Calcutta News

হিমঘরে মিলল ২০ হাজার কেজি, ভাগাড়ের মাংসের জাল শহর জুড়ে!

উদ্ধার মাংসের মধ্যে কুকুরের মাংসও আছে বলে জেরায় স্বীকার করেছে ধৃতরা। ভাগাড় থেকে মাংস এনে প্রথমে কোল্ড স্টোরেজে রাখা হত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৩০
Share:

ভাগাড়ের মরা পশু তুলে এনে তার মাংস বিক্রি যে স্রেফ চুনোপুঁটিদের ‘ছোট কারবার’ নয়, তা ক্রমশ আরও পরিষ্কার হচ্ছে। টন টন এমন মাংস বাজারে ঢোকার আগে রাখা থাকত বেশ আধুনিক ব্যবস্থাপনায়। বজবজের ভাগাড়ের মাংস কাণ্ডে অন্যতম মূল অভিযুক্ত-সহ আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করার পর ভয়ানক সব তথ্য জানতে পারছেন তদন্তকারীরা। খাস কলকাতায় হদিশ মিলল এমন কোল্ড স্টোরেজের, যেখানে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণে মৃত পশুর মাংস উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

উদ্ধার মাংসের মধ্যে কুকুরের মাংসও আছে বলে জেরায় স্বীকার করেছে ধৃতরা। ভাগাড় থেকে মাংস এনে প্রথমে কোল্ড স্টোরেজে রাখা হত। সেখানেই মেশানো হত নানান রাসায়নিক, যাতে পচা মাংসও টাটকার মতো দেখায়। তার পর সেই মাংস প্যাকেট করে পৌঁছে যেত বাজারে। মিশে যেত টাটকা মাংসের সঙ্গে। সেখান থেকেই আম জনতার পাতে পৌঁছে যেত ভাগাড়ের মাংস।

বজবজে ভাগাড়ের মৃত পশুর মাংস কাটতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল বজবজ পুরসভার এক কর্মী-সহ দু’জন। তাদের জেরা করেই পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল, এর পিছনে বড়সড় চক্র রয়েছে। দু’জনকে জেরা করেই জানা গিয়েছিল, রাজাবাজার এলাকায় ভাগাড়ের মাংস সরবরাহ করা হত। সেখান থেকেই টাটকা মাংসর সঙ্গে মিশিয়ে বাজারে সরবরাহ করা হত।

Advertisement

ধৃত পুরকর্মী রাজা মল্লিক, জেরায় সানি মালিক নামে এক ব্যক্তির কথা বলেছিল। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল সানি। শেষ পর্যন্ত বিহারের নওয়াদা থেকে ডায়মন্ডহারবার পুলিশের বিশেষ দল সানিকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করেই, কল্যাণী-জগদ্দল-ট্যাংরা এলাকায় তার আরও ৫ সঙ্গীর খোঁজ পান তদন্তকারীরা।

উদ্ধার করা ভাগাড়ের মাংসের প্যাকেটে রয়েছে ভুয়ো কোম্পানির স্টিকার। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃতরা জেরায় জানায়, শহরতলির একাধিক ভাগাড় থেকে তারা মৃত পশুর মাংস সংগ্রহ করে রাজাবাজারের একটি কোল্ড স্টোরেজে জমা করত। রাজাবাজারের গ্যাস স্ট্রিটে হিন্দুস্থান আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে এক অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার গভীর রাতে হানা দেয় পুলিশ। এই হিমঘরে দুটি গোডাউন ভাড়া নিয়েছিল অভিযুক্তরা। সেই গোডাউন থেকে প্রায় হাজার প্যাকেট ভাগাড়ের মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রত্যেকটি প্যাকেট ২০ কেজির।

রাজাবাজারের এই হিমঘরেই মজুত ছিল ২০ টন ভাগাড়ের মাংস। —নিজস্ব চিত্র।

ডায়মন্ডহারবারের পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও জানান“বজবজ ছাড়াও, সোদপুর,সোণারপুর এবং ধাপার ভাগাড় থেকে মাংস সংগ্রহ করা হত।কোনও এলাকায় পশু মরলেই এই চক্রকে খবর দেওয়ার জন্য ভাড়া করা লোক থাকত। তাদের কাছ থেকে খবর পেলেই পৌঁছে যেত লোক।”

পুলিশের দাবি, ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে, কলকাতা এবং শহরতলি ছাড়াও, হাওড়া ও হুগলির একাধিক জায়গায় এই মাংস সরবরাহ করা হত। তদন্তকারীদের ধারণা, জাতীয় সড়কের ধারের ধাবাগুলিতে এই মাংস পাঠানো হত। এ ছাড়াও, বাজারে যে প্যাকেট করা ফ্রোজেন মাংস বিক্রি হয়, সেখানেও এই মৃত পশুর মাংস মেশানো হত। তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই উদ্ধার মাংসের নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। “ফরেনসিক পরীক্ষায় বোঝা যাবে, কোন পশুর মাংস এবং কতদিন আগে সেই পশুর মৃত্যু হয়েছিল।”- বলেন এক পুলিশকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন