শাশুড়ি-বৌমার ঝামেলা, এ তো ঘর ঘর কি কহানি! কপাল চাপড়ালেন বিচারপতি

বিচারপতি ছেলেকে বলেন, ‘‘আপনাকে তো বাড়ি ছেড়ে দিতে বলতে পারব না। আপনি নিজেই বরং বৌ নিয়ে ভাড়াবাড়িতে গিয়ে থাকুন। এই ঝঞ্ঝাটই যত নষ্টের গোড়া। এখন আমি কী যে করি!’’ কপাল চাপড়াতে থাকেন বিচারপতি পাথেরিয়া।

Advertisement

শমীক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৫
Share:

এজলাসে চলছে শাশুড়ি-বৌমার ঝঞ্ঝাটের শুনানি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ঘরে-বাইরে দুর্লভ হয়ে উঠেছে হাসি। বিশেষত ন্যায়ালয়ের গুরুগম্ভীর বাতাবরণে হাসি তো রীতিমতো অনুপ্রবেশকারী! সেই উচ্চ আদালতেই হাসির ফোয়ারা ছুটল বৃহস্পতিবার। এবং সেটা ছোটালেন বিচারপতিই!

Advertisement

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার পর্যবেক্ষণ, শাশুড়ি-বৌমার ঝঞ্ঝাট ‘ঘর ঘর কি কহানি’ এবং ‘এই ঝঞ্ঝাটই যত নষ্টের গোড়া!’ আর এমনই এক ঝঞ্ঝাট মেটাতে গিয়ে এ দিন বারবার কপাল চাপড়াতে দেখা গেল তাঁকে।

ঘটনাটি কী?

Advertisement

টিটাগড় থানার পুলিশ জানাচ্ছে, ব্যারাকপুরের এক মহিলার সঙ্গে তাঁর বৌমার ঘোর অশান্তি বেধেছে। দু’পক্ষকে বসিয়ে মিটমাট করানোর চেষ্টা করেছে পুলিশ। কাজ হয়নি। অগত্যা বৌমার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছেন শাশুড়ি। ছেলেকেও যুক্ত করেছেন মামলায়। আদালতের কাছে নিরুপায় শাশুড়ির আবেদন, তিনি শান্তি চান।

বিচারপতি শুনানির শুরুতেই ছেলের উদ্দেশে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘‘কেন এমন করছেন? বা়ড়ি মায়ের। না-পোষালে চলে যান। নইলে বাড়িছাড়া করাবো।’’

কাঁচুমাচু মুখে মাঝবয়সি ছেলে বলেন, ‘‘দয়া করে আমার কথাও শুনুন। আমার কোনও দোষ নেই। আমিও শান্তি চাই।’’

ভ্রু কুঁচকে মামলার নথি পড়তে শুরু করেন বিচারপতি। খানিক পরে তিনি বলেন, ‘‘আরে, তা-ই তো! আপনার বিরুদ্ধে তো দেখছি, মায়ের কোনও অভিযোগই নেই। যত আপত্তি-অভিযোগ বৌমাকে নিয়ে।’’ ছেলে বললেন, ‘‘সেটাই তো!’’

আরও পড়ুন: বিশ্বাস রাখুন, দূরে যাবেন না, আদিবাসীদের আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর

বিচারপতি বলেন, ‘‘এ তো ঘর ঘর কি কহানি। আদালতের মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বোধ হয় এমন কেউই নেই, যাঁকে এই ঝঞ্ঝাট-ঝামেলা পোহাতে হয় না। মা আর বৌমার মাঝেখানে পড়ে আপনার তো দেখছি, স্যান্ডউইচের দশা!’’

হাসির রোল ওঠে আদালত জুড়ে।

বিচারপতি ছেলেকে বলেন, ‘‘আপনাকে তো বাড়ি ছেড়ে দিতে বলতে পারব না। আপনি নিজেই বরং বৌ নিয়ে ভাড়াবাড়িতে গিয়ে থাকুন। এই ঝঞ্ঝাটই যত নষ্টের গোড়া। এখন আমি কী যে করি!’’ কপাল চাপড়াতে থাকেন বিচারপতি পাথেরিয়া।

আর উতরোল হাসিতে ভেসে যেতে থাকে সারা এজলাস।

ছেলে বলেন, ‘‘হুজুর, শুনুন। বৌ বলছে, অন্য কোথাও যাবে না।

আমি যে কী করি!
বলছে, ‘শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি ছেড়ে কোথাও যাবো না।’ এখন আপনিই বলুন, আমি কী করি?’’
বিচারপতির হাত ফের উঠে যায় কপালে। তিনি বলতে থাকেন, ‘‘ধ্যাত তেরি ছাই। আমি যে কী করি!’’
ফের হাসির রোল ওঠে আদালতে।
ছেলের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘দেখুন, হাইকোর্টে জজিয়তি করছি ২০০৬ সাল থেকে। আপনার মতো ভাল আর সৎ লোক আমি বড় একটা দেখিনি। আদালতে দাঁড়িয়ে অনেকেই মিথ্যা বলেন। আপনি অকপটে সত্যি বলছেন। কী কাজ করেন?’’
ছেলে বলেন, ‘‘সিআইএসএফ (শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী)-এ চাকরি করতাম। স্বেচ্ছাবসর নিয়ে এখন একটা নিরাপত্তায় সংস্থায় আছি।’’
তার পরেই বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনার বৌ কী করেন?’’
ছেলের উত্তর, ‘‘কী যেন একটা করে! আমায় বলে না।’’
গালে হাত দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘‘সে কী কথা!’’
ফের ভাঙল হাসির বাঁধ।
বিচারপতি ছেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ রিপোর্টে বলছে, আপনাদের বাড়ির অশান্তি মিটেছে না চলছে, তা দেখতে তারা নাকি মাঝেমধ্যে টহল দিয়ে আসে। এটা কি ঠিক?’’
ছেলের জবাব, ‘‘মাঝেমধ্যে কি না, জানি না। এক বার এসেছিল।’’
বিচারপতি: কী বলল?
ছেলে: বলতে পারব না। বৌয়ের সঙ্গে কী যেন কথা বলে চলে গেল।
আবার হাসি।
বিচারপতি সরকারি কৌঁসুলিকে বলেন, ‘‘বৌমাকে হাজির করাতে পারবেন? দেখি, ওঁকে চেম্বারে ডেকে পাঠিয়ে সোজা করানো যায় কি না।’’
সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ‘‘বৌমাকে সম্ভবত মামলার নথি দেওয়া হয়নি। তাঁর আইনজীবীকে তো আদালতে দেখছিই না।’’
বিচারপতি সঙ্গে সঙ্গে শাশুড়ির কৌঁসুলিকে নির্দেশ দেন, ‘‘বৌমার কাছে মামলার নথিপত্র পাঠাতে হবে। না-পাঠালে বৌমা যদি সোজা এখানে এসে আমার সঙ্গেই ঝগড়াঝাঁটি শুরু করে দেন! ওরে বাবা!’’
হাসির রেশ নিয়েই মামলাটি মুলতুবি রাখা হয় এক সপ্তাহের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন