মোবাইল ফোন চার্জে বসিয়ে কথা বলার সময়ে চার্জার ফেটে গিয়ে তা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল নবম শ্রেণির পড়ুয়া এক কিশোরের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম প্রসেন সর্দার (১৭)। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর থানার দক্ষিণ গৌরীপুরের সর্দারপাড়ায়। এর আগেও দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় একই ভাবে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মোবাইল চার্জে বসিয়ে তা ব্যবহার করা যে বিপজ্জনক, তা নিয়ে প্রচারও চলেছে। কিন্তু তার পরেও অবশ্য হুঁশ ফেরেনি অনেকেরই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার শেরপুরের একটি স্কুলে পড়ত প্রসেন। বুধবার স্কুলে যায়নি সে। বাড়িতেই ছিল, ঠাকুরমা সরলাদেবীর সঙ্গে। প্রসেনের এক আত্মীয় জানান, দুপুরে নিজের মোবাইলটি চার্জে বসিয়েই সেটি থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিল প্রসেন। আচমকাই মাটিতে পড়ে যায় সে। ছটফট করতে থাকে। ঠাকুরমা পড়শিদের ডেকে আনেন। অচৈতন্য অবস্থায় প্রসেনকে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই প্রসেনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
প্রসেনের বাবা পূর্ণ সর্দার ফুচকা বিক্রি করেন। বছরখানেক আগে ছেলেকে ফোনটি কিনে দিয়েছিলেন। স্কুলেও ফোন নিয়ে যেত সে। প্রসেনের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ফোনের চার্জার থেকে যে এই কাণ্ড ঘটতে পারে, তা আমাদের জানা ছিল না।’’ ওই আত্মীয় জানান, বছরখানেক আগে বিষ্ণুপুর এলাকায় মোবাইল কিনে না দেওয়ায় অবসাদে এক স্কুলপড়ুয়া আত্মহত্যা করেছিল। সেই কারণেই প্রসেন মোবাইলের বায়না করায় অনেক কষ্টে ফুচকা বিক্রেতা বাবা হাজার চারেক টাকায় ফোনটি ছেলেকে কিনে দিয়েছিলেন।
প্রসেনের দিদি বলেন, ‘‘ভাই সারা দিনই মোবাইলে কথা বলত। ওকে বলেছিলাম, ফোনে এত কথা বলা ভাল নয়। কিন্তু শুনত না। সেই ফোনের নেশাই যে ওর জীবনটা এ ভাবে ছিনিয়ে নেবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।’’
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘মোবাইল চার্জে বসিয়ে কথা বলা উচিত নয়। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরাও এ বিষয়ে সচেতনতার প্রচার করার বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।’’ উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার বড়বাজার এলাকায় মোবাইল চার্জে দিয়ে কথা বলার সময়ে চার্জার ফেটে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল। সম্প্রতি ছত্তীসগঢ়ে মোবাইল চার্জে দিয়ে গেম খেলার সময়ে বিস্ফোরণে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘পথ দুর্ঘটনা রুখতে সচেতনতার প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে। সাফল্যও মিলছে। একই ভাবে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, তা নিয়েও মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে।’’