দিল্লিতে ‘ভর্ৎসিত’ পুরসভা

সংসদের শ্রম বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডাক ‘উপেক্ষা’ করায় অপদস্থ হতে হল কলকাতা পুর প্রশাসনকে। সেখানে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল পুর কমিশনারকে। কিন্তু তিনি না গিয়ে পুরসভার অন্য প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিলেন। তাতেই বেজায় চটেছেন স্ট্যান্ডিং কমিটির কর্তারা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সংসদের শ্রম বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডাক ‘উপেক্ষা’ করায় অপদস্থ হতে হল কলকাতা পুর প্রশাসনকে। সেখানে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল পুর কমিশনারকে। কিন্তু তিনি না গিয়ে পুরসভার অন্য প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিলেন। তাতেই বেজায় চটেছেন স্ট্যান্ডিং কমিটির কর্তারা। কেন পুর কমিশনার ওই বৈঠকে যোগ দেননি, তার কারণ জানতে চাওয়া হয়। একই কারণে ওই স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে ভর্ৎসিত হতে হয়েছে গ্রেটার মুম্বই পুর প্রশাসনকেও। সেখানে আবার মুম্বই পুরসভার পক্ষে হাজির হয়েছিলেন যুগ্ম পুর কমিশনার। তবু ছাড় মেলেনি। গত বুধবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে সংসদ ভবনের অ্যানেক্সে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। নির্দেশ না মানায় কলকাতা এবং মুম্বই পুর প্রশাসনের প্রতিনিধিদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।

Advertisement

কেন ডাকা হয়েছিল ওই বৈঠক?

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের চারটি পুরসভায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশদ তথ্য জানতে ওই স্ট্যান্ডিং কমিটি ২৬ এপ্রিল বিকেলে একটি বৈঠক ডেকেছিল। তাতে দিল্লির তিনটি পুরসভা-সহ কলকাতা, গ্রেটার মুম্বই এবং গ্রেটার চেন্নাই পুর প্রশাসনের কমিশনারদের হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের ডিরেক্টর অনিতা বি পণ্ডা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়বস্তু জানিয়ে ওই ৬টি পুরসভার পুর কমিশনারদের কাছে চিঠি পাঠান। কলকাতা
পুরসভাতেও বৈঠকের আগেই তা পৌঁছয়। তাতে জানতে চাওয়া হয়, অস্থায়ী, ক্যাজুয়াল এবং স্যানিটারি কাজের জন্য কত সংখ্যক অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে? তাঁরা প্রভিডেন্ট ফান্ড, এএসআই পাচ্ছেন কি? ওই সমস্ত রিপোর্ট নিয়ে পুর কমিশনারকে বৈঠকে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। ওই চিঠি পাওয়ার পরেই কলকাতা পুরসভায় তথ্য সংগ্রহে তোড়জোড় পড়ে যায়। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, কলকাতা পুরসভায় অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি। তড়িঘড়ি তথ্যভাণ্ডারও তৈরি করা হয় বলে পুর কর্তাদের দাবি।

Advertisement

আরও পড়ুন...
নর্দমা থেকে বৃদ্ধকে উদ্ধার করল পুলিশ

পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ২৬ এপ্রিল বিকেলের ওই বৈঠকে যোগ দিতে পুরসভার পার্সোনেল দফতরের দুই অফিসার ভাস্কর ঘোষ এবং অমিতাভ বড়ুয়াকে পাঠানো হয়। সংসদের শ্রম দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ৩১ জন। চেয়ারম্যান মুম্বই উত্তর পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ কিরিট সোমাইয়া। তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন এবং সিপিএমের তপন সেনও এই কমিটির সদস্য।

কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে পুর কমিশনারকে ডাকা হলেও কেন তিনি হাজির হননি, তা জানতে চাওয়া হয় মুম্বইয়ের প্রতিনিধির কাছে। বলা হয়, কে আপনি? কলকাতার দুই অফিসারকেও বলা হয়, পুর কমিশনার যে আসতে পারবেন না, তা আগে কেন জানানো হয়নি? তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে বলা হয়, ‘‘পুর কমিশনারকে আসতে বলবেন।’’

তবে তৃণমূল সাংসদ তথা ওই স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য দোলা সেনের দাবি, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই বৈঠকের আগে আরও একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা ছিল। সেই আলোচনা সারতে দেরি হওয়ায় ৬টি পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে পরের বিষয়টি শুরু করা যায়নি। অন্য দিনক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’’ তবে পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু পুর কমিশনারের অনুপস্থিতি নিয়ে নয়, নথিপত্র ঠিকঠাক করে নিয়ে আসার কথাও ওই দু’জন অফিসারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কার ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, পদ্ধতি মেনে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে হাজির হওয়ার চেষ্টা করবেন।

এ বিষয়ে রাজ্যেরই আর এক সাংসদ, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে থাকাকালীন একাধিক বৈঠকে রাজ্যের স্বরাষ্ট সচিবদের ডাকা হয়েছিল। তাঁদের বদলে অন্য কোনও অফিসার হাজির হলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এটাই দস্তুর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন