kerala flood

কেরলের জন্য টাকা চেয়ে ভুয়ো সংস্থার ফাঁদ, ছড়াচ্ছে বিজ্ঞাপন

কেরলের জন্য ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক হতে বলেছেন খোদ সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৭
Share:

বন্যাপীড়িতদের অর্থ সাহায্যের আগে ‘লিঙ্ক’ খতিয়ে দেখতে অনুরোধ।ছবি: পিটিআই

কেরলের জন্য ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক হতে বলেছেন খোদ সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। ত্রাণের নাম করে অনেক ভুয়ো সংস্থাই যে অনলাইনে এবং নগদে টাকা আত্মসাতের চেষ্টায় নেমেছে, সে খবর পেয়েছেন তিনি। ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে হলেও সরাসরি সরকারি প্রতিনিধিদের হাতেই তা তুলে দিতে বলেছেন বিজয়ন।

Advertisement

ত্রাণের নাম করে টাকা তুলতে জালিয়াতেরা যে এ রাজ্যেও নেমে পড়েছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করছেন লালবাজারের কর্তারাও। ইতিমধ্যেই তাঁদের নজরে এসেছে এমন
দু’একটি ঘটনা।

‘কেরলের পাশে দাঁড়ান। মুক্ত হস্তে দান করুন আমাদের সংস্থায়। টাকা পৌঁছে যাবে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।’ বন্যার কয়েকটি ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মর্মেই ছড়িয়ে পড়েছে বিজ্ঞাপন। নীচে দেওয়া আছে একটি লিঙ্ক। তাতে ক্লিক করলেই খুলে যাচ্ছে একটি পেজ, যাতে রয়েছে টাকা কী ভাবে দেওয়া যাবে, তার নিয়মাবলি।

Advertisement

আরও পড়ুন: জয়সলের পিঠে পা দিয়েই জীবনের পথে ফিরছে কেরল

নিজের ই-মেলে এ রকমই একটি লিঙ্ক পেয়েছিলেন বাগুইআটির সুজাতা বসু। বন্যায় সব হারানো মানুষগুলোর জন্য তিন হাজার টাকা ওই লিঙ্কের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লিঙ্কটি খোলার পরে দেখেন, বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে। সন্দেহ হওয়ায় তিনি আর টাকা পাঠাননি। কিন্তু তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর ল্যাপটপটি ‘হ্যাং’ করে যায়।

আরও পড়ুন: ছাদেই নেমে এল কপ্টার, দুঃসাহসিক উদ্ধার কেরলে​

সাইবার-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অল্পের জন্য সাইবার জালিয়াতির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন সুজাতাদেবী। ওই লিঙ্কটি আসলে ছিল এক প্রতারণার ফাঁদ। সাইবার-দুষ্কৃতীরা সেই ফাঁদ পেতে রেখেছিল। কলকাতা পুলিশের সাইবার বিভাগের গোয়েন্দারাও জানাচ্ছেন, ভাল করে না জেনেশুনে কোনও ওয়েবসাইটের লিঙ্কে বা ফেসবুক পেজের ফাঁদে পা দেবেন না। চার দিকে যে ভাবে কেরলের বন্যাত্রাণ তহবিল তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তারই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে সাইবার অপরাধীরা। তাই এ সব ক্ষেত্রে অজানা লিঙ্ক না খোলাই ভাল। খুললে হ্যাক হয়ে যেতে পারে কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা মোবাইল। সেই সঙ্গে প্যান, আধার নম্বর অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ডও চলে যেতে পারে দুষ্কৃতীদের হাতে। খোয়া যেতে পারে সর্বস্ব।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে কেরলের বন্যাত্রাণ সংক্রান্ত সব ধরনের লিঙ্কের উপরেই নজরদারি চালানো হচ্ছে। কেউ প্রতারিত হলেই স্থানীয় থানায় বা লালবাজারের সাইবার বিভাগে যেন অভিযোগ দায়ের করেন।’’ গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এ দেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির পাশাপাশি বেশ কিছু বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও কেরলের জন্য ত্রাণ তহবিল তৈরি করছে। তারা কেউ কেউ ফেসবুক পেজও তৈরি করেছে। কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিঙ্কের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলছে।

কোনও লিঙ্কে ভাইরাস আছে কি না, কী ভাবে বোঝা যাবে? সাইবার-বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে, যেগুলি বলে দেয়, ওই লিঙ্কটি গন্ডগোলের কি না। যেমন, ভাইরাস টোটাল। কোনও লিঙ্ক নিয়ে সন্দিহান হলেই ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া যেতে পারে।’’ সাইবার-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সম্ভব হলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা পাঠান। বিশেষ করে, ব্যক্তিগত ই-মেলের ইনবক্সে ত্রাণ তহবিল সংক্রান্ত কোনও লিঙ্ক এলে তা না খোলাই ভাল। এ ছাড়া, টাকা দেওয়ার আগে কোনও ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পিন, ওটিপি, আধার নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর) জানতে চাইলে সেই সব লিঙ্কের মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন