জলের নমুনা পরীক্ষায় দূষণ পেল পুরসভা

নিজের বক্তব্যেই দৃঢ় থাকল পুরসভা। জানিয়ে দিল, কলকাতার কয়েকটি এলাকায় পেটের রোগে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তা আন্ত্রিক নয়। আর কলেরা তো নয়ই। ওই রোগ নিছক ডায়েরিয়া বলেই দাবি করছেন পুর-কর্তারা। আর পানীয় জলে দূষণ থেকেই তা ছড়িয়েছে বলে জানাল পুর-প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৩
Share:

পুরসভার কল। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজের বক্তব্যেই দৃঢ় থাকল পুরসভা। জানিয়ে দিল, কলকাতার কয়েকটি এলাকায় পেটের রোগে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তা আন্ত্রিক নয়। আর কলেরা তো নয়ই। ওই রোগ নিছক ডায়েরিয়া বলেই দাবি করছেন পুর-কর্তারা। আর পানীয় জলে দূষণ থেকেই তা ছড়িয়েছে বলে জানাল পুর-প্রশাসন।

Advertisement

গত কয়েক দিনে শহর জুড়ে মোট ২৩৪টি জায়গা থেকে জল নিয়ে পরীক্ষা করে পুরসভা। মঙ্গলবার তার রিপোর্ট প্রকাশ করে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ জানান, এর মধ্যে গোটা কুড়ি নমুনায় জলে দূষণ মিলেছে। তা মূলত পূর্ব ও দক্ষিণ কলকাতার ৩১, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৯, ৬৬, ৬৭ ওয়ার্ডের কয়েকটি স্থানে থাকা স্ট্যান্ড কলে। ওই সব কলের জল দূষণ মুক্ত করতে বলা হয়েছে।

এ দিকে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজ-এর (নাইসেড) অধিকর্তা শান্তা দত্ত মঙ্গলবার দাবি করেন, তাঁর আন্ত্রিক বা পেটের রোগ হয়নি। যদিও সোমবার শান্তাদেবীকে ফোন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার শরীর খুব খারাপ। ‘পেটের অসুখের’ বাড়াবাড়ি হয়েছে।’’

Advertisement

সম্প্রতি টানা বৃষ্টির পরে শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেক জায়গাতেই রাস্তার ধারে থাকা পানীয় জলের কল ডুবে ছিল জমা জলে। কোথাও বা নিকাশির পাইপ ভেঙে পানীয় জলের সঙ্গে নোংরা জল মিশে যাওয়ারও অভিযোগ ওঠে। তার পরেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়েরিয়া আক্রান্তের খবর আসতে থাকে। বমি-পায়খানার উপসর্গ নিয়ে বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার লাইন পড়ে যায় রোগীদের। তবে ওই ঘটনার পরে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছিলেন, জলে দূষণ রয়েছে এমন কোনও অভিযোগ তাঁর দফতরে আসেনি। তা সত্ত্বেও বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী যাঁরা কলকাতার বাসিন্দা, তাঁদের তালিকা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন তিনি। তা নিয়েই শহরের বিশেষ কিছু এলাকার জল পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য দফতর।

জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক জানান, এমনিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় থাকা কলের জল নিয়মিত ভাবে ক্লোরিন দিয়ে দূষণ মুক্ত করা হয়। এ বার বৃষ্টির ফলে অনেক জায়গায় রাস্তার ধারে থাকা কল ডুবে গিয়েছিল। জল পরীক্ষার পরে দেখা যাচ্ছে সে রকমই কিছু কলের জলে দূষণ মিলেছে এবং তা থেকে কিছু বাসিন্দার পেটের রোগ ছড়িয়েছে বলে মনে করছে পুরসভা। তবে তা নিছকই ডায়েরিয়া। তাকে আন্ত্রিক বা কলেরা বলতে রাজি নন অতীনবাবুরা। যদিও নাইসেড-কতৃর্পক্ষ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আই ডি হাসপাতালে ভর্তি থাকা বেশ কিছু রোগীর মল পরীক্ষা করে কলেরার জীবাণু মিলেছে। এ দিন অতীনবাবু বলেন, ‘‘নাইসেড পুরসভাকে এমন কোনও রিপোর্ট দেয়নি।’’ এক স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, আই ডি হাসপাতালও একে ডায়েরিয়া বলেই জানিয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, গত দশ দিনে শহর জুডে় প্রায় ১১০০ জনের পেটের রোগ হয়েছে। অনেকেরই বাড়িতেই সেরে গিয়েছে। হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন, অনেকেই ফিরে এসেছেন বাড়িতে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ৪১ জন। অতীনবাবু জানান, এ দিন থেকে শহর জুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর যে সব কলের জলে দূষণ মিলেছে, তা দূষণমুক্ত করার কাজও শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন