কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদেরা আগেই জানিয়েছিলেন ঘরের বাইরেও বংশবিস্তার শুরু করেছে ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা এডিস ইজিপ্টাই। শুধু পরিষ্কার জলই নয়, পুকুর, নর্দমার জলকেও যে তারা ডিম পাড়ার জন্য বেছে নিচ্ছে নিজেদের গবেষণাপত্রে তা-ও জানিয়েছিলেন পতঙ্গবিদেরা। আর এডিস মশার ডিম পাড়ার জায়গা খুঁজে বের করতে গিয়ে একাধিক জলাশয়ে ওই মশার লার্ভা পেলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার কর্মীরা।
পুরসভার খবর, সম্প্রতি ১০ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জলাশয়ে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা মেলে। তার পরে বাকি ওয়ার্ডের জলাশয়েও তা পেয়েছেন পুরকর্মীরা। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বেদিয়াপাড়ার একটি পুকুর, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগান এলাকার বড় ঝিল, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মেলাবাগানের একটি আবাসনের জলাধারে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা পেয়েছেন পুরকর্মীরা। দক্ষিণ দমদমে মোট জলাশয় ১৭৮। সব জলাশয়েই যদি ওই লার্ভা মেলে তা হলে কী ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পুর-কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ভাবে পুরকর্মীদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সেগুলি এডিসেরই লার্ভা। তবুও নিশ্চিত হতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘যে সব জলাশয়ে এডিসের লার্ভা মিলেছে তার পাড় বরাবর মশা মারার তেল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুকুর বা ঝিলের আয়তন তো কম নয়। গোটা জলাশয়ের লার্ভা মারার কাজ কী ভাবে হবে!’’
ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সিনিয়র রিজিওনাল ডিরেক্টর সত্যজিৎ সেন বলেন, ‘‘পুকুরে মশার লার্ভা ধ্বংসে গাপ্পি, গাম্বুশিয়া মাছই মোক্ষম অস্ত্র।’’ কিন্তু পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, বহু জলাশয়ের জল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাতে মাছ ছাড়লেও বাঁচবে না। সেগুলি সংস্কার করে মাছ ছাড়তে যে তহবিল প্রয়োজন তা-ও নেই।
এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘টব, প্লাস্টিকের কাপ, বাটি থেকে জমা জল সরানো এক জিনিস। জলাশয় জুড়ে লার্ভা দমন কি সহজ কাজ?’’ ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যুক্ত কর্মীরা বলছেন, পুকুর বা ঝিলে কচুরিপানা থাকলে মশা মারার ওষুধ দিয়ে লাভ হয় না।
গত সোমবার বারাসতে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ বৈঠকে উদ্বেগের কথা জানান দক্ষিণ দমদমের প্রতিনিধিরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, দক্ষিণ দমদমের ঘটনাকে সামনে রেখে জেলার সবক’টি পুরসভার কাছে জলাশয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছে। পুকুরে পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে জেলার মৎস্য দফতরকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছেন জেলাশাসক। দক্ষিণ দমদমের ১২টি জলাশয় পরিদর্শন করে মৎস্য দফতর জানিয়েছে, নোংরা পুকুরগুলি অবিলম্বে পরিষ্কার করে কাঠা প্রতি দু’কিলো চুন দিতে হবে। মাছের জোগান দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।