আবারও ঢাকে কাঠি! এ বার রইল কলকাতার কিছু পুরনো বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর ঝলক।
গিরিশ ভবন (ভবানীপুর): প্রায় ২০০ বছর আগে পুজো শুরু করেন কালাচাঁদ মুখোপাধ্যায়। দেবীকে রাত জাগাতে এ বাড়িতে যাত্রার আয়োজন হয়। পরিবারের প্রদীপ মুখোপাধ্যায় জানালেন, এখানে গিরিশচন্দ্র ঘোষ অভিনয় করেছিলেন। উত্তমকুমারও এই বাড়ির যাত্রায় অভিনয় করেছেন। ১৯৪৯ থেকে পরিবারের সদস্যরাও অভিনয় শুরু করেন।
দুর্গাচরণ মিত্রের বাড়ি (দর্জিপাড়া): ২৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো হচ্ছে। ডান পায়ের উপর বাঁ পা মুড়ে, ঘোটকমুখী সিংহের উপর দেবী। পরিবারের ইষ্ট দেবী বলে তিরকাঠি দিয়ে ঘেরা হয় না। পুজোয় থাকে না ‘শ্রী’ ও ‘বরণডালা’। পরিবারের বাণী মিত্র জানালেন, দেবীর অর্ঘ্য বাঁধা হয় কলাপাতা দিয়ে। দশমীর দিন কনকাঞ্জলি ও প্রতিমাকে প্রদক্ষিণ প্রথা আজও চলছে।
ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ি (বিডন স্ট্রিট): ১৭৮০-তে রামদুলাল দে (সরকার) এ বাড়িতে পুজো শুরু করেন। পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালানের মেঝে গঙ্গামাটির। কাঠের সিংহাসনের উপর দেবী। দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো। এই পরিবারের আশিস দেব জানালেন, নবমী তিথিতে সঙ্কল্প করে, তন্ত্র মেনে ত্রিসন্ধ্যা পুজো হয়। প্রথম পুজোয় চালকুমড়ো ও আখ বলি হয়। দ্বিতীয় পুজোয় কুমারী পুজো এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুজোর সন্ধিক্ষণে ১০৮টি রুপোর প্রদীপ উৎসর্গ হয়।
ভট্টাচার্য বাড়ি, (তালতলা): তারকেশ্বর জেলার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে এই পুজো শুরু হলেও, পরে তালতলার বাড়িতে উঠে আসে। প্রতিমার চালিতে থাকে পট। আজও পরানো হয় বেনারসি শাড়ি ও সোনারুপোর গয়না। এই পরিবারের সতীনাথ ভট্টাচার্য ও শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য জানান, শাস্ত্র অনুসারে সকালে সাত্ত্বিক, মধ্যাহ্নে রাজসিক ও সন্ধ্যায় তামসিক রূপে পুজো হয়। ৩০ কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য হয়। তিন বার পুজোয় তিন রকম ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রথম পুজোয় সাদা ভাত, শুক্তো, ভাজা, খিচুড়ি, দ্বিতীয় পুজোয় লুচি ও তৃতীয় পুজোয় পোলাও ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। শীতল ভোগেও থাকে লুচি, ভাজা ইত্যাদি। এখন বলিদান হয় না। দ্বিতীয় পুজোয় নিবেদন করা হয় ১০৮টি পদ্ম ও ১০৮টি প্রদীপ। তৃতীয় পুজোর শেষে ১০৮টি বিল্বপত্র দিয়ে হোম করা হয়।
নীলমণি দে ঠাকুরবাড়ি (বৌবাজার): ১৩৭ বছরের পুরনো পুজো। শোলার সাজের সাবেক প্রতিমা। নবমী তিথিতে মোট চার বার পুজো হয়। আরও এক ঐতিহ্য ধুনো পোড়ানো। দশমীর দিন গৌর-নিতায়ের বিশেষ পুজো উপলক্ষে অন্ন ভোগ হয়। এতে থাকে বিভিন্ন প্রকার ভোগ। জানালেন এই পরিবারের সন্ধ্যা দাস (দে)।
রানি রাসমণির বাড়ি (জানবাজার): পুজো শুরু করেছিলেন প্রীতরাম দাস। এই পরিবারের সুরজিৎ হাজরা জানান, আগে বীরভূমের শিল্পীরা এসে প্রতিমা তৈরি করলেও এখন প্রতিমা আসে কুমোরটুলি থেকে। পশুবলি এখন বন্ধ। পুজোর ভোগে থাকে লুচি, তরকারি এবং নানা প্রকার মিষ্টি।