষয়ে তাঁকে কখনওই কিছু জানানো হয়নি।
উপাচার্য এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। টানা তিন দিন ধরে অনশনরত ছাত্রছাত্রীদের তিনি অনুরোধ করেন, আচার্যের পরামর্শ আসার আগে পর্যন্ত তাঁরা যেন অনশন বন্ধ রাখেন। উপাচার্য পড়ুয়াদের এটাও জানান যে, তিনি স্বাধিকারের পক্ষে। অভিমানের সুরে বলেন, ‘‘চেয়ারে বসে থাকলে এক রকম। চেয়ারের বাইরে থাকলে আমার অন্য রকম মতবাদ। তোমাদের বেশি দিন আমাকে দেখতে হবে না। আমি কখনওই চাই না অটোনমি হারাতে।’’ সুরঞ্জনবাবু জানান, তিনি যা বলেছিলেন, তা মানা হয়নি। তিনি বিষয়টি নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে পড়ুয়ারা অনশন তুলতে চাননি।
বিকেলের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনশনরত ছাত্রী সোমাশ্রী চৌধুরী। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অন্যতম অনশনকারী দেবরাজ দেবনাথ জানান, মঙ্গলবার কর্মসমিতির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানার পরে তাঁরা অনশন তোলার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এ দিন অন্য পাঁচটি বিভাগের মতোই দর্শনের অধিকাংশ শিক্ষক ভর্তি প্রক্রিয়ায় থাকবেন না বলে উপাচার্যকে জানান। অবিলম্বে কর্মসমিতির বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়ে এ দিনই উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন কর্মসমিতির ১১ জন সদস্য।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, যাদবপুরের ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তাঁর কিছু বলার নেই। তাতে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রশ্ন উঠতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘আমি বলব, অনশনরত ছাত্রছাত্রীরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশের স্বার্থে অনশন প্রত্যাহার করুন। নতুনদের পরামর্শ নিয়ে যাতে কোনও অনিশ্চয়তা তৈরি না-হয়, সকলকে তা দেখতে বলব।’’
যাদবপুরের অচলাবস্থা কাটাতে উপযুক্ত পরামর্শ দেওয়ার আর্জি নিয়ে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, যাদবপুরের পড়ুয়ারা যে-ভাবে আন্দোলন করছেন, তা বাঞ্ছনীয় নয়।