জমিজট, পারিবারিক বিবাদ মেটাতে থানায় যান, বলছেন কাউন্সিলর

উত্তর কলকাতার আট এবং চোদ্দো নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলরের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি ওঁরা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

নিষেধ: মুচিবাজার এলাকার এই ওয়ার্ড অফিসের সামনে সাঁটানো বিজ্ঞপ্তি।

পারিবারিক বিবাদ বা জমিবাড়ি সংক্রান্ত জটে জড়াতে চান না তাঁরা। এ বার সেই বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিজেদের ওয়ার্ড অফিসের সামনে বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন কোনও কোনও কাউন্সিলর।

Advertisement

উত্তর কলকাতার আট এবং চোদ্দো নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলরের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি ওঁরা। সমস্যা হলে কার কাছে যাব? এ দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে আট নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর পার্থ মিত্র। রাত সাড়ে এগারোটা বাজলেই এখন নিজের মোবাইলটি বন্ধ করে দিচ্ছেন তিনি। এমনকি নিজের দফতরে বোর্ডও ঝুলিয়েছেন। একই আতঙ্কে ভুগছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীও। তিনি ফোন খোলা রাখলেও, নিজের দফতরের বাইরে বোর্ড ঝোলাতে হয়েছে তাঁকেও।

বাগবাজার এলাকায় নিজের দফতরে পার্থবাবু যে বোর্ড ঝুলিয়েছেন তাতে লেখা, ‘জমি, পারিবারিক বা ভাড়াটে-বাড়িওয়ালা বিবাদের বিচার এখানে হয় না। থানায় যান। আইনের দ্বারস্থ হন’। অমলবাবুর লাগানো বোর্ডেও পুরপ্রতিনিধির নাম-সহ লেখা রয়েছে, ‘জমি সংক্রান্ত এবং বাড়িওয়ালা, ‌ভাড়াটের বিচার ব্যবস্থা এখানে হয় না’।

Advertisement

কিন্তু এমন বোর্ড দিতে হল কেন?

অমলবাবু জানাচ্ছেন, কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই পারিবারিক বিবাদ নিয়ে বহু মানুষ তাঁর কাছে আসতে শুরু করেন। ভাড়াটে-বাড়িওয়ালার বিবাদ নিয়েও বেশ কয়েক বার বসতে হয়েছে তাঁকে। ইদানিং জমি-বাড়ি সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই বেশি মানুষ আসছেন। অমলবাবুর যুক্তি, ‘‘পরিবার বা আইনের বিষয়ে নাক গলানো কাউন্সিলরের কাজ নয়। বহু বার বুঝিয়েও কাজ হয়নি। দলনেত্রীর নির্দেশ, পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিতে হবে। আমরা এ সবে ঢুকলে দলের মুখ পুড়বে।’’

কাউন্সিলর হয়েও কেন ফোন বন্ধ রাখছেন পার্থবাবু? তাঁর উত্তর, ‘‘কাউন্সিলর হয়েছি বলে কি ফোন করে যা খুশি তাই বলবে? কেউ মাঝরাতে ফোন করে বলছেন, দেওর পেটাচ্ছে। কেউ বলেন, ছেলে জোর করে জমি নিয়ে নিতে চায়। কারও দাবি, প্রোমোটার টাকা মেরে দিয়েছে। এ সব শুনব তো, কাজ করব কখন? আর ঘুমোবই বা কখন?’’

বাগবাজারের ওয়ার্ড অফিসের ভিতরে। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে ভাড়াটে বৃদ্ধ দম্পতিকে শৌচাগার ব্যবহার না করতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই ঘটনায় নাম জড়ায় অমলবাবুর। তার পরেই তিনি নিজের দফতরে ওই বোর্ড ঝুলিয়েছেন। পার্থবাবুর বিরুদ্ধে অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করি বলে সব বিষয়ে ঢুকতে পারব না। সেটাই বোর্ড ঝুলিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তার পরেও রাতবিরেতে ফোন আসে। তাই ফোন বন্ধ রাখছি।’’

উত্তর কলকাতা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, একাধিক ওয়ার্ডে প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে কাউন্সিলরেরা জড়িত বলে দলে বারবার আলোচনা হয়েছে। তাই কাউন্সিলরেরা নিজেরাই এই সব বোর্ড ঝুলিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘বিষয়টি দলনেত্রীর কানেও গিয়েছে। তাই নিজেদের স্বচ্ছ রাখতে কাউন্সিলরেরা এমন ঘোষণা করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন