তৈরি হয়েও রাস্তা আটকে পড়ে কামালগাজি উড়ালপুল

প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি প্রকল্প পড়ে আছে। চালু করা যাচ্ছে না কারণ, লাগোয়া অপর একটি প্রকল্প অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। রাজ্যের দুর্গম প্রান্তে নয়, খোদ কলকাতায় সেজেগুজে পড়ে আছে কামালগাজি উড়ালপুল।

Advertisement

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:০০
Share:

প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি প্রকল্প পড়ে আছে। চালু করা যাচ্ছে না কারণ, লাগোয়া অপর একটি প্রকল্প অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। রাজ্যের দুর্গম প্রান্তে নয়, খোদ কলকাতায় সেজেগুজে পড়ে আছে কামালগাজি উড়ালপুল। অভিযোগ, কেএমডিএ-র দুই বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এই হাল। সম্প্রতি সমস্যাটি নিয়ে নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা কথা বলেছেন কেএমডিএ-র পদস্থ বাস্তুকারদের সঙ্গে।

Advertisement

উন্নয়নের যাবতীয় কাজ এই সরকারের আমলে হয়েছে বলে দাবি করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বাম আমলে কোনও কাজ হয়নি। কামালগাজি উড়ালপুলের ব্যাপারে পাল্টা অভিযোগ উঠেছে, এই আমলে কেএমডিএ-এর গাফিলতিতেই চালু করা গেল না প্রকল্পটি।

ই এম বাইপাসের সঙ্গে সংযোগকারী এই উড়ালপুলের পরিকল্পনা হয় ২০০৭ সালে। কাজ শুরু হয় ২০০৯-এ। গোড়ায় প্রস্তাবিত ব্যয় ছিল ১২ কোটি টাকা। কিছু ব্যক্তি জমি হারানোর প্রশ্নে প্রকল্পের কাজে বাধা দেয়। বিবাদ গড়ায় আদালতে। ২০১১-তে মেলে আইনি ছাড়পত্র। ভোটের পর কাজ শুরুর মুখে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। প্রকল্পের নকশার পরিমার্জনের পর ২০১৩-র ১৫ জানুয়ারি শিলান্যাস করেন নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন। সে সময় তিনি বলেন, দেড় বছরে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ।

Advertisement

দেড় বছরের জায়গায় পৌনে তিন বছর কাটল। সমস্যাটা কোথায়? দেবাশিসবাবুকে ফোনে মেলেনি। তাঁকে এসএমএস করলে জানান, তিনি বাঙ্গালুরুতে। কেএমডিএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করার আর্জি জানান তিনি। উড়ালপুলের তদারকি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার উদয়ন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই কাজ তো ক’মাস আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। চালু করা যাচ্ছে না কেএমডিএ-র তৈরি একটি রাস্তার কাজ হয়নি বলে।’’ কবে রাস্তাটি তৈরি হবে? উদয়নবাবু বলেন, ‘‘ওটি করার দায়িত্ব গঙ্গা অ্যকশন প্ল্যান (গ্যাপ) নামে বিভাগের উপর। ওঁদের জিজ্ঞাসা করুন।’’

কী এমন রাস্তা হচ্ছে, যার জন্য উড়ালপুল তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে? কেএমডিএ সূত্রে খবর, আদিগঙ্গার দু’পাশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৪.৪ মিটার চওড়া রাস্তা না হলে উড়ালপুলে গাড়ির ব্যাপক জট তৈরি হবে। এই নয়া রাস্তা না হলে উড়ালপুল চালু করা যাবে না, এই সরল সত্যটা তো আগে সমীক্ষার সময়েই বোঝা গিয়েছিল। তাহলে কেন সেভাবে দুই বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করা গেল না? ‘গ্যাপ’-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার সামন্ত বলেন, ‘‘সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগটি ঠিক নয়। আসলে, ওই রাস্তা অনেকটাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। আটকে গিয়েছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ। এটির জন্য সাত একরের কিছু বেশি জমি কিনতে হবে। প্রায় ৮ কোটি টাকা লাগবে। অর্থাভাব নয়, এটি কেনার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দরকার।’’

৮০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি উড়ালপুল এভাবে পড়ে থাকায় একদিকে সেটির ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে লোকে এর সুফল পাচ্ছেন না। এ কথা স্বীকার করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার উদয়ন মন্ডল বলেন, ‘‘কী করব! অনেকবার নানা জায়গায় বলেছি। আমার কিছু করার নেই।’’ কবে শেষ হতে পারে প্রকল্প? মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর মাস পাঁচেক পেলে রাস্তার কাজ শেষ করতে পারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন