Advertisement
E-Paper

ছাদেই নেমে এল কপ্টার, দুঃসাহসিক উদ্ধার কেরলে

বন্যাবিধ্বস্ত কেরলের কোচিতে রবিবার ‘সি কিং’ নামে নৌ-বাহিনীর ৪২সি সিরিজের কপ্টার দুঃসাহসিক উদ্ধার অভিযানের নমুনা রেখে গেল।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৯
আশা: কখন আসবে ত্রাণসামগ্রী, আকাশপানে চেয়ে বন্যাদুর্গতেরা। রবিবার কেরলের এক অস্থায়ী শিবিরে। ছবি: রয়টার্স।

আশা: কখন আসবে ত্রাণসামগ্রী, আকাশপানে চেয়ে বন্যাদুর্গতেরা। রবিবার কেরলের এক অস্থায়ী শিবিরে। ছবি: রয়টার্স।

ঘোলা জলে খেলনার মতো ভাসছে চার তলা বাড়িটা! দিগন্তে আওয়াজ পেয়েই পেয়েই আর্তনাদ শুরু করেছিলেন বিপন্ন কিছু মানুষ। তাঁদের অবাক করে দিয়েই ছাদের উপরে সটান নেমে এল পেল্লাই একটা হেলিকপ্টার!

বন্যাবিধ্বস্ত কেরলের কোচিতে রবিবার ‘সি কিং’ নামে নৌ-বাহিনীর ৪২সি সিরিজের কপ্টার দুঃসাহসিক উদ্ধার অভিযানের নমুনা রেখে গেল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উদ্ধারের কাজে চপার বা কপ্টার ব্যবহার হামেশাই হয়ে থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক ক্ষেত্রে উদ্ধারের এলাকা চিহ্নিত করে অল্প উচ্চতায় ভেসে থাকে কপ্টার। নামিয়ে দেওয়া দড়ি ধরে দুর্গতদের তুলে নিয়ে যান উদ্ধারকারীরা। আর এ দিন যা হল, তা এক্কেবারে তাক লাগিয়ে দেওয়া! নীচে আদিগন্ত জল, এ দিক-ও দিক বাড়ি আর নারকেল গাছের ফাঁক গলে ছাদেই কপ্টার নামিয়ে দিলেন ক্যাপ্টেন রাজ কুমার। ঘূর্ণিঝড় ‘অক্ষি’র সময়ে তাঁর কাজের জন্য ‘শৌর্য চক্র’ পেয়েছেন রাজ। তাঁর রাজ্যে ভিভিআইপি-র সফর হলেই ডাক পড়ে পালাক্কাডের রাজের। কিন্তু এ বার আম জনতার প্রাণ বাঁচিয়ে অন্য শৌর্যের পরীক্ষায় সসম্মান উত্তীর্ণ তিনি।

কয়েক ঘণ্টা পরেও ফোনে বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না প্রত্যক্ষদর্শী অজিশ কুমারের। বলছিলেন, ‘‘বৃষ্টিটা একটু কমেছে। কিন্তু জল যা আছে, তাতে নীচে নেমে বেরোনো অসম্ভব। একটা উঁচু বাড়ির ছাদে জমা হওয়া মানুষ হেলিকপ্টার দেখেই চিৎকার করছিলেন। আমরা ভাবছিলাম, কপ্টার এলে দড়ি নামিয়ে লোক তুলবে। কিন্তু গাছ-বাড়ির ফাঁক দিয়ে কী ভাবে যেন পাখির মতো ছাদে নেমে এল কপ্টারটা। জনাতিরিশ লোককে একসঙ্গে নিয়ে আবার চলেও গেল দ্রুত!’’

আরও পড়ুন: বন্যায় ডুবতে বসেছে বাড়ি, ২৫ পোষ্য কুকুরকে ছেড়ে গেলেন না মালকিন!

প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, ৪২সি ওই কপ্টারের বিশাল রোটর ব্লেড মিনিটে ২০৩ বার ঘোরে। মাপজোখের নিপুণ হিসেব ছাড়া অল্প জায়গায় ওই কপ্টার নামানো দুঃসাধ্য। জনপদের মধ্যে বাড়ি বা গাছে সামান্য ঠোক্কর মানেই বিপর্যয়। অথচ সে সব ঝুঁকি তুচ্ছ করেই দুর্গতের ত্রাণে নেমে এসেছিলেন রাজকুমার।

কেরলের বিপর্যয় যেমন বেনজির, তার মোকাবিলায় লড়াইও চলছে তেমন অভিনব ভাবনার অস্ত্রেই। প্রশিক্ষিত ফৌজের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছেন সাধারণ নাগরিকও। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রে বলা হচ্ছে, তাদের ৩৬টি উদ্ধারকারী দল ৩৮টা রবার বোট এবং ২১টা ভুটভুটি নিয়ে দিনরাত কাজ করছে। ‘কেরালা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ক্লাব’ জেলায় জেলায় জিপ নিয়ে ঘুরছে। ওই দলের অতুলের কথায়, ‘‘বহু মানুষেরই খাবার থেকে জামাকাপড় কিচ্ছু নেই। ইদ্দুকির আদিবাসী বসতিতে এখনও ত্রাণ পৌঁছয়নি। তবে স্থানীয় রাজনীতিকেরা তৎপর বলেই প্রত্যন্ত এলাকারও খবর আসছে।’’

এঁরা যদি বিপদসঙ্কুল পথে সিদ্ধহস্ত হন, খালি হাতের আম জনতাই বা কম কীসে! সিপিএমের মুখপত্রের স্থানীয় সম্পাদক পি এম মনোজ যেমন এ দিনের নির্ধারিত তাঁর মেয়ের বাগ্‌দানের অনুষ্ঠান শুধু স্থগিতই রাখেননি, দুই পরিবারকে রাজি করিয়ে অনুষ্ঠানের টাকা ত্রাণ তহবিলে পাঠিয়েছেন। মলপ্পুরমের যুবক অভিষেক নিজের বিয়ের মণ্ডপ খুলে দিয়েছেন আশ্রয়প্রার্থীদের ঠাঁই দিতে। আবার ত্রিশূরের সুনীতার বাড়ি জলে ভাসছে দেখে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) লোকজন গিয়ে তাঁকে বার করতে পারেননি। দো’তলার খাটে দলা পাকিয়ে থাকা ২৫টা কুকুরকে ছাড়া তিনি নড়বেন না যে! পোষ্যদের উদ্ধারের আলাদা ব্যবস্থার পরেই তিনি পাড়ি দিয়েছেন শিবিরে। তিরুঅনন্তপুরমের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রেরা তৈরি করেছেন ‘ইমার্জেন্সি পাওয়ার ব্যাঙ্ক’। যা এক বার মোবাইলে গুঁজলেই ২০% চার্জ পাওয়া যাবে। জলভাসি মানুষের হাতে দিতে ‘এয়ার বাব্‌ল প্যাকেটে’ মোড়া সেই চার্জার কপ্টার থেকে ফেলা হচ্ছে এ দিন থেকে।

এই ঊর্ধ্বশ্বাস অভিযানের মাঝে উল্টো ঘটনা ঘটিয়ে বিপদে পড়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী কে রাজু। দুর্যোগের মুহূর্তে সিপিআই তাদের মন্ত্রীকে জার্মানি থেকে ফিরতে বলার পরেও তিনি প্রবাসেই। এর পরে মন্ত্রিত্ব রাখাই দায়!

Kerala Flood Rescue Mission Indian Navy Helicopter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy