Rooftop Restaurants’ in Kolkata

শারদোৎসবের আগে রুফটপ রেস্তরাঁ খোলার অনুমতি মিলল, একগুচ্ছ শর্ত দিল পুরসভা

গত ২৯ এপ্রিল বড়বাজারের একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শিশু-সহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পর নবান্নের নির্দেশে কলকাতার সমস্ত রুফটপ ক্যাফে ও রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দমকল ও পুরসভার রিপোর্টে উঠে আসে, বহু রেস্তরাঁ বেআইনি ভাবে ছাদে গড়ে উঠেছিল, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না, জরুরি নির্গমনপথও বন্ধ ছিল। ফলে শহরে আতঙ্ক ছড়ায়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ১৯:৫৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শহর জুড়ে রুফটপ রেস্তরাঁগুলি ফের চালু করার অনুমতি পেল। তবে সেই অনুমতি এসেছে একাধিক শর্তে। পুজোর মুখে সাধারণ মানুষের ভিড়, খাদ্যরসিকদের চাহিদা এবং বিপুল সংখ্যক কর্মীর জীবিকা মাথায় রেখে কলকাতা পুরসভা রুফটপ রেস্তরাঁ খোলার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিল। বুধবার কলকাতা পুরসভায় বৈঠক শেষে এই ঘোষণা করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “অগ্নি-নিরাপত্তা বিধি মেনেই ছাদের রেস্তরাঁ চালানো যাবে। কোনও অবস্থাতেই আইনভঙ্গ মেনে নেওয়া হবে না।”

Advertisement

গত ২৯ এপ্রিল বড়বাজারের একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শিশু-সহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পর নবান্নের নির্দেশে কলকাতার সমস্ত রুফটপ ক্যাফে ও রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দমকল ও পুরসভার রিপোর্টে উঠে আসে, বহু রেস্তরাঁ বেআইনি ভাবে ছাদে গড়ে উঠেছিল, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না, জরুরি নির্গমনপথও বন্ধ ছিল। ফলে শহরে আতঙ্ক ছড়ায়। একাধিক ক্ষেত্রে বেআইনি ছাদের অংশ ভাঙার অভিযানে নামে পুরসভা। যদিও বাস্তবিক কারণে মাসের পর মাস রুফটপ রেস্তরাঁ বন্ধ রাখা সম্ভব ছিল না, কারণ এগুলির সঙ্গে বহু মানুষের রুজিরুটি জড়িত।

অগ্নিকাণ্ডের পর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়। বুধবার সেই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কলকাতা পুরপ্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন মেয়র ফিরহাদ, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা, কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈন প্রমুখ। তাঁরা যৌথ ভাবে একটি অভিন্ন নির্দেশিকা (এসওপি) তৈরিতে সম্মতি দেন, যাতে রাজ্য জুড়েই রুফটপ রেস্তরাঁর জন্য অভিন্ন নীতিমালা কার্যকর হয়।

Advertisement

বুধবার পুরসভায় বৈঠক শেষে মেয়র জানান, রুফটপ রেস্তরাঁ চালানোর ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত মানা বাধ্যতামূলক। প্রথমত, ছাদের ৫০ শতাংশ অংশ খালি রাখতে হবে। শুধুমাত্র বাকি ৫০ শতাংশ অংশে রেস্তরাঁ চালানো যাবে। দ্বিতীয়ত, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে যে রাস্তা দিয়ে দমকলের হাইড্রোলিক মই উঠবে, সেই জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। তৃতীয়ত, সিঁড়ি ও নির্গমনপথ সবসময় খালি রাখতে হবে। চতুর্থত, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ফায়ার অডিট করিয়ে তার প্রতিবেদন দমকল বিভাগে জমা দিতে হবে। পঞ্চমত, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র মাইক্রোওয়েভ, বৈদ্যুতিক ওভেন ব্যবহার করতে হবে। ষষ্ঠত, ছাদ কোনও অবস্থায় বিক্রি করা যাবে না। ছাদকে ভবনের সাধারণ জায়গা হিসাবেই ব্যবহার করতে হবে। সপ্তমত, নতুন ভবনের ক্ষেত্রে ছাদে রেস্তরাঁ তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে না।

শর্ত আরোপের পাশাপাশি মেয়র বলেন, “শহরের মানুষ ছাদে বসে খেতে ভালোবাসেন। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই শর্ত মেনেই ছাদের রেস্তরাঁ চালাতে হবে। কেউ নিয়মভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তে এক দিকে যেমন খাদ্যরসিকদের আনন্দ ফিরবে, তেমনি কর্মসংস্থান রক্ষা হবে। কারণ বহু কর্মী রুফটপ রেস্তরাঁ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন ছিলেন। অগ্নিবিধি মেনে চললে শহরে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। অগ্নিকাণ্ডের মর্মান্তিক ঘটনার পর শহরে নিরাপত্তা ও উন্নত অবকাঠামোর চাহিদা ছিল প্রবল। এ বার শর্তসাপেক্ষে রুফটপ রেস্তরাঁ খোলার অনুমতি সেই চাহিদা পূরণ করল। এক দিকে শারদোৎসবের আগে মানুষের আনন্দ, অন্য দিকে নিরাপত্তা বিধি—দু’টিকেই সমান গুরুত্ব দিয়েছে পুরসভা। ফলে উৎসবের মরসুমে কলকাতার আকাশছোঁয়া ছাদ ফের ভরবে আলো, গানে আর আড্ডায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement