ফি নিয়ন্ত্রণে কী করছে কমিশন, জানে না কেউ

মঙ্গলবার স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, গত সেপ্টেম্বরে বিকাশ ভবনে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে প্রথমেই বলা হয়েছিল, অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ না করে ফি বৃদ্ধি করা যাবে না।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৮
Share:

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হয়ে তৈরি করে দিয়েছিলেন ‘সেল্‌ফ রেগুলেটরি কমিশন’। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় এক বছর। এত দিনেও বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে পারল না প্রশাসন। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই কমিশন তৈরিই সার। কাজের কাজ এগোয়নি এক চুলও। গত সেপ্টেম্বরে এক বৈঠকের পরে প্রাথমিক প্রস্তাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর কিছুই হয়নি। কমিশনের সদস্যদের অধিকাংশই দাবি করেছেন, তাঁদের কোনও বৈঠক হয় না।

Advertisement

ওই কমিশনে স্কুলশিক্ষা সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারেটের এক জন করে প্রতিনিধির পাশাপাশি বাছাই করা কয়েকটি স্কুলের প্রতিনিধিদেরও রাখার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার বিশপ অশোক বিশ্বাস এবং আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজাকেও কমিশনে থাকতে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী কালে তাঁরা দু’জনেই ওই কমিশন থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর পরে সেখান থেকে কয়েকটি স্কুলও বেরিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, স্কুলের ফি নির্ধারণ করতে তৈরি করা হয়েছিল একটি সাব-কমিটি। কিন্তু সেখানেও তেমন কোনও কাজ হয়নি বলেই দাবি সদস্যদের।

মঙ্গলবার স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, গত সেপ্টেম্বরে বিকাশ ভবনে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে প্রথমেই বলা হয়েছিল, অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ না করে ফি বৃদ্ধি করা যাবে না। এর পরে সাব-কমিটির সঙ্গে ফের বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠক আর হয়নি বলে জানান একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অথচ, বিভিন্ন স্কুলে বারবার ফি বৃদ্ধি নিয়ে সরব হয়েছেন অভিভাবকেরা। পথ অবরোধ থেকে শুরু করে নানা ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কমিশন কোনও পদক্ষেপ না করায় বছর ঘুরলেও সমস্যা মেটেনি।

সম্প্রতি দি অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চ স্কুলে অভিভাবকদের গোলমালের পরে ফের প্রশ্নের সামনে ওই কমিশনের ভূমিকা। কয়েকটি স্কুল প্রস্তাব দিয়েছে, বছরে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি ফি বৃদ্ধি হবে না। সেই সঙ্গেই তাদের ইচ্ছে, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, স্কুলের অবস্থান এবং পরীক্ষার ফলাফলের উপরে নির্ভর করে স্কুলের পর্যায় (র‌্যাঙ্কিং) ঠিক করা হোক এবং তার ভিত্তিতে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিক স্কুল। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে নতুন ফি কাঠামো নিয়ে কিছু প্রস্তাব এসেছে। সব ক’টি প্রস্তাব একসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি জানান, এত দিন হয়ে গিয়েছে। এ বার কিছু করা দরকার।

শহরের এক বেসরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল বলেন, ‘‘স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে আর বৈঠক ডাকা হয়নি। তারা ডাকলে যাব। একটা ফি কাঠামো অবশ্যই হওয়া উচিত।’’ গত জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী। চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছিলেন, গুজরাতে বেসরকারি স্কুলের ফি-তে লাগাম পরাতে উদ্যোগী হয়েছে সেখানকার সরকার। কিন্তু এ রাজ্যে সেটা হয়েও হল না কেন? এ দিন তিনি বলেন, ‘‘চিঠির উত্তর পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন