Child Abuse Sexual Harrassment

‘যৌন নিগ্রহ’ বাড়িতে, মামলা এক যুগ পরে

ওই কিশোরী বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৩ এপ্রিল ‘চাইল্ড লাইন’-এর ওয়েবসাইটে সে লিখিত অভিযোগ জানায়, তার পর ফোন করে ওই সংস্থার কর্মীদের মৌখিক ভাবে ঘটনার বিবরণও দেয়। 

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়  ও শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:৩৪
Share:

বারো বছর আগে নিজের দাদা তাকে যৌন নিগ্রহ করেছিল বলে অভিযোগ জানিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ষোলো বছরের এক কিশোরী। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল চার, আর তার দাদার নয়। তার দাবি, অভিভাবকদের সেই সময় সব জানালেও তাঁরা বিষয়টি চেপে যান।

Advertisement

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গত ২৫ এপ্রিল পকসো (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে এফআইআর-ও করেছে। কিন্তু প্রায় এক যুগ আগের ঘটনার তদন্তে কী ভাবে এগোনো হবে তা ঠিক করতে বেশ হোঁচট খেতে হচ্ছে তাদের। আইনজীবীদের পরামর্শও নিতে হচ্ছে।

ওই কিশোরী বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৩ এপ্রিল ‘চাইল্ড লাইন’-এর ওয়েবসাইটে সে লিখিত অভিযোগ জানায়, তার পর ফোন করে ওই সংস্থার কর্মীদের মৌখিক ভাবে ঘটনার বিবরণও দেয়।

Advertisement

কলকাতা চাইল্ড লাইনের কর্মী দিলীপ বসুর কথায়, ‘‘২৩ এপ্রিল ওই কিশোরী লিখিত ভাবে জানায়, বারো বছর আগে তার দাদা তাকে যৌন নিগ্রহ করেছিল। ওই ঘটনার ধাক্কা এখনও সে মানসিক ভাবে এতটাই বয়ে বেড়াচ্ছে যে, বেশ কয়েক বার সে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছে। অভিযোগ পেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় জানাই। থানা যথেষ্ট সহযোগিতা করে। ২৫ এপ্রিল পকসো আইনে এফআইআর দায়ের হয়।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, কিশোরীর বাবা ও মা দু’জনেই মনোরোগ চিকিৎসক। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই দাদা এখন সাবালক এবং কলকাতার বাইরে ডাক্তারি পড়ছেন। তদন্তকারীরা জানান, নাবালিকা তাঁদের কাছে দাবি করেছে, ঘটনার পরেই সে তার বাবাকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি, বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেননি। সেই থেকে সে বাধ্য হয়েছে মনের মধ্যে বিষয়টি চেপে রাখতে এবং তিলে-তিলে কষ্ট পেতে। নিগ্রহকারীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতে হয়েছে তাকে। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত তাকে দেখতে হয়েছে।

ওই কিশোরী আরও জানিয়েছে, এখন সে জানে, কোথায়, কী ভাবে অভিযোগ করা যায়, তাই সেটা করেছে। এর পর তদন্তকারীরা তার বাবা-মা দু’জনের সঙ্গেই কথা

বলেন। মায়ের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর তাঁরা এখনও পাননি। আর পুলিশের কাছে তার বাবা দাবি করেছেন, অত পুরনো ঘটনা তার মনে নেই। তা ছাড়া, বাচ্চারা অনেক সময় যা বলে বা মনে করে তা ঠিক হয় না। পুলিশকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা নাবালিকার অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং আদালতে তার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে।

মনোবিদ মোনালিসা ঘোষ ব্যাখ্যা দেন, ছোটবেলার যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা গুরুতর অবসাদ, আতঙ্কের শিকার

হয়েছে এমন অসংখ্য অভিযোগ পান তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘যখন ঘটনা ঘটে তখন ঠিক কী ঘটছে সেটা হয়তো বোঝে না শিশুরা। কিন্তু প্রচণ্ড ভয়, যন্ত্রণা আতঙ্কের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। সেটা দীর্ঘ দিন তাকে তাড়া করে বেড়ায়।

বড় হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে সে বুঝতে পারে তার সঙ্গে আসলে কী হয়েছিল। তাতে তার মানসিক যন্ত্রণা তীব্র হয়।’’ ‘মনসুন ওয়েডিং’ কিংবা ‘হাইওয়ে’-র মতো ছবিতেও দেখানে হয়েছে কী ভাবে ছোটবেলায় বাড়িতেই নিকটাত্মীয়ের দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিল ছোট্ট মেয়েরা। তখন প্রতিবাদ করতে পারেনি। কাউকে বলতে পারেনি। বড় হওয়ার পর সকলের সামনে সেই মানুষগুলোর মুখোশ টেনে খুলেছিল।

রাজ্য শিশু কমিশনের কর্তারা জানিয়েছেন, পকসো আইনে ঘটনা ঘটার বহু দিন পরেও অভিযোগ দায়ের করা যায়। কমিশনের সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে, ছোটরা সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বাড়িতে, পরিচিতদের মাধ্যমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন