যোধপুর পার্ক ডাকাতিতে ধৃত উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরা

পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি হিলকার্ট রোডে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি করতে এসে সেনজাম নোংতেনখোম্বা, লিসাম ইবুঙ্গোতোম্বা ও রাজেশ সিংহ নামে তিন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায় এলাকাবাসীর হাতে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও রাজীবাক্ষ রক্ষিত

কলকাতা ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১২
Share:

সোনার দোকানে ডাকাতিতে গ্রেফতার হওয়া তিন জঙ্গি।— ফাইল চিত্র।

গোয়েন্দাদের সন্দেহই সত্যি হল।

Advertisement

যোধপুর পার্কের সোনার দোকানের ডাকাতির পিছনে রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জঙ্গি সংগঠন। শিলিগুড়িতে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি করতে এসে ধরা পড়া তিন দুষ্কৃতীকে জেরা করার পরে এমনটাই দাবি লালবাজারের। ওই তিন দুষ্কতী মণিপুরের জঙ্গি সংগঠন কাংলাইপাক কমিউনিস্ট পার্টি-র (কেসিপি) সদস্য। ধৃতেরা ওই দুই ডাকাতি ছাড়াও গত মে মাসে গুয়াহাটির একটি সোনার দোকানের ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি পুলিশের। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা দুই ঘটনার বিশ্লেষণ করে সন্দেহ করেছিলেন দু’টি ঘটনার পিছনেই উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও চক্র রয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি হিলকার্ট রোডে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি করতে এসে সেনজাম নোংতেনখোম্বা, লিসাম ইবুঙ্গোতোম্বা ও রাজেশ সিংহ নামে তিন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায় এলাকাবাসীর হাতে। ওয়াই গজেন্দ্র নামে এক জন দুষ্কৃতী পালিয়ে গেলেও ওই তিন জনকে মারধর করার পরে গুরুতর জখম অবস্থায় শিলিগুড়ি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে জেরা করার পরে পুলিশ জানতে পারে, ধৃতেরা বিচ্ছিন্নতাবাদি জঙ্গি সংগঠন কেসিপি-র সদস্য। রাজেশ এবং লিসাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হলেও সেনজাম নোংতেনখোম্বা কেসিপি-র নেতা। ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ অস্ট্রিয়ায় তৈরি আধুনিক নয় মিলিমিটার বোরের গ্লক-১৭ পিস্তল ও স্টেয়ার সি-৯ এ-১ পিস্তল উদ্ধার করেছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তিন জন আগে বেশ কয়েক বার মণিপুরে গ্রেফতারও হয়েছে। জামিনে মুক্তির পরেই দলটি এ রাজ্যে হানা দেওয়া শুরু করে বলেই অফিসারেরা মনে করছেন। ধৃতেরা কেসিপি-র যুদ্ধ বিরতি গোষ্ঠির সদস্য হলেও বিচ্ছিন্নতাবাদি কার্যকলাপ চালানোর টাকা সংগ্রহের জন্যই ওই ডাকাতি করেছে বলে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন ধৃতদের এক জন।

মাস দেড়েক আগে গত ২৭ জুলাই দুপুরে লেক থানা এলাকার যোধপুর পার্কের একটি সোনার দোকানে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার ডাকাতি হয়। ওই দিন প্রবল বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা বর্ষাতি এবং হেলমেটের আড়ালে সোনার দোকানের ভিতরে ঢুকে সেখানকার কর্মীদের বন্দুক দিয়ে ভয় দেখিয়ে গয়নাগাঁটি ব্যাগে ভরে ক্যাশ থেকে টাকাও নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগের মধ্যে থেকে করাত, হাতুড়ি, ছেনি, স্ক্রু ড্রাইভার উদ্ধার করে। ঘটনার পরে এলাকার সিসিটিভি থেকে পুলিশ দুষ্কৃতীদের ছবি পায়। যাতে দেখা যায় দুষ্কৃতীদের মুখ মঙ্গোলীয় ধাঁচের। তদন্তে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, মে মাসে ঠিক একই কায়দায় গুয়াহাটির একটি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়েছিল। সেখানেও সন্দেহভাজনদের মুখ ছিল মঙ্গোলীয় ধাঁচের।


ধৃতদের থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র।

তদন্তকারীদের অনুমান যে অমূলক নয়, তা শুক্রবার শিলিগুড়িতে ওই তিন জন গ্রেফতারের পরেই পরিষ্কার হয়ে যায়। রবিবারই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার (বিশেষ) ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বে তদন্তকারীদের একটি দল শিলিগুড়িতে পৌঁছয়। ডিসিপি হরেকৃষ্ণ নাথের নেতৃত্বে গুয়াহাটি পুলিশের একটি দলও শিলিগুড়িতে রয়েছে ধৃতদের জেরার জন্য।

পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। অবস্থার উন্নতি হলে ধৃতদের আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেবে শিলিগুড়ি পুলিশ। পরে কলকাতা পুলিশ নিজেদের মামলায় তাদের হেফাজতে নেবে।

গুয়াহাটি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের এডিসিপি রোজি কলিতা জানান, দু’জনকে জেরা করার অবস্থাই নেই। অন্য জনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, গুয়াহাটির সোনার শো-রুম থেকে ডাকাতি করা প্রায় সাত কিলো সোনা তারা মণিপুরে বিক্রি করেছে। কলকাতা থেকে ডাকাতি করা সোনা বিক্রি করেছে নেপালে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ডাকাতদের পরিচয় নিয়ে অসম পুলিশ ইতিমধ্যে মণিপুর পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। সেখানকার পুলিশের একটি দলও চলতি সপ্তাহেই শিলিগুড়িতে পৌঁছবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন