কামালগাজি উড়ালপুল

সেজেগুজে তৈরি, তবু আটকে পথেই

প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি প্রকল্প পড়ে আছে। চালু করা যাচ্ছে না কারণ, লাগোয়া রাস্তা তৈরির আর একটি প্রকল্প অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। রাজ্যের দুর্গম প্রান্তে নয়, খোদ কলকাতায় সেজেগুজে পড়ে আছে কামালগাজি উড়ালপুল।

Advertisement

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৩
Share:

প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি প্রকল্প পড়ে আছে। চালু করা যাচ্ছে না কারণ, লাগোয়া রাস্তা তৈরির আর একটি প্রকল্প অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। রাজ্যের দুর্গম প্রান্তে নয়, খোদ কলকাতায় সেজেগুজে পড়ে আছে কামালগাজি উড়ালপুল। সম্প্রতি সমস্যাটি নিয়ে কেএমডিএ-র পদস্থ বাস্তুকারদের সঙ্গে কথা বলেছেন নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা।

Advertisement

উন্নয়নের যাবতীয় কাজ এই সরকারের আমলে হয়েছে বলে দাবি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর অভিযোগ, বাম আমলে কোনও কাজ হয়নি। কামালগাজি উড়ালপুলের ব্যাপারে পাল্টা অভিযোগ উঠেছে, এই আমলে কেএমডিএ-এর গাফিলতিতেই চালু করা গেল না প্রকল্পটি।

২০০৭-এ বাইপাস সংযোগকারী এই উড়ালপুলের পরিকল্পনা হলেও কাজ শুরু হয় ২০০৯-এ। গোড়ায় প্রস্তাবিত ব্যয় ছিল ১২ কোটি টাকা। জমি হারানোর প্রশ্নে প্রকল্পের কাজে বাধা এলে বিবাদ গড়ায় আদালতে। ২০১১-য় মেলে আইনি ছাড়পত্র। ভোটের পরে কাজ শুরুর মুখেই রাজ্যে পালাবদল। প্রকল্পের নকশা বদলের পরে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি শিলান্যাস করে নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন বলেছিলেন, দেড় বছরে শেষ হবে কাজ।

Advertisement

পেরিয়ে গিয়েছে পৌনে তিন বছর। সমস্যাটা কোথায়? দেবাশিসবাবুকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এসএমএসের জবাবে কেএমডিএ-র সঙ্গে যোগাযোগের আর্জি জানান তিনি। উড়ালপুলের কাজে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার উদয়ন মণ্ডল বলেন, ‘‘কাজ তো ক’মাস আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। চালু হচ্ছে না কেএমডিএ-র রাস্তার কাজ শেষ হয়নি বলে।’’ কবে রাস্তা তৈরি হবে? উদয়নবাবু বলেন, ‘‘এর দায়িত্ব গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (‘গ্যাপ’) নামে বিভাগের।’’

কেএমডিএ সূত্রে খবর, আদিগঙ্গার দু’পাশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৪.৪ মিটার চওড়া রাস্তা না হলে উড়ালপুলে গাড়ির জট তৈরি হবে।

এই রাস্তাটি তৈরি না হলে উড়ালপুল যে চালু করা যাবে না, এই সরল সত্যটা তো আগে সমীক্ষার সময়েই বোঝা গিয়েছিল। তা হলে কেন সেই মতো দুই বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করা গেল না? ‘গ্যাপ’-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার সামন্ত বলেন, ‘‘আসলে রাস্তা অনেকটাই তৈরি। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে কাজ আটকে গিয়েছে। সাত একরের কিছু বেশি জমি কিনতে হবে। প্রায় ৮ কোটি টাকা লাগবে। অর্থাভাব নয়, এটি কেনার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দরকার ছিল। তা মিলেছে।’’

৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি উড়ালপুল এ ভাবে পড়ে থাকায় এক দিকে যেমন সেটির ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে সাধারণ মানুষও তার সুফল পাচ্ছেন না। এ কথা স্বীকার করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার উদয়নবাবু বলেন, ‘‘কী করব! অনেক বার নানা জায়গায় বলেছি। আমার কিছু করার নেই।’’ কবে শেষ হতে পারে প্রকল্প? ‘‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে সদ্য অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। মাস পাঁচেকের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’’

‘গ্যাপ’-এর ডিজি অরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা তো ২০১২ সালেই জমিটা অধিগ্রহণ করেছিলাম। ২০১৩-এ নতুন জমি নীতি চালু হল। তা মেনে এখন ওই জমি নিতে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। তাই এই দেরি।’’

উড়ালপুলের কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও চালু করা যাচ্ছে না, এটা অস্বস্তিকর বলে স্বীকার করেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ববি হাকিম। কবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্মীয়মান রাস্তার জন্য জমি কেনার অনুমোদন মিলতে পারে? তিনি বলেন, ‘‘১৬ অক্টোবর মন্ত্রিসভার পরিকাঠামো সাব কমিটির বৈঠকে অনুমোদন মিলেছে। এবার প্রথা মেনে জেলাশাসককে কিছু কাজ করতে হবে। আশা করব আগামী বছরের গোড়াতেই কেএমডিএ রাস্তাটা করে ফেলতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন