দমদম মেট্রো স্টেশনে যেটা ঘটেছে, সেটা সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে পাল্টাতে না পারা মানুষেরাই করেছেন। ওটা তাঁদের অ্যাটিটিউড। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা কাদের সঙ্গে বেড়ে উঠছি। কী ভাবে বড় হচ্ছি। ইংরেজিতে যাকে বলে আপব্রিংগিং। আমরা আসলে চারপাশের মানুষদের সঙ্গে মিশতে মিশতে বড় হই। সেটা বাবা-মা-ভাই, প্রতিবেশী, বন্ধু। তালিকা আর বড় করা যায়।
এই বড় হওয়াটা আজ থেকে ৫০ বছর আগে এক রকম ছিল। এখন যাঁদের বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব, তাঁদের বেড়ে ওঠাটা যে পরিবেশে, এক জন কুড়ি-বাইশের সঙ্গে তা কোনও ভাবেই মিলবে না। ঠিক যেমন ভাবে মেলে না সত্তরের সঙ্গে ওই পঞ্চাশের। আমাদের ছোটবেলায় বিনোদন বলতে সিনেমা হল, তা-ও অনেক জায়গায় ছিল না। আর বাড়ির রেডিয়ো। কিন্তু, এখন একটা বাচ্চা জন্মাচ্ছেই প্রায় ৪০০ চ্যানেল, ২০০ পোর্টাল নিয়ে। ফলে এক একটা প্রজন্মের ভাবনাচিন্তা এক এক রকমের। একটা সময় ছিল, বাবামায়েরা ছেলেমেয়েকে ভবিষ্যতের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারতেন না। এখন হাজার একটা পেশা রয়েছে। বাবামায়েরা সমর্থনও করছেন। একটা সময় ছিল, ছেলেমেয়েকে কো-এডুকেশন স্কুলে ভর্তি করা হত না। এখন তো হয়। এই পড়াশোনা-পেশার দিকটা যেমন পাল্টেছে, তেমন আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিও পাল্টেছে। এই পাল্টানোটা অনেকে মেনে নিতে পারেননি। দমদম মেট্রো স্টেশনে যেটা ঘটেছে, আমার মনে হয়, ওই পাল্টাতে না পারা মানুষেরাই করেছেন। ওটা তাঁদের অ্যাটিটিউড।
আবার আমাদের মধ্যে একটা বেসিক চরিত্র রয়েছে। কোনও কিছু অন্যের কাছে থাকলে, আমাদের মনে হয় ওটা আমার কেন নেই। অন্য কেউ কিছু পেলে আমাদের মনে একটা হিংসার মনোভাব তৈরি হয়। অনেকে এই মনোবৃত্তিটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। অনেকে পারেন না। তারও একটা অ্যাটিটিউট থাকে। ঠিক যেমন করে মেট্রোর ভিতরে ছেলেটিকে সলমন খান বলায়, সে কলার তুলে সকলকে বলেছিল, ‘আমি এটা কিন্তু কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নিলাম।’ এটাও তার অ্যাটিটিউড। সে তো অ্যাটিটিউডই দেখিয়েছে। গায়ে তো হাত দেয়নি। কিন্তু, ওদের এ ভাবে মারা হল কেন, বুঝতে পারছি না। কোনও পরিস্থিতিতেই চড়থাপ্পড় মারা যায় না।
ওই ভদ্রলোক একা থাকলে হয়তো মারতে পারতেন না। সঙ্গে আরও অনেকে জুড়ে যাওয়ায় সেই সাহসটা পেয়েছেন। তবে, এর সঙ্গে যৌনতার তেমন কোনও সম্পর্ক নেই।