রং লাগবে ১,৩০,০০০ লিটার!

বিশ্বের সব চেয়ে বড় ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক, টালার জলাধার রং করতে এই পরিমাণ রংই লাগতে চলছে। কলকাতা পুরসভার প্রাথমিক হিসেব অন্তত তেমনটাই বলছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:২৯
Share:

কর্মযজ্ঞ: টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার লিটার!

Advertisement

বিশ্বের সব চেয়ে বড় ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক, টালার জলাধার রং করতে এই পরিমাণ রংই লাগতে চলছে। কলকাতা পুরসভার প্রাথমিক হিসেব অন্তত তেমনটাই বলছে। ২০১৪ সালে হাওড়া সেতু রং করতে লেগেছিল প্রায় ২৬ হাজার লিটার সীসাহীন রং। পুরসভা সূত্রের খবর, টালা ট্যাঙ্ক রং করার প্রাথমিক পর্বের কাজ আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে। ট্যাঙ্কের ভিতরে ‘ফুড গ্রেড’ মরচে নিরোধক রং ও বাইরে অতিবেগুনি রশ্মি নিরোধক রং করা হবে। আপাতত তারই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি চলছে। ভিতরে ধূসর রং করা হলেও বাইরে কী রঙের প্রলেপ দেওয়া হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি বলেই পুরসভা সূত্রের খবর।

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোনও ট্যাঙ্কের জন্য এই পরিমাণ রং এক ‘রেকর্ড’। ২৬ হাজার লিটার রং দিয়ে হাওড়া সেতু রাঙাতে সময় লেগেছিল প্রায় সাত মাস। টালা ট্যাঙ্কের জন্য রঙের প্রয়োজন ঠিক তার পাঁচ গুণ। কত দিন সময় লাগতে পারে, তা এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।

Advertisement

শতাব্দীপ্রাচীন ওই ট্যাঙ্কের সংস্কারের কাজ চলছে। ভিতরে যে চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে, তার একটি বন্ধ করে চলছে কাজ। আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ব্রিটিশরা পরিকল্পনা করেই ট্যাঙ্কের ভিতরে চারটি প্রকোষ্ঠ তৈরি করেছিল, যাতে প্রয়োজনে একটি বন্ধ করা হলেও জল সরবরাহ চালু থাকে।

টালা ট্যাঙ্কের ভিতরে যেখানে জল থাকে, সেখানে ফুড গ্রেড মরচে নিরোধক (অ্যান্টি-করোশন) রং করা হবে। এর জন্য তামিলনাড়ুর ‘সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রো কেমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিইসিআরআই)-এর পরামর্শ মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার প্রতিনিধিদল টালা ট্যাঙ্ক দেখে গিয়েছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘সিইসিআরআই যেমন বলছে, সে ভাবেই এগোনো হচ্ছে।’’ পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, ট্যাঙ্কের বাইরের অংশে অতিবেগুনি রশ্মি নিরোধক রঙের প্রলেপ দেওয়া হবে। ৮৫০০ টন লোহা দিয়ে যখন এই বিশালাকার ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল, তখন যে রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল, তা অতিবেগুনি রশ্মি নিরোধক ছিল না। তবে পুরকর্তারা জানান, বাইরে রঙের কাজ শুরু হতে অন্তত বছর দেড়েক দেরি আছে।

টালা ট্যাঙ্কের ভিতরের প্রকোষ্ঠ রং করা হবে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে। প্রথমে ভিতরের দেওয়ালে যত নোংরা, মরচে জমেছে, তা পরিষ্কার করা হবে। তার পরে শটগান দিয়ে দেওয়াল রং করার কাজ শুরু হবে।

তথ্য বলছে, সেই আমলে ট্যাঙ্ক নির্মাণের জন্য প্রায় ৮৫০০ টন লোহা সেই সুদূর ম্যাঞ্চেস্টার থেকে জাহাজে করে আনা হয়েছিল। মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত ওই ট্যাঙ্ক আক্ষরিক অর্থেই এক বিস্ময়! সল্টলেক স্টেডিয়ামের মাপ হল ২৮০ ফুট বাই ২৮০ ফুট। সেখানে টালা ট্যাঙ্কের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাপ ৩২১ ফুট বাই ৩২১ ফুট! অর্থাৎ, ফুটবল মাঠের থেকেও আয়তনে বড় ওই জলাধার! ২১৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে দাঁড়ানো ট্যাঙ্কটির উচ্চতা ২০ ফুট।

জনশ্রুতি বলছে, শুরুর দিকে নাকি এই জল খেতে চাননি শহরবাসী। কারণ, তখন ধারণা ছিল, গঙ্গার জল পবিত্র। সেই জল মেশিন ও পাইপের ভিতর দিয়ে আসার ফলে তার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! পাঁচ বছর তাই টালা ট্যাঙ্কের জল ব্রাত্যের তালিকায় ছিল। ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত বোঝাতে পেরেছিল যে, টালা ট্যাঙ্কের জল ব্যবহার না করে উপায় নেই। সে দিন থেকে এখনও পর্যন্ত টালা ট্যাঙ্কের জল সত্যিই প্রাণবিন্দুসম! উত্তর ও মধ্য তো বটেই, ভবানীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এই প্রাণধারা। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘রঙের প্রলেপ পড়তে চলেছে। এটা একটা ঐতিহাসিক কাজ নিঃসন্দেহে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন