দ্বিধা: পণ্ডিতিয়া রোডের দু’ধারে এই গাছগুলি কাটার প্রস্তাব নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
রাস্তা চওড়া করতে কাটা পড়বে ১১টি গাছ। খোদ কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদের ওয়ার্ডেই। কিন্তু তার পরিবর্তে নতুন গাছ কোথায় লাগানো হবে, তা নিয়ে ফাঁপরে পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডের একাংশে রাস্তার সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভার রাস্তা দফতর। কিন্তু সেখানে পথ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পথের ধারের কয়েকটি বড় গাছ। তাই এ ব্যাপারে পুরসভার উদ্যান দফতরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানিয়েছে পুরসভার রাস্তা দফতর। গাছ কাটার পরে তার পরিবর্তে বনসৃজন কতটা হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই দানা বেধেছে বিতর্ক। কারণ পরিবেশবিদদের একাংশের আশঙ্কা, পরিপূরক বনসৃজন অনেক ক্ষেত্রেই জায়গার অভাবে শহরে করা যায় না।
ঘটনাচক্রে, কলকাতা পুরসভার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের যে এলাকার রাস্তা সম্প্রসারণ নিয়ে এহেন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানকার কাউন্সিলর দেবাশিস কুমার নিজেই পুরসভার উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ। তিনি বলছেন, ‘‘এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটা ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই।
বন দফতরের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত নিয়ম মেনেই পরিপূরক গাছ লাগানো হবে।’’ উদ্যান দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ওই এলাকায় যে সমীক্ষা করা হয়েছে সেখানে পরিপূরক বনসৃজন করার মতো কোনও জায়গা পাওয়া যায়নি। সেই কারণে বন দফতরের নিয়ম মেনে এলাকার পাঁচ কিলোমিটার মধ্যে বিকল্প জায়গার সন্ধান চলছে। গোটা বিষয়টি বন দফতরের কাছে অনুমতির জন্য পাঠানো হবে। অনুমতি পেলেই পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে উদ্যান দফতর সূত্রের খবর।
পুরসভার রাস্তা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পণ্ডিতিয়া রোডে একটি পুরনো গ্যারেজ সংলগ্ন রাস্তার উপরেই গাছ থাকায় ওই অংশে রাস্তাটি চওড়ায় ছোট হয়ে গিয়েছে। তাই রাস্তা চওড়া করতে গেসে গাছ কাটা ছাড়া আর উপায় নেই। রাস্তা সম্প্রসারিত হলে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সুবিধা হবে না বলে দাবি করেছেন তিনি।
কিন্তু গাছ কাটার পরে আদৌ পরিপূরক গাছ লাগানো হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তিনি জানাচ্ছেন, রাস্তার মত কোনও জরুরি পরিষেবার খাতিরে গাছ কাটতে হলে তার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গাছ লাগানোই নিয়ম। সাধারণত একটি বড় গাছ কেটে ফেলা হলে তার পরিবর্তে পাঁচটি চারাগাছ লাগানোর কথা বলা হয়। যাতে যে পরিমাণ অক্সিজেন ওই কাটা গাছগুলি থেকে তৈরি হত, সেই পরিমাণ অক্সিজেনই পরিপূরক গাছ থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে গাছ কাটা হলেও তার বদলে পরিপূরক গাছ বসানো হয় না বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সুভাষবাবু।