বাঘাযতীন স্টেশনে অসহায় হয়ে বসে রয়েছেন ওই বৃদ্ধা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
বাইরে তখন সবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। আর সেই তখন থেকেই ঠায়ে বাঘাযতীন প্ল্যাটফর্মে ওঠা-নামার সিঁড়ির একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিলেন তিনি। পরনে সাদা কাপড়। চোখে মোটা কাচের চশমা। ছেলে আসবে নিয়ে যেতে। অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে এলেও ছেলে আর এল না। খানিকটা ভয়ে, খানিকটা আতঙ্কে এবং অনেক বেশি যন্ত্রণায় অঝোরে শুধু কেঁদে চলেছিলেন তিনি। তাঁকে এ ভাবে কাঁদতে দেখে এগিয়ে যান স্থানীয় হকাররা। জানা যায়, ওই বৃদ্ধা মহিলাকে স্টেশনে ফেলে দিয়ে গিয়েছেন তাঁরই নিজের ছেলে! শুক্রবারের ঘটনা। গভীর রাতে তাঁকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে যাদবপুর জিআরপি।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, ওই বৃদ্ধার নাম সুনীতি হালদার। ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধা সোনারপুরের সুভাষপল্লিতে মেয়ে এবং নাতনির কাছে থাকেন। তাঁর এক ছেলেও রয়েছে, তবে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ততটা ভাল নয় তাঁর। সোনারপুরেই ছেলে আলাদা বাড়িতে থাকেন। সুভাষপল্লী থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব যদিও খুব বেশি নয়। কিন্তু কখনও বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ নেন না। তবে ছেলের সঙ্গে কী ভাবে ওই দিন তাঁর যোগাযোগ হল? সোনারপুর থেকে বাঘাযতীন কী ভাবে পৌঁছলেন তিনি, তা সঠিক এখনও জানতে পারেনি পুলিশ।
কারণ পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় বৃদ্ধা এতটাই ট্রমায় রয়েছেন যে ভীষণ অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পর ভাঙা ভাঙা কথায় তিনি নিজের বাড়ির ঠিকানাটা বলতে পেরেছিলেন। আর শুধু বলেছেন ওই দিন ছেলের সঙ্গে তিনি সোনারপুর থেকে বাঘাযতীন এসেছিলেন।
দেখুন ভিডিও:
ওই দিন প্ল্যাটফর্মের কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকেই প্রথম ফোনটা পেয়েছিল যাদবপুর জিআরপি। রাত সাড়ে নটা নাগাদ ওই ফোন পেয়েই বাঘাযতীন প্ল্যাটফর্ম থেকে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। বৃদ্ধার মুখ থেকে বাড়ির ঠিকানা জানার পর যোগাযোগ করা হয় সোনারপুর জিআরপিতেও। অবশেষে খোঁজখবর নিয়ে রাত দু’টো নাগাদ সোনারপুর জিআরপির এসআই নিমাইচন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটা দল তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: ‘আমি কি বাচ্চা ছেলে, যা বলবে তাতেই সই করে দেব!’
কিন্তু তারপর প্রাথমিকভাবে ওই মহিলা এবং তাঁর প্রতিবেশীদের কাছ থেকে যা জানতে পেরেছে পুলিশ তাতে হতভম্ব তাঁরা। ছেলে মায়ের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। কিন্তু সম্পত্তির লোভ ছাড়তে পারেননি। আর তাই নাকি নির্যাতন চালাতেন ওই বৃদ্ধা মায়ের উপর। এমনকী বাড়ি লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেছেন, এমনকী মারধরও করেছেন বলে অসংলগ্ন কথায় খোদ অভিযোগ করেছেন তাঁর মা-ই। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, সম্পত্তির লোভ থেকেই ছেলে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
ঘটনার পর থেকে এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ওই মহিলার ছেলের। তাঁর খোঁজ চলছে।