হিলারির কচিকাঁচা সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
একেবারে ভেঙে পড়েছে সুহাসিনী। মর্ডান হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। হিলারি ক্লিন্টনের একনিষ্ঠ ভক্ত। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হিলারিকে ক্রমশ পিছিয়ে আসতে দেখে শেষমেশ আর কান্না ধরে রাখতে পারল না সুহাসিনী দাশগুপ্ত। আমেরিকান সেন্টারের এককোণে কাঁচুমাচু মুখে ছলছল চোখে তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না ঊর্মি বসু। যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এ শহরে দীর্ঘ ষোলো বছর কাজ করছেন। সুহাসিনীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে সটান জড়িয়ে ধরলেন তাকে। হিলারির আর এক সমর্থককে কাছে পেয়ে যেন আরাম পেল সুহাসিনী। মিডিয়ার প্রশ্নের মুখে বলল, “সেই মার্চ থেকে আমি হিলারির রাজনৈতিক পথচলার দিকে নজর রাখছি। সি ইজ আ ফাইটার। পুরুষতন্ত্রের ছায়ায় এত দিন থেকেও নিজের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। হেরে গেলেও তিনি লড়াই ছাড়বেন না। আমার মতে, হিলারি দুনিয়ার সব মেয়েদের কাছে অনুপ্রেরণা।”
ভোরবেলাতেই পার্ক স্ট্রিটের আমেরিকান সেন্টারের মিডিয়া রুমে থিকথিকে ভিড়। হোয়াইট হাউসে আগামী চার বছর কার ঠাঁই হয় তা জানতে শহরের উৎসাহী মানুষজন তো রয়েইছেন। সঙ্গে হাজির সুদূর নিউ ইয়র্ক থেকে এ শহরে পা রাখা মানবাধিকার কর্মী। নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দা অধুনা কলকাতায় ডিজাইনার হিসেবে কাজ করা যুবতী থেকে শুরু করে শহরের নামজাদা ব্যবসায়ী, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।
সুহাসিনীর মতো একই সুর শোনা গেল ঊর্মি বসুর কণ্ঠেও। টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস থেকে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার পর সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “হিলারির হেরে যাওয়াটা একটা বিপর্যয়। অবিশ্বাস্য! আই অ্যাম শক্ড!” হিলারির মতোই কট্টর ট্রাম্প সমর্থকেরও দেখা মিলল। অভীক সরকার। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। ট্রাম্পের এক একটা ইলেক্টোরাল কলেজ পকেটস্থ করার খবরে সশব্দে হাততালি দিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল। বিতর্কিত অতীত সত্ত্বেও ট্রাম্পের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে অভীকের। অভীকের মন্তব্য, “বিদেশসচিব হিসেবে হিলারির সাফল্য একেবারেই বলার মতো নয়। অন্য দিকে, ট্রাম্প নিজের কেরিয়ারে কিন্তু এক জন সফল ব্যবসায়ী। প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন মুলুকে সাফল্য আনতে পারবেন ট্রাম্পই।” তবে হিলারিকে ঘিরে এত উল্লাস কেন? অভীকের সোজাসাপটা জবাব, “২০০৮ বা ’১২-তে বারাক ওবামাকে সমর্থন না জানালে যেমন বর্ণবিদ্বেষী তকমা লাগার ভয় ছিল, এ বারেও তাই! হিলারিকে সমর্থন না করলে যেন নারীবিরোধী ছাপ লেগে যাবে আপনার ওপরে।” সত্যিই কি তাই? নেদারল্যান্ডের ফুটওয়্যার ডিজাইনার শার্লট অবশ্য একমত নন। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র নারী বলেই হিলারি সমস্ত লাইমলাইট পাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। উল্টে মহিলা বলে রাজনীতির ময়দানে তাঁর সুযোগ অনেক কম।” শার্লটের কথাকেই সায় দিলেন হেনলি গঞ্জালেস। নিউ ইয়র্কের হিসপানিক হেনলি শার্লটের বয়ফ্রেন্ড। ভারতে আসেন প্রায়শই। প্রায় বছর ছয়েক ধরেই এ দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। হেনলি বলেন, “লিঙ্গসাম্যের প্রশ্নে আমেরিকা এখনও পিছিয়ে। মার্কিন সমাজ এখনও পিতৃতন্ত্রের ছায়ায় রয়েছে। দুনিয়ার নানা প্রান্তে ঘুরলে দেখা যাবে, এশীয় দেশগুলি কিছু ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। আমেরিকার অনেক আগেই মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করেছেন তারা।”
হিলারি-ট্রাম্পের দ্বৈরথে অবশ্য বেশ সাবধানী জবাব কলসাল জেনারেল ক্রেগ হলের। প্রোটোকলের কারণে ব্যক্তিগত মতামত জানাতে পারবেন না। নির্বাচন যত এগিয়েছে ট্রাম্পকে ঘিরে বিতর্ক ততই জোরদার হয়েছে। ক্রেগ বলেন, “শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প-হিলারির এই লড়াই আদতে গণতন্ত্রের জয়। ভেবে দেখুন, এটা বেশ মজার!” তবে ল্যান্ড অব লিবার্টি অ্যান্ড ইকুয়ালিটির পাড় থেকে এক জন মহিলা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে পেতে এত দেরী হল কেন? ক্রেগের যুক্তি, “১৯২০ পর্যন্ত আমেরিকায় তো মহিলাদের ভোটাধিকারই ছিল না। সে দিক থেকে দেখলে আমরা জাতি হিসেবে অনেক পথ পেরিয়েছি। আমেরিকাতেই ধীরে ধীরে সমাজ বদলাচ্ছে। নারী বা পুরুষ নন, যে কোনও মার্কিন নাগরিক যে রাজনাতিক পরিবর্তনে অংশ নিতে পারছেন, সেটাই আসল কথা।”
আরও পড়ুন
পাকিস্তানকে বাগে আনতে এ বার মাঠে নামবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প?