নজরদারির ফাঁক গলেই কি ঘটছে দুর্ঘটনা

গত রবিবার রাতে ওই উড়ালপুলের গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে সটান নীচে পড়ে যান এক স্কুটারচালক ও তাঁর সঙ্গী আরোহী। দু’জনেই এখন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

সর্পিল: নজরদারি নেই, এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাই গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে ঘটছে দুর্ঘটনাও। ছবি: সুদীপ ঘোষ

দুর্ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। তবু গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের ‘ঢিলেঢালা নজরদারি’ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Advertisement

গত রবিবার রাতে ওই উড়ালপুলের গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে সটান নীচে পড়ে যান এক স্কুটারচালক ও তাঁর সঙ্গী আরোহী। দু’জনেই এখন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার দুপুরে ঘণ্টা তিনেক ঢুঁ মেরে গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের এক প্রান্তে পুলিশ চোখে পড়লেও অন্য প্রান্তে তাদের দেখা মেলেনি। উ়ড়ালপুলের গার্ডেনরিচ প্রান্তে পুলিশ না থাকায় ওই দিক থেকে মাঝেরহাটের দিকে হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক নিয়ে অবাধে যাতায়াত করতে দেখা গেল চালকদের। কোথাও উড়ালপুলের মাঝ বরাবর গার্ডরেলের গা ঘেঁষে চোখে পড়ল মদের বোতল।

গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের বয়স দেড় মাসও হয়নি। এর মধ্যেই গত রবিবার রাতের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নতুন কেনা স্কুটারে চেপে রাত ন’টা নাগাদ বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন একবালপুরের বাসিন্দা আরাফত সাদিক। বন্ধু সাহেব আলম স্কুটার চালাচ্ছিলেন। পিছনে বসেছিলেন আরাফত। পুলিশ জানিয়েছে, উড়ালপুলের মাঝামাঝি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক গার্ডরেলে ধাক্কা মারেন। স্কুটার থেকে উড়ালপুলের নীচে ছিটকে পড়েন দুই বন্ধু। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আরাফতের মাথায় আঘাতের পাশাপাশি পাঁজরের পাঁচটি হাড় ভেঙেছে। সাহেব আলমের কোমর ভেঙে গিয়েছে। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, নিরাপত্তার স্বার্থে উড়ালপুলটির উপরে দশটি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পুলিশের একাংশের দাবি, ৪.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পথে মাত্র তিনটি স্পিড ব্রেকার রয়েছে। তার উপরে রাস্তার অনেকটাই ভীষণ আঁকাবাঁকা। ফলে সব সময়ে বেপরোয়া বাইকের উপরে নজরদারি সম্ভব হয় না।

আরাফতের কাকা মহম্মদ শাকিল হায়দারের কথায়, ‘‘গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের একাধিক জায়গায় বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। চালকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি উড়ালপুলের দু’প্রান্তে ২৪ ঘণ্টা কড়া পুলিশি নজরদারি প্রয়োজন।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক চালকদের ‘দাদাগিরি’ নতুন নয়। তার উপরে হেলমেটহীন মোটরবাইক চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নমনীয়তার’ অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘উড়ালপুলের দু’প্রান্তে চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি না থাকলে আগামী দিনে এই উড়ালপুলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।’’

ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘উড়ালপুলের দু’প্রান্তে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব নয়। তবে সন্ধ্যা সাতটা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে।’’ ডিসি (ট্র্যাফিক) আরও জানান, গত রবিবারের দুর্ঘটনার পরে সন্ধ্যা সাতটা থেকে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ওই উড়ালপুলে মোটরবাইক-স্কুটার উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। আগে রাত দশটা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এই নিয়ম চালু ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের ‘নির্মাণগত সমস্যা’ নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘উড়ালপুলের দীর্ঘ পথে একাধিক বিপজ্জনক বাঁক থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।’’ রবিবার রাতে দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক দিলীপ কুমার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘উড়ালপুলের যে বাঁক থেকে রবিবার দু’জন পড়ে যান, সেখানে আগেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গার্ডরেল অপেক্ষাকৃত উঁচু হলে স্কুটারচালক ও আরোহী পড়ে যেতেন না।’’

যদিও উড়ালপুলের নির্মাণগত সমস্যার অভিযোগ নস্যাৎ করে কেএমডিএ-র এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘গার্ডরেলের উচ্চতা নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।’’ ওই কর্তার কথায়, ‘‘প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের তলায় বিস্তীর্ণ এলাকায় রেল ও বন্দরের জমি রয়েছে। সে জন্য উড়ালপুলটির পথ আঁকাবাঁকা করতে হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন