ডেঙ্গি প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের তরফে স্কুল-কলেজগুলিকে মশাবাহিত রোগ নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি পালনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রোগ নিয়ে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের সচেতন করার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। কিন্তু, সেই নির্দেশ কার্যত খাতায়-কলমেই থেকে গিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অধিকাংশ স্কুল-কলেজেই এখনও ডেঙ্গি সচেতনতা প্রচারের কর্মসূচি শুরু করা যায়নি। কয়েকটি কলেজ-স্কুল নিজেদের মতো করে উদ্যোগী হলেও সার্বিক ভাবে সচেতনতা প্রচার এখনও শুরু হয়নি। মশা গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্তমানে ডেঙ্গির চরিত্র ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। ফলে বর্ষার মরসুমের জন্য অপেক্ষা করলে ভুগতে হবে। তখন তাড়াহুড়ো করে ডেঙ্গি প্রতিরোধে সচেতনতা অভিযান চালালে কিছু লাভ হবে না।
গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধানতম হাতিয়ারই হল সচেতন হওয়া, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের আঁতুড়ঘর ধ্বংস করা। তার জন্য সব সময়ে যে স্থানীয় পুর প্রশাসনের উপরে ভরসা করতে হবে, তেমন নয়। এই কাজ নিজেরা সচেতন থাকলেই করা যায়। তাই কোথায় কোথায় ওই আঁতুড়ঘর তৈরি হতে পারে, কোথায় কোথায় জল জমছে, এমন কয়েকটি বিষয় স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের জানা দরকার।
নির্দেশনামা
• ডেঙ্গির মরসুমে স্কুলের পোশাক ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট
• নর্দমা ও শৌচাগার পরিষ্কারে উদ্যোগী হবেন কর্তৃপক্ষ
• সাফাইয়ে রাসায়নিকের পরিবর্তে ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার
• প্রার্থনা সভায় ডেঙ্গি নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা
• পতঙ্গবিদদের নিয়ে কলেজে আলোচনাসভার আয়োজন
• মশার সম্ভাব্য আঁতুড়ঘরের ধারণা দিতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন
সূত্র: স্বাস্থ্য দফতর
এক মশা গবেষকের কথায়, ‘‘নিজেরা সচেতন হলে ডেঙ্গি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সচেতনতা প্রচারের জন্য বিশেষ কর্মসূচিও দরকার, বিশেষ করে স্কুল-কলেজগুলিতে। কিন্তু অনেক স্কুল-কলেজেই তেমনটা শুরু হয়নি এখনও।’’ আর এক মশা গবেষক বলেন, ‘‘কয়েকটি স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো আমাদের ডাকছেন বিষয়টি নিয়ে পড়ুয়া-শিক্ষকদের সচেতন করার জন্য। কিন্তু সার্বিক ভাবে প্রচার শুরু হয়নি।’’
স্বাস্থ্য ভবনের অভিযোগ, ডেঙ্গি নিয়ে পড়ুয়া-অভিভাবকদের সতর্ক করার পরিকল্পনা হলেও তার বাস্তবায়ন করছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতর সরকারি-বেসরকারি সব স্কুলেই নিয়মের কথা জানিয়েছে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল সে সব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না বলে তাদের অভিযোগ। সরকারি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে বিরক্ত দফতরের পরিদর্শক দলও। অভিযোগ, কলকাতার অধিকাংশ সরকারি স্কুল-চত্বর পরিষ্কারে উদ্যোগী হন না কর্তৃপক্ষ। চত্বর সংলগ্ন নর্দমা পরিষ্কার হয় না, বছরভর জল জমে থাকে। পুরসভা কাজ করছে না, এই বলে অধিকাংশ সময়ে দায় এড়িয়ে যান কর্তৃপক্ষ। যদিও ডেঙ্গি প্রতিরোধে স্কুলগুলিতে আলাদা টাকা বরাদ্দ করা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, স্কুলগুলির শৌচাগারই ডেঙ্গি মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নিয়ম মাফিক ডেঙ্গির মরসুম শুরু হলেই স্কুলের পোশাক হবে ফুলহাতা জামা ও ফুল প্যান্ট। স্কুল চত্বর সাফাইয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রার্থনা সভার শেষে ডেঙ্গি সম্পর্কে ফি-দিন সচেতন করতে হবে পড়ুয়াদের। সপ্তাহে এক দিন আয়োজন করতে হবে ক্যুইজ প্রতিযোগিতার। ওই প্রতিযোগিতার প্রশ্ন এবং প্রার্থনা সভায় কী বলতে হবে, সেই বক্তব্যও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে দফতরের তরফে।
কিন্তু সল্টলেক ও কলকাতার একাধিক বেসরকারি স্কুলে পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা দেখেছেন, পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাকের ব্যাপারে জানানো হয়নি। এমনকী বেশ কয়েকটি স্কুল জানিয়েছে, শীতকাল ছাড়া তাদের স্কুলে ফুলহাতা জামা ও ফুল প্যান্ট প়রার নিয়ম নেই। তাই ডেঙ্গির সময়ে তারা নতুন নিয়ম করতে পারবে না।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, সম্প্রতি তাঁরা অন্যান্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষা দফতরের কর্তাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ত দফতর সরকারি স্কুল চত্বরে দেখভালের দায়িত্বে থাকে। তাই স্কুল চত্বর পরিষ্কারে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।