দুবাই, নাশিক হয়ে শহরের কলেজে মাদক

নিলয় ও তার সঙ্গে জেরম ওয়াটসনকে গ্রেফতার করার পরে এ শহরের মাদক সরবরাহের একটি চক্রের হদিস পায় এনসিবি। জানা যায়, শহরের বেশ কিছু কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত মাদক সরবরাহ করত নিলয়রা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:২৪
Share:

কমলেশ বাসতে

এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের সন্ধান!

Advertisement

ফেরত চলে যাওয়া মাদকের পার্সেলের পিছু নিয়ে খোঁজ পাওয়া গেল ২০ বছরের মাদক পাচারকারী কমলেশ বাসতে-র। কমলেশের বাড়ি নাশিকের আভিয়ান্তা নগরে। শুক্রবার মুম্বই থেকে বিমানে তাকে উড়িয়ে আনা হয়েছে কলকাতায়।

বিদেশ থেকে মাদক আনিয়ে দেশের নানা প্রান্তে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে কলকাতার নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) গ্রেফতার করেছে কমলেশকে। মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে গত ডিসেম্বরে সল্টলেক থেকে গ্রেফতার হওয়া নিলয় ঘোষকে নিয়মিত মাদক সরবরাহ করত কমলেশ। এমনটাই জানিয়েছেন এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব। দুবাইয়ে বসে এক অনাবাসী ভারতীয় যুবক কমলেশকে মাদক সরবরাহ করত বলে জেনেছেন দিলীপবাবুরা। সেই অনাবাসী যুবকের যাবতীয় তথ্যও তাঁদের হাতে এসেছে। ওই যুবককে ধরতে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে দুবাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

Advertisement

নিলয় ও তার সঙ্গে জেরম ওয়াটসনকে গ্রেফতার করার পরে এ শহরের মাদক সরবরাহের একটি চক্রের হদিস পায় এনসিবি। জানা যায়, শহরের বেশ কিছু কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত মাদক সরবরাহ করত নিলয়রা। নিলয়দের জেরা করে গত মাসে রিদিম দাস রায় নামে আরও এক যুবককে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরা সকলেই ‘ডার্ক নেট’ নামে একটি ওয়েবসাইট থেকে মাদক কিনত বলে জানা গিয়েছে। রিদিম বেঙ্গালুরুতে চাকরি করত। পাশাপাশি মাদক কেনাবেচাও করছিল। মাদক কেনার জন্য বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল টাকা ব্যবহার করত রিদিম।

গত জানুয়ারি মাসে দমদম সেন্ট্রাল জেলে গিয়ে নিলয়কে আরও এক দফা জেরা করেন অফিসারেরা। তখনই জানা যায়, নিলয়কে গত ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করার দিন দুয়েক পরে একটি মাদকের পার্সেল সল্টলেকে নিলয়ের বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু নিলয় না থাকায় তা ফেরত চলে যায়। স্থানীয় ক্যুরিয়র সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এক নামী ক্যুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে ওই পার্সেলে পাঁচ গ্রাম এমডিএমএ ট্যাবলেট এসেছিল। পার্সেলটি এসেছিল নাশিকের গৌরীনন্দন আর্কেডে তাদের অফিস থেকে। কলকাতা থেকে অফিসারেরা ছোটেন নাশিক।

ওই ক্যুরিয়র সংস্থার নাশিকের অফিস জানায়, কমলেশ প্রায় নিয়মিতই তাদের মাধ্যমে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু ও নয়ডায় পার্সেল পাঠাত। গত এক বছরে এমন প্রায় ১০০টি পার্সেল পাঠিয়েছে সে। কমলেশের যোগাযোগের নম্বরও পাওয়া যায় তাঁদের কাছে। ‘আবার একটি পার্সেল ফেরত এসেছে’, এমন একটি বার্তা পাঠিয়ে কমলেশকে ডেকে আনা হয় সেই ক্যুরিয়র সংস্থার দফতরে। সেখানেই বুধবার গ্রেফতার করা হয় তাকে। মুম্বইয়ের এনসিবি অফিসারদের একটি দলের সঙ্গে কলকাতার অফিসারেরা কমলেশকে নিয়ে তার বাড়িতেও হানা দেন। সেখান থেকে খুব সামান্য এমডিএমএ ট্যাবলেট পাওয়া যায়। কমলেশ জানায়, ডিসেম্বরে কলকাতায় নিলয় গ্রেফতার হওয়ার পরে তার বাড়িতে রাখা বেশির ভাগ মাদকই সে কম দামে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছিল।

কমলেশ জানিয়েছে, বছর দুই আগে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ করে সে বিদেশে পড়তে যাবে বলে মনস্থ করে। সেই মতো নিয়মিত ইন্টারনেটে বসে বিদেশে কোথায় এবং কোন বিষয়ে পড়তে যাওয়া যায়, তার খোঁজ চালাত সে। তখনই ডার্ক নেটের সংস্পর্শে আসে কমলেশ। দিলীপবাবুর অভিযোগ, কমলেশ এ ভাবেই ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠে। বিটকয়েন ব্যবহার করে মাদক কিনতে শুরু করে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন