বাড়তি দায়িত্ব সামলাবে কে, উঠছে প্রশ্ন

ইতিমধ্যেই কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথী, সমব্যাথী-সহ নানা প্রকল্প চালু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রূপশ্রী এবং মানবিক প্রকল্প।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৪
Share:

শহরবাসীর আধার কার্ড, রেশন কার্ড, বিপিএল কার্ড এ সব তো রয়েছেই। তার উপরে নতুন করে রূপশ্রী এবং মানবিক প্রকল্প যুক্ত হওয়ায় আতান্তরে পুর প্রশাসন। সোমবার, পুরভবনে রূপশ্রী প্রকল্প নিয়ে এক বৈঠকে পুর অফিসার থেকে বরো চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন একটা দফতরের (সোশ্যাল সেক্টর) পক্ষে এত প্রকল্প রূপায়ণ করা সম্ভব কী না। তবে যে হেতু এই প্রকল্পের রূপকার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, তাই যত অসুবিধাই হোক না কেন রূপশ্রী প্রকল্প সফল করতে জোরকদমে কাজে নামতে চায় পুর প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে।

Advertisement

ইতিমধ্যেই কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথী, সমব্যাথী-সহ নানা প্রকল্প চালু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রূপশ্রী এবং মানবিক প্রকল্প। কলকাতায় এই সব প্রকল্প প্রয়োগের ভার রয়েছে পুর প্রশাসনের উপরে। আর পুরসভার সোশ্যাল সেক্টর দফতরই তা দেখে। কিন্তু পুরসভার বর্তমান পরিকাঠামো অনুযায়ী দেখা গিয়েছে ওই দফতরে অফিসার এবং কর্মীর সংখ্যা কম। পুরসভার এক আমলার কথায়, ওই দফতরের সবটাই কল্যাণমূলক কাজ। বয়স্ক, বিধবা, দারিদ্র সীমার নিচে থাকা মানুষজনকে মাসিক ভাতা দেওয়া শুরু করে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এর বাইরে রয়েছে রেশন কার্ড, বিপিএল কার্ড, আধার কার্ড বানানোর কাজ। আছে সবুজ সাথী, প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার কাজও। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও চান এ সব কাজে যেন কোনও ফাঁকি না থাকে। অথচ হিসেব মতো পুরসভার সোশ্যাল সেক্টরে পুরো সময়ের জন্য হাতে গোনা অফিসার রয়েছেন। তিনি জানান, এই মুহূর্তে সোশ্যাল সেক্টরে এমন জনা দশেক অফিসার রয়েছেন, যাঁরা প্রত্যেকেই অন্য কোনও বড় দফতরে রয়েছেন। বাড়তি হিসেবে এই
সেক্টরে তাঁদের রাখা হয়েছে। বড় দায়িত্ব পালন করে তাঁদের কাছে আর তেমন কোনও সময় থাকে না। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে হলে সোশ্যাল সেক্টরেই পুরো সময়ের জন্য আরও অফিসার রাখা জরুরি।

উদাহরণ দিয়ে সোশ্যাল সেক্টর দফতরের এক আধিকারিক জানান, রূপশ্রী প্রকল্প পয়লা এপ্রিল থেকে চালু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভায় ৪৭ জনের আবেদন জমা পড়েছে। অর্থাৎ ৪৭টি মেয়ের পরিবার বিয়েতে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন। নিয়ম মতো তাঁদের বিয়ের কার্ড জমা দিতে হবে। বছরে আয় দেড় লক্ষ টাকার কম বলে মুচলেকা দিতে হবে। স্থানীয় ৫ জন বাসিন্দার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে জানাতে হবে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। তবেই তাঁকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর সে সবই যাচাই করার
ভার সংশ্লিষ্ট বরোর অফিসারের উপরে। আর টাকা দিতে হবে বিয়ের ৫ দিন আগেই।

Advertisement

বৈঠকেই প্রশ্ন ওঠে, এত সব যাচাইয়ের কাজ করতে যে পরিকাঠামো দরকার, তা এখন নেই। তাই আশঙ্কা, ওই ফাঁকে কেউ অসৎ উপায় অবলম্বন করতে পারে। বিয়ের কার্ড তো কেউ ছাপিয়ে জমা দিতে পারেন। আর্থিক আয়ের মুচলেকাও মিথ্যা হতে পারে। রাজ্যের নারী, শিশু এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাকে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাইব এমন একটা মানবিক প্রকল্পে কেউ যেন মিথ্যার আশ্রয় না নেন। তবে এটাও ঠিক, সম্ভাবনা থাকতেই পারে। কিন্তু বিয়ে হচ্ছে কি না তার খোঁজ নেবেন অফিসারেরাই।’’ যার অর্থ অফিসারেরাই সব দেখবেন। কিন্তু দফতরে অফিসার কম থাকলে সেই কাজ কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে চিন্তায় পুর কর্তারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন