বাইকটা জোরে চালালে হয়তো মারাই যেতাম

আচমকা গলায় প্রচণ্ড জ্বালা। পোকা কামড়াচ্ছে নাকি? কয়েক মুহূর্ত পরে মনে হল, গলায় যেন কেউ ব্লেড চালাচ্ছে। ডান হাতটা আপনা-আপনি মোটরবাইকের অ্যাক্সিলারেটর থেকে গলায় চলে এল।

Advertisement

সৌপর্ণ দাশ

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৪
Share:

মাঞ্জার ধারে সৌপর্ণের জখম গলা।

আচমকা গলায় প্রচণ্ড জ্বালা। পোকা কামড়াচ্ছে নাকি? কয়েক মুহূর্ত পরে মনে হল, গলায় যেন কেউ ব্লেড চালাচ্ছে। ডান হাতটা আপনা-আপনি মোটরবাইকের অ্যাক্সিলারেটর থেকে গলায় চলে এল। আর তখনই বুঝলাম, গলায় আটকে চেপে বসছে একটা সুতো। ধারালো সুতো। মানে, কড়া মাঞ্জা দেওয়া। ক্রমশ বেশি করে চেপে বসছে। ওটা না ফেলতে পারলে গলা কেটে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো পরমা উড়ালপুলে মোটরবাইক ছুটিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ থামতে গেলে তো দ্রুত গতিতে পিছনের গাড়ি এসে মেরে দেবে। কী করব তা হলে?

Advertisement

নিউ টাউনের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। রবিবার কলেজ ছুটি। বিকেলে শিবপুরের বাড়ি থেকে মোটরবাইকে যাচ্ছিলাম নিউ টাউন। ওখানে পেয়িং গেস্ট থাকা এক বন্ধুকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা জরুরি বই পৌঁছে দিতে।

বাইক চালানোর সময়ে আমি সতর্ক থাকি। মাথায় তাই ছিল ফুল মাস্ক হেলমেট। পার্ক সার্কাস থেকে চিংড়িঘাটার দিকে যাওয়ার পথে উড়ালপুল তখন প্রায় ফাঁকা। সামনে-পিছনে তেমন গাড়ি ছিল না। ফাঁকা রাস্তায় বেশ নিশ্চিন্ত মনেই এগোচ্ছিলাম। বন্ধুর কাছে পৌঁছনোর তাড়া ছিল না। তাই ফাঁকা উড়ালপুলে সাধারণত যতটা জোরে লোকে মোটরবাইক ছোটায়, তার চেয়ে কম গতিতেই চালাচ্ছিলাম আমি। কত হবে? ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের আশপাশে। আর সেই কম গতিতে চলাটাই রবিবার আমার প্রাণে বেঁচে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

Advertisement

কেটে যাওয়া ব্যাগ।

সায়েন্স সিটির কিছুটা আগে গলায় তীব্র জ্বালা অনুভব করলাম। গলায় হাত দেওয়া মাত্রই বুঝলাম, সুতোর মাঞ্জার ধারে কেটে গিয়ে গলা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে ঝরঝর করে। মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, বাঁচতে গেলে বাইক চালাতে চালাতেই সুতোটা ছুড়ে ফেলতে হবে। কারণ, সেতুর উপরে থামতে গেলেই বিপদ! পিছন থেকে কোনও দ্রুত গতির গাড়ি এসে পিষে দেবে আমাকে। আবার সামনেও এগোতে পারছি না। কণ্ঠনালী ফালা ফালা হয়ে যাওয়ার ভয়ে।

অগত্যা চলন্ত অবস্থাতেই মোটরবাইক না থামিয়ে ডান হাত দিয়ে সুতোটা চেপে ধরি। বুঝতে পারি, ধারালো সুতোয় কেটে ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে আমার হাতের তালু, আঙুল। কিছুক্ষণ পরে সুতোটা আচমকা ছিঁড়ে গেল। ততক্ষণে হাতে, গলায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই অবস্থাতেই বাইক চালিয়ে বাকি পথটা পেরিয়ে এসেছিলাম। চিংড়িঘাটার কাছে খোঁজাখুঁজি করে একটা ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করাই। তখন কাঁধে থাকা ব্যাগ আর গায়ের জ্যাকেটটার দিকে চোখ পড়ে। দেখি, ব্যাগের মোটা হাতলটা এমন ভাবে ফালা ফালা করে কাটা যে, মনে হবে কেউ ছুরি চালিয়েছে। জ্যাকেটেরও একই হাল। অর্থাৎ ধারালো সুতো যেখান দিয়েই গিয়েছে, সেখানটাই এমন ভাবে কেটে গিয়েছে।

তার পরেই মনে হল কথাটা। আমি যদি বাইকটা আস্তে না চালাতাম, তবে আমার কণ্ঠনালীটাও কী এ ভাবেই ফালা ফালা হয়ে যেত?

রবিবার সকালে কাগজে পড়েছিলাম ঘটনাটা। শনিবার দক্ষিণ গুজরাতে গলায় ঘুড়ির সুতো আটকে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। বিকেলে ঠিক তেমনটাই আমার সঙ্গে হতে যাচ্ছিল ভেবে এখন শিউরে উঠছি। সত্যিই সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এলাম! ছুরি-টুরি নয়, ঘুড়ির সুতো প্রাণ নিত আমারও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন