Durga Puja 2025

শারদোৎসব শেষ! দশমীতে দুর্গা বিসর্জনে প্রস্তুত কলকাতা, পুরসভা এবং পুলিশের বিশেষ বন্দোবস্ত ঘাটে ঘাটে

কলকাতা পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, শহরের পাঁচটি ঘাটকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে— খিদিরপুরের দহিঘাট, বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট, কুমোরটুলি এবং বাজেকদমতলা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:০০
Share:

বাড়ির প্রতিমা বিসর্জনে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

বৃহস্পতিবার বিজয়াদশমী। পুজোশেষের দিন শহর জুড়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। প্রতি বছরই এই দিনে ঘাটগুলিতে উপচে পড়া ভিড় জমে যায়, হাজার হাজার প্রতিমা নিয়ে পৌঁছোন বাড়ির পুজো থেকে শুরু করে বারোয়ারি পুজোর উদ্যোক্তারা। সঙ্গে থাকেন হাজার হাজার ভক্ত। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নেই। কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে তাই বিসর্জন উপলক্ষে জোরদার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

Advertisement

ঘাট ও বিসর্জন স্থান

কলকাতা পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, শহরের পাঁচটি ঘাটকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে— খিদিরপুরের দহিঘাট, বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট, কুমোরটুলি এবং বাজেকদমতলা। বাজেকদমতলা, নিমতলা এবং জাজেস ঘাটে প্রতি বছরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিরঞ্জন হবে বলে অনুমান। পুরসভা ইতিমধ্যেই এই ঘাটগুলিতে আলাদা আলাদা দল গড়ে তুলেছে, যারা বিসর্জনের দিন থেকে রাত পর্যন্ত টহল দেবে। প্রতিটি ঘাটে ক্রেন, অস্থায়ী আলোকসজ্জা, লাইফবোট, ডুবুরিদল ও বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বড় পুজোগুলির পাশাপাশি ছোট বারোয়ারি পুজো বা বাড়ির ঠাকুরের বিসর্জন নিয়েও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেখানে স্থানীয় পুকুর বা জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে, সেখানে নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বাড়তি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত ছোট পুকুরে প্রতিমা নামানোর সময় দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্লাব কর্তাদের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ রুট ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। মোট ২৩৮টি রুটকে নজরদারি রুট হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ঘাটে বিপর্যয় মোকাবিলা দল থাকবে, সঙ্গে থাকবে মাঝি, লাইফ সেভিং বোট ও ডুবুরি। পুলিশ সূত্রে খবর, বিজয়াদশমীর দিন প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিমা নিরঞ্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় হাজার হাজার পুলিশকর্মী ডিউটিতে থাকবেন। একই সঙ্গে পুলিশের নজর থাকবে প্রতিমার অলঙ্কার নিয়েও। শহরের ১৩টি বড় মণ্ডপে প্রতিমার গায়ে থাকা সোনার-রুপোর গয়নাগুলি রক্ষার জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতিটি মণ্ডপে দু’জন রাইফেলধারী পুলিশকর্মী এবং অন্তত দু’টি সিসিটিভি ক্যামেরা রাখা হয়েছে।

বিজয়াদশমীর শোভাযাত্রায় ডিজে বাজানো বা অতিরিক্ত শব্দদূষণের অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অতীতে এমন ঘটনায় বারবার সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই এ বার কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।

যান চলাচল ও নজরদারি

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশেষত ধর্মতলা, শিয়ালদহ, বেলেঘাটা, খিদিরপুর, বালিগঞ্জ এবং হাওড়া সংলগ্ন রাস্তাগুলি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, বিকল্প রুট আগে থেকেই প্রকাশ করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বিভিন্ন ঘাটে। পাশাপাশি হাই মাস্ট আলো বসানো হয়েছে, যাতে রাতের অন্ধকারে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। ভিড় সামলাতে প্রতিটি ঘাটে পুলিশ, পুরসভাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদল মোতায়েন থাকবে।

প্রশাসনের বার্তা

কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়েছে— শান্তিপূর্ণ ভাবে বিসর্জন সম্পন্ন করুন। অযথা ভিড় তৈরি বা শোভাযাত্রায় বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় নদীর পারে প্লাস্টিক বা ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যবহার না করার আবেদন জানানো হয়েছে। শহর জুড়ে উৎসবের আমেজ থাকলেও কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য— দুর্ঘটনামুক্ত ও সুষ্ঠু বিসর্জন। বিজয়াদশমীর এই দিনে তাই গঙ্গার ঘাট থেকে শহরের রাস্তাঘাট সর্বত্রই থাকবে কড়া নিরাপত্তা, যাতে দুর্গাবিদায়ের মুহূর্তে ভক্তেরা নিশ্চিন্তে অংশ নিতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement