রবিবারের দুর্যোগে ঝড়ে গাছ উল্টে রাস্তা বন্ধ সন্তোষপুরে
নেহাত ছুটির দিন বলে দুর্ভোগের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন শহরের বেশির ভাগ মানুষ। রবিবাসরীয় দুপুরে বাড়িতে বসেই উপভোগ করেছেন প্যাচপেচে গরম থেকে খানিকটা স্বস্তি এনে দেওয়া ঘণ্টা দেড়েকের ঝড়-বৃষ্টি।
কলকাতা পুলিশ ও পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন ঝ়ড়ের দাপটে শহরের তিনটি জায়গায় তিনটি গাছ ভেঙে পড়েছে। সিঁথি থানা এলাকায় একটি বাড়িতে বাজ পড়ে। তবে গাছ ভাঙা বা বাজ পড়ার ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
এ দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে কলকাতার উড়ানসূচি। আড়াইটে থেকে চারটে পর্যন্ত কলকাতার আকাশে এসেও বাধ্য হয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্য শহরের বিমানবন্দরে গিয়ে নামে ১৩টি বিমান।
দুপুরের প্রবল বর্ষণে ধর্মতলায় জলমগ্ন রাস্তা
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সার্ভে পার্ক থানা এলাকার সন্তোষপুর অ্যাভিনিউয়ে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। গাছটি রাস্তার পাশের একটি বাতিস্তম্ভের উপরে আছড়ে পড়ায় বাতিস্তম্ভটি হেলে পড়ে। এই ঘটনার জেরে ওই এলাকায় দীর্ঘ ক্ষণ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দল গাছ কেটে সরালে সন্ধ্যার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘সন্তোষপুর ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার রাজা বসন্ত রায় রোড এবং বেহালার বি এল সাহা রোডে গাছ ভেঙে পড়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বিকেলে সিঁথি থানা এলাকার ডি গুপ্ত লেনে তিনতলা একটি বাড়িতে বাজ পড়ে। ওই বাড়িতে তখন চার জন বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার খবর পেয়ে যায় সিঁথি থানার পুলিশ। ডিসি (উত্তর) দেবাশিস সরকার বলেন, ‘‘বাসিন্দারা সকলেই সুস্থ রয়েছেন।’’ ঝ়ড়ের দাপটে এ দিন বিকেলে পার্ক স্ট্রিটে ট্রাম লাইনের তার ছিঁড়ে যায়। ফলে পার্ক সার্কাস-ধর্মতলা রুটের ট্রাম চলাচল দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ থাকে।
হাওয়ার দাপটে মধ্য কলকাতায় ছাতা নিয়ে মুশকিলে দুই স্কুটার আরোহী।
একনাগাড়ে বৃষ্টির জেরে উত্তর কলকাতার কাঁকুড়গাছি আন্ডারপাস, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, উল্টোডাঙা আন্ডারপাস, মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে দীর্ঘক্ষণ জল জমে থাকে। স্থানীয়দের বক্তব্য, রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় সাধারণ মানুষকে তেমন ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়নি। অন্য দিন হলে খুব সমস্যা হত।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দুপুরে প্রধান রানওয়ের বিরাটির দিক থেকে বিমান নামাওঠা করছিল। ঝড় শুরু হওয়ার পরে দেখা যায়, ও দিক দিয়ে নামতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারে বিমান। নামার সময়ে বিমানকে পিছন থেকে ঠেলতে পারে হাওয়া। তাতে বিপদ বাড়বে। ঠিক করা হয়, প্রধান রানওয়ের রাজারহাটের দিক থেকে বিমান নামানো হবে। দুপুর ২টো ২৭ মিনিটে সে দিক দিয়ে উপকূলরক্ষী বাহিনীর ছোট একটি বিমান নামে। তার পরে হাওয়ার খামখেয়ালিপনা এতই বেড়ে যায় যে, বিমান নামতে গেলে বিপদ
হতে পারত।
দিল্লি থেকে একটি বিমান এসে চেষ্টা করেও নামতে পারেনি। এ ভাবে একের পর এক বিমান আসতে শুরু করে শহরের আকাশে। তাদের অপেক্ষা করার জন্য নির্দেশ পাঠায় এটিসি। আড়াইটে থেকে চারটে পর্যন্ত এই সব বিমানের গতিবিধি সামলাতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যান বিমানবন্দরের এটিসি-র অফিসারেরা। এক সময়ে ১২টির বেশি বিমান জমে যায় কলকাতার আকাশে। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা দু’টি বেসরকারি সংস্থার বিমানও ছিল। ওই দু’টি বিমান ফিরে যায় বাংলাদেশে। বহু বিমানকেই মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে হয় গুয়াহাটি, ভুবনেশ্বর, আগরতলা, বারাণসী, বাগডোগরায়।
বেশ কয়েক বারের চেষ্টার পরে বিকেল ৩টে ১১ মিনিট নাগাদ মুম্বই থেকে আসা একটি বিমান রাজারহাটের দিকের রানওয়েতে নেমে পড়ে। কিন্তু তার পরে ফের বন্ধ হয়ে যায় বিমান ওঠানামা।
হাওয়ার গতিমুখ দেখে আবার রানওয়ে বদলে, বিরাটির দিক থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হয় এবং বিশাখাপত্তনম থেকে এসে একটি বিমান সেখানে ৪টে ২ মিনিটে নামে। তার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় বিমান চলাচল।
ছবি: রণজিৎ নন্দী ও স্বাতী চক্রবর্তী