ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্ট-কাণ্ডের তদন্তে নেমে দু’ডজনেরও বেশি চিকিৎসক এবং প্যাথলজিক্যাল বিশেষজ্ঞের নাম পেল পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতদের মোবাইল থেকেই ওই চিকিৎসকদের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের সই করা কয়েকটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির নাম লেখা সাদা পাতা মিলেছে, যাতে ওই ভুয়ো রিপোর্ট লেখা হত। তদন্তকারীদের দাবি, ভুয়ো রিপোর্ট-কাণ্ডে ধৃত দু’জনের সঙ্গে ওই চিকিৎসক এবং প্যাথলজিক্যাল বিশেষজ্ঞদের যোগাযোগ ছিল। ধৃত সন্তোষ জেরায় সে কথা স্বীকারও করেছে বলে দাবি পুলিশের। সে জানিয়েছে, রোগীদের নাম, বয়স-সহ নির্দিষ্ট তথ্য তারা ইমেলে ওই চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পাঠাত। তাঁরাও ভুয়ো রিপোর্ট তৈরি করে তা ইমেলে পাঠিয়ে দিতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের থেকে যে সমস্ত চিকিৎসক ও প্যাথলজিক্যাল বিশেষজ্ঞের নাম পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সন্তোষপুরের যে নামী দুই ল্যাবরেটরির নাম মিলেছে, তাদের মালিকদেরও ডেকেছেন তদন্তকারীরা।
মঙ্গলবার রাতে রাজাবাগানের বাসিন্দা আজহার আলম আনসারি পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান, তাঁর রক্ত পরীক্ষার যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তা ভুয়ো। রিপোর্টে নাম থাকা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তিনি তা বুঝতে পেরেছেন। এর পরেই রাজাবাগান থানার দুই অফিসার মহম্মদ শাহিন ও রাকেশ গড়াই তদন্তে নেমে বিজয় ঝা এবং সন্তোষকুমার সাউ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেন। এখন তারা পুলিশি হেফাজতে। আজ, শুক্রবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, আজহারকে মৌলালির একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির নাম লেখা রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়েছিল বিজয়। সেই ল্যাবের সঙ্গে মাস দশেক আগে যুক্ত ছিল সন্তোষ। তার পরে ওই ল্যাবেরই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বন্দর এলাকায় একটি কালেকশন সেন্টার খোলে সে। সেই সূত্রেই বিজয়ের সঙ্গে আলাপ হয়। পুলিশের দাবি, বিজয় বন্দর এলাকার একটি নার্সিংহোমে কাজ করত। সেখানে চিকিৎসা করাতে আসা নিম্নবিত্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সে রক্ত সংগ্রহ করে তা পৌঁছে দিত ওই নার্সিংহোমে। মাস ছয়েক আগে সন্তোষের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরে বিজয় তাকেই রক্ত পৌঁছে দিত। সন্তোষ মনগড়া রিপোর্ট বানিয়ে তা ফের বিজয়ের হাতে তুলে দিত।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের ল্যাপটপে চিকিৎসকদের নাম ও সই-সহ রিপোর্ট লেখার সাদা পাতা লোড করা ছিল। বিজয় কোনও প্রেসক্রিপশন নিয়ে এলে তা থেকে যে ভুয়ো রিপোর্ট তৈরি করানো হত, ওই সাদা পাতায় তা প্রিন্ট করাত সন্তোষ। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘ছ’মাস ধরে ওই ব্যবসা শুরু করেছিল সন্তোষ ও বিজয়। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সুবাদে কোন পরীক্ষায় কী রিপোর্ট হতে পারে, তা আন্দাজ ছিল তাদের। পুরনো কর্মস্থল থেকে চুরি করা ছাপানো প্যাডও কাজে লাগিয়েছিল ব্যবসায়।’’