Advertisement
E-Paper

বিমান পরিষেবা কবে স্বাভাবিক হবে স্পষ্ট নয়! ইন্ডিগো-রহস্য উন্মোচনে তদন্তে নামল কেন্দ্র, বিপর্যয় সামলাতে বিধি শিথিল

টানা তিন দিন ধরে বিপর্যস্ত ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা। শুক্রবার এই বিমান সংস্থার উড়ান বাতিলের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। দুর্ভোগ এবং পরিষেবা বিঘ্নের কারণে একাধিক বার যাত্রীদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৪৩
More than1,000 IndiGo flights cancelled; Centre hopes for fix by Monday, CEO Pieter Elbers says Dec 10-15

ইন্ডিগো বিপর্যয়ের ফলে দিনভর যাত্রীদুর্ভোগ। ছবি: পিটিআই।

একের পর এক বিমান বাতিল। কিছু বিমান চলছে নির্ধারিত সময়ের তুলনায় দেরিতে। বিমানবন্দরগুলিতে যাত্রীদের ভিড়। সকলের চোখেমুখেই উদ্বেগ! আদৌ বিমান পাওয়া যাবে কি না, সেটাই স্পষ্ট নয়। দিন কয়েক ধরেই উড়ান পরিষেবা নিয়ে প্রশ্নের মুখে ইন্ডিগো। গত তিন দিন ধরে পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুক্রবার যাত্রীভোগান্তি চরমে পৌঁছোয়। শনিবারও যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তার আশা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কবে হতে পারে, তা নিয়ে বিমান সংস্থা এবং কেন্দ্রের মধ্যেই দু’ধরনের মত!

টানা তিন দিন ধরে বিপর্যস্ত ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা। শুক্রবার এই বিমান সংস্থার উড়ান বাতিলের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। দুর্ভোগ এবং পরিষেবায় বিঘ্নের কারণে বার বার যাত্রীদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ। এ বার এ নিয়ে মুখ খুললেন এই বেসরকারি বিমান সংস্থার সিইও পিটার এলবার্স। যাত্রীদের অসুবিধার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় শুক্রবারই সবচেয়ে বেশি পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। অন্যান্য দিন ইন্ডিগোর যত সংখ্যক বিমান চলাচল করে, শুক্রবার তার ‘অর্ধেক’ চলেছে বলে জানান পিটার। তিনি দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, শনিবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে তিনি আশা করছেন, শুক্রবারের তুলনায় কম সংখ্যক বিমান বাতিল থাকবে শনিবার। অর্থাৎ, হাজারের কম বিমান বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে।

যাত্রীদের বার্তা ইন্ডিগোর

বিমান বাতিল হওয়া সত্ত্বেও অনেক যাত্রীই শুক্রবার বিমানবন্দরের ভিড় করেছিলেন। ভোগান্তি এড়াতে বাতিল হওয়া বিমান ধরতে বিমানবন্দরে না-যাওয়ার পরামর্শই দিয়েছেন ইন্ডিগোর সিইও।

তিন পদক্ষেপ

ইন্ডিগোর সিইও জানান, ইন্ডিগো যাত্রীভোগান্তি এড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। এক, সঙ্কটের সময় গ্রাহকদের সুবিধার্থে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হচ্ছে। বিমান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সমাজমাধ্যমে জানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, কোন কোন বিমান বাতিল থাকছে তারও সুস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হবে। টিকিটের টাকা কী ভাবে ফেরত পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারেও যাত্রীদের যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করবে ইন্ডিগো। গ্রাহক সহায়তা কেন্দ্রে কর্মী সংখ্যা আরও বাড়াচ্ছে তারা। দুই, বাতিল হওয়া বিমানের তথ্য দিয়ে যাত্রীদের কাছে বিমানবন্দরে না-আসার বার্তাও পাঠানো হচ্ছে। তিন, শনিবার পরিস্থিতি যাতে কিছুটা স্বাভাবিক করা যায় সেই জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে। শুক্রবার বাতিল ইন্ডিগোর ক্রু এবং বিমানগুলিকে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে শনিবার সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ওই বিমানগুলি গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে পারে।

দুই মত

পরিষেবা কবে স্বাভাবিক হবে? এখন এই প্রশ্নই ঘুরছে যাত্রীদের মনে। ইন্ডিগো বিপর্যয়ে হস্তক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের অসামরিক বিমান পরিচালন মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শনিবার থেকেই ধীরে ধীরে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে। সম্পূর্ণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হতে সোমবার। অর্থাৎ, কেন্দ্র মনে করছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইন্ডিগো পুরোপুরি বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও ১০ দিন লেগে যেতে পারে! ইন্ডিগোর সিইও বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ কার্যক্রম পুনরুদ্ধার করতে আরও পাঁচ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। ১০-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

কেন এই বিপর্যয়?

বিমান পরিষেবায় নিরাপত্তা আরও মজবুত করতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় এবং বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ নামের ওই বিধি অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের বিশ্রামের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে মাত্র দু’টি বিমান রাতে অবতরণ করাতে পারবেন এক জন পাইলট (আগে সংখ্যাটা ছিল ছয়)। তা ছাড়া ওই বিধিতে বলা হয়, পাইলট এবং বিমানকর্মীদের পর পর দু’দিন নাইট ডিউটি দেওয়া যাবে সপ্তাহে এক বারই। ইন্ডিগোর বিমান বিপর্যয়ের নেপথ্যে ডিজিসিএ-র এই বিধিকেই দায়ী করা হচ্ছে।

সমস্যায় কেন ইন্ডিগো?

দেশের অন্য বিমান সংস্থারগুলির তুলনায় কেন ইন্ডিগোয় বেশি সমস্যা হচ্ছে? অন্য বিমান সংস্থাগুলির তুলনায় কিছুটা সস্তায় যাত্রীদের উড়ান পরিষেবা দিয়ে থাকে ইন্ডিগো। দেশের ৯০টি এবং বিদেশের ৪৫টি বিমানবন্দরে পরিষেবা দেয় তারা। ইন্ডিগোর অনেক বিমানই রাতে অবতরণ করে। তাই নয়া বিধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এই বিমানসংস্থাই। নয়া বিধি মেনে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যত সংখ্যক কর্মী এবং পাইলট প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই।

কাঠগড়ায় ইন্ডিগো

প্রায় দু’বছর আগে ডিজিসিএ নয়া বিধির কথা জানিয়েছিল। অন্য বিমান সংস্থাগুলি সেই মতো ব্যবস্থা নিলেও ইন্ডিগো ছিল উদাসীন! অভিযোগ পাইলটদেরই একাংশের। পাইলটদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস’-এর অভিযোগ, ইন্ডিগো দীর্ঘ সময় ধরে নতুন পাইলট এবং বিমানকর্মী নিয়োগ করেনি। নয়া বিধি কার্যকর হবে, তা জেনেও দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা করেনি ইন্ডিগো। বরং দীর্ঘ দিন ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। সেই কারণেই এই বিপর্যয়। পাইলটদের আর এক সংগঠন ‘দ্য এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন’-এর দাবি, বিধি শিথিল করতে কেন্দ্রকে বাধ্য করার কৌশল নিয়েছিল ইন্ডিগো।

বিধি শিথিল কেন্দ্রের

ডিজিসিএ-র বিধি আপাতত শিথিল করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী, পাইলটদের নেওয়া ছুটিকে সাপ্তাহিক বিশ্রামের যে নির্দিষ্ট সময়সীমা, তাতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। অর্থাৎ, পাইলটরা আগাম ছুটি নিন বা না-নিন, সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বিশ্রাম দিতেই হবে তাঁদের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুক্রবার এই সংক্রান্ত নিয়মটি শিথিল করা হয়েছে।

কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার পরেও কেন এত দিন নড়েচড়ে বসেনি কেন্দ্র। নিয়মবিধি মানার ক্ষেত্রে ইন্ডিগোকে কেন চাপ দেওয়া হয়নি, উঠছে সেই প্রশ্নও। তা ছাড়া আপাতত একটি বিধি শিথিল করার কথা বলা হলেও, তা কত দিনের জন্য স্পষ্ট নয়।

তদন্তের নির্দেশ কেন্দ্রের

কী কারণে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হল, তা খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) জানিয়েছে, ইন্ডিগো বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে। সেই কারণে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নায়ডু এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কী ভুলের কারণে পরিস্থিতির সৃষ্টি হল, তা খতিয়ে দেখা হবে এই তদন্তে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না-ঘটে, সেই কারণে এই তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে খবর। আরও বলা হয়েছে, প্রয়োজনে এ ব্যাপারে ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের থেকে জবাব চাওয়া হবে।

আকাশছোঁয়া ভাড়া

ইন্ডিগোর বিমান বাতিল হওয়ায় চাপ পড়েছে অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলির পরিষেবাতে। শুক্রবার দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ওড়েনি একটাও ইন্ডিগোর বিমান। ফলে অনেক যাত্রীই বিকল্প ব্যবস্থার অনুসন্ধান শুরু করেন। অন্য সংস্থার বিমান চেপে গন্তব্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা করেন অনেকেই। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে বিমান ভাড়াও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে দিল্লি-মুম্বই হোক বা দিল্লি-কলকাতা কিংবা দিল্লি-চেন্নাইয়ের এক পিঠের বিমান ভাড়াই এক এক জনের ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

যাত্রীভোগান্তি

ইন্ডিগোর যাত্রীদের অভিযোগ, যথাযথ খাবার এবং আশ্রয় ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। কিন্তু ঠিক কোন সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের বিমান ছাড়বে, তা বিমানসংস্থার তরফে জানানো হচ্ছে না। শুক্রবার বিমান সংস্থা জানিয়েছে, অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কাছে খাবার এবং জল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যাত্রীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন শহরে হোটেলের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ইন্ডিগো।

পদক্ষেপ ভারতীয় রেলের

ইন্ডিগো বিপর্যয়ে যাত্রীদের সমস্যা মেটাতে এ বার পদক্ষেপ করল ভারতীয় রেল। শুক্রবার তারা জানিয়েছে, অন্তত ৩৭টি ট্রেনে অতিরিক্ত ১১৬টি কোচ জোড়া হয়েছে। উত্তর রেলের তরফে বিশেষ ট্রেন চালানোর ভাবনাচিন্তাও করা হচ্ছে।

IndiGo Indigo Flight
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy