নতুন ‘বইপাড়া’য় বুঁদ কলকাতা পুলিশের কর্মীরা

ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মী প্রভাকর সিংহের আবার নেশা গোয়েন্দা গল্প পড়া। শার্লক হোমস থেকে শুরু করে আগাথা ক্রিস্টি বা ফেলুদা। কিন্তু কিছুতেই লাইব্রেরিতে যাওয়ার সময় করে উঠতে পারছিলেন না।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০২:০৮
Share:

সম্ভার: রিপন স্ট্রিটে কলকাতা পুলিশের লাইব্রেরি। —নিজস্ব চিত্র।

পেশা পুলিশের গাড়ি চালানো। নেশা বই পড়া। বহু দিনের ইচ্ছে ছিল, ব্রিটিশ আমলের কলকাতা পুলিশের ইতিহাস জানার। কিন্তু কোথা থেকে সেই সংক্রান্ত বই পাবেন, জানা ছিল না চালক সোমনাথ হালদারের। ইতিহাসের ওই সব দামি বই কেনার সাধ্যও ছিল না তাঁর। রিপন স্ট্রিটের কলকাতা পুলিশের পাঠাগার এখন সোমনাথের কাছে ‘সব পেয়েছির দেশ’। কাজের ফাঁকে তিনি চলে আসেন লাইব্রেরিতে। ইচ্ছে মতো একটি-দু’টি বই বাড়ি নিয়ে যান।

Advertisement

ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মী প্রভাকর সিংহের আবার নেশা গোয়েন্দা গল্প পড়া। শার্লক হোমস থেকে শুরু করে আগাথা ক্রিস্টি বা ফেলুদা। কিন্তু কিছুতেই লাইব্রেরিতে যাওয়ার সময় করে উঠতে পারছিলেন না। এ বার প্রভাকর পেয়ে গিয়েছেন তাঁর বই পড়ার ঠিকানা। এক দিন এসে তিনি দেখেন, তাঁর প্রিয় সব গোয়েন্দা গল্পই রয়েছে। প্রভাকরের কথায়, ‘‘কাজের ফাঁকে ইন্টারনেটে বিভিন্ন জিনিস দেখার চাইতে আমার বেশি ভাল লাগে বই পড়তে।’’

শুধু সোমনাথ বা প্রভাকরই নন, কলকাতা পুলিশের বইপ্রেমীদের এখন ঠিকানা রিপন স্ট্রিটের এই লাইব্রেরি। প্রায় ১০ হাজার বইয়ের সম্ভার নিয়ে তৈরি হওয়া এই লাইব্রেরি সব বইপ্রেমীর জন্যই খোলা।
গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলছেন, ‘‘আপাতত শুধু কলকাতা পুলিশের কর্মীরাই বই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছেন। অন্যরা এখানে এসে শুধু পড়তে পারেন। তবে কিছু টাকা জমা রেখে বই নেওয়ার সুবিধা শীঘ্রই শুরু হবে।’’

Advertisement

গত ২১ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয় এই লাইব্রেরির। সদস্য-সংখ্যা এখন আড়াইশো ছাড়িয়েছে। লাইব্রেরির ইন-চার্জ দিলীপ মিত্র বলেন, ‘‘বিশেষ করে উপকৃত হচ্ছেন কলকাতা পুলিশের নিচুতলার কর্মীরা। অনেকের ইচ্ছে থাকলেও দামি বই কেনার সাধ্য ছিল না। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বইয়ের সংখ্যা বিপুল। ওই সব বই বাড়ি নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ থাকছে।’’ দিলীপবাবু জানালেন, অনেক পুলিশকর্মী এই লাইব্রেরি থেকে তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য বই নিয়ে যাচ্ছেন। এমনই এক কনস্টেবল বললেন, ‘‘আমার ছেলের নেশা টিনটিনের বই পড়ার। কিন্তু দাম এত বেশি যে কিনে দিতে পারিনি। এখানে টিনটিনের পুরো সংগ্রহ রয়েছে। ওদের জন্য বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।’’

দোতলার লাইব্রেরি লাগোয়া রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া। আর একতলায় পুলিশ মিউজিয়াম। অনেকে মনে করছেন, এই লাইব্রেরি পুলিশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করবে। পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দা অরূপ দাশগুপ্ত মাঝেমধ্যেই এখানে এসে বই পড়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ যে বই পড়ায় উৎসাহিত করছে, তা খুবই ভাল উদ্যোগ। এই ধরনের জনসংযোগের ফলে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ভয়ও হয়তো কিছুটা কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন