শহরে পৌঁছে যাওয়ার ন’মাস পরেও চালু করা যায়নি কলকাতা মেট্রোর নতুন দু’টি এসি রেক। ওই দুই রেকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়েও দফায় দফায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দেশের অন্যান্য শহরে মেট্রো পরিষেবা যখন নির্ঝঞ্ঝাটে চলছে, তখন কলকাতা মেট্রোয় এত সমস্যা কেন? পরিষেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে অহরহ। মেট্রোর আধিকারিকদের একাংশের মতে, রেক কেনার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিই সমস্যার মূল কারণ।
সারা দেশের মধ্যে একমাত্র কলকাতা মেট্রোই ভারতীয় রেলের অধীন। ফলে রেক কেনা-সহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে রেলবোর্ডের সামগ্রিক নীতি ও সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়। যদিও মেট্রোর সঙ্গে সাধারণ রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
এ দেশে একমাত্র কলকাতার মেট্রোই ব্রডগেজ লাইনে চলে। রেকগুলিও সারা দেশের নিরিখে আলাদা। লাইন ও চাকার মাপ ব্রডগেজের হলেও কামরার পরিসর মিটারগেজ ট্রেনের মতো। ওই বিশেষ মাপের রেক তৈরির জন্য আলাদা করে বিভিন্ন সংস্থার কাছে যন্ত্রাংশের বরাত দিতে হয়। ভাল মানের যন্ত্রাংশ পেতে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়।
২০০৯ সালে কলকাতায় প্রথম এসি রেক আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময়ে যে সরকারি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল, এসি রেক তৈরির কোনও অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। ওই রেক তৈরি হয়ে আসার পরে তা চালু করার সময়ে দরজা, ব্রেক, এসি-র পাইপ, রুফ মাউন্টিং ইউনিট-সহ একাধিক যন্ত্রাংশ নিয়ে সমস্যায় পড়েন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সে জন্যই পরে টেন্ডার ডেকে চিনের এক সংস্থাকে রেক তৈরির বরাত দেওয়া হয়।
কয়েক বছরের মধ্যে সরকারি নীতি বদলানোয় দেশি সংস্থাকেই গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়। ওই পরিকল্পনার আওতায় গত বছর চেন্নাইয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে নতুন দু’টি এসি রেক আনা হয়। ওই রেকগুলি এখনও চালু করা যায়নি। ন’মাস ধরে পড়ে থাকা ওই দু’টি রেকের যন্ত্রাংশের মান নিয়ে মেট্রোর অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে।
মেট্রো সূত্রের খবর, আট কোচের নতুন দু’টি এসি রেকের প্রতিটির জন্য গড়ে ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় যা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কম।
চিনের ওই সংস্থার আট কোচের প্রতিটি রেকের জন্য খরচ পড়ছে ৬০ কোটি টাকার কাছাকাছি। আবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ছয় কোচের স্ট্যান্ডার্ড-গেজ রেকের প্রতিটির মূল্য গড়ে ৬৫ কোটি টাকা। সে তুলনায় চেন্নাইয়ের সরকারি সংস্থায় তৈরি রেকের দাম অনেকটাই কম। কিন্তু দামের সঙ্গে আপস করতে গিয়ে মানের সঙ্গেও কি আপস করা হচ্ছে? প্রশ্ন মেট্রোকর্তাদেরই।
দেশের অন্য শহরের মেট্রো যখন বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার ঝাঁ-চকচকে রেক নিয়ে ছুটছে, তখন কলকাতা মেট্রো বয়সের ভারে নুয়ে পড়া নন-এসি রেক নিয়ে ধুঁকছে। মেট্রোর এক আধিকারিক বলেন, “কলকাতা মেট্রোর সমস্যা এবং চরিত্র বুঝে নতুন রেকের ব্যবস্থা করতে হবে।”