উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র।—নিজস্ব চিত্র।
পার হওয়া তো দূর, প্রধান ফটকের কাছাকাছি গেলেই ছুটে আসেন খাকি পোশাকের দ্বাররক্ষী। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ক্যামেরা বার করলেই রীতিমতো হুমকির সুরে ভেসে আসছে সাবধানবাণী। নিরাপত্তার বহর দেখে বাইরে দাঁড়ানো অনেকেই বললেন, ‘‘এ তো দেখছি বজ্র আঁটুনির চেয়েও বেশি। মাছি গলারও উপায় নেই।’’ প্রথম গেটে ঢোকার অনুমতি মিললেও ফের এক দফা তল্লাশি হয় দ্বিতীয় গেটে। সাধারণ মানুষই হোক অথবা কারখানার কর্মী, ছাড় নেই কারও।
ইছাপুর রাইফেল কারখানার বাইরে এমন বজ্র আঁটুনি দেখে হতবাক অস্ত্র পাচারের অভিযোগে ধৃত কারখানারই দুই ব্যক্তির সহকর্মীরা। যদিও কারখানা থেকে অস্ত্র পাচার হওয়া নিয়ে অবাক নন তাঁরা। কারখানার ভিতর থেকে ফস্কা গেরোর ফাঁক গলে পাচার হয়ে যাচ্ছে অস্ত্র, এমনই জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু কেন এত দিন তা কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি, তাতেই বিস্মিত কর্মীদের একাংশ। তাঁদের মতে, ঠিক মতো তদন্ত হলে আরও বড় রাঘব বোয়াল পুলিশের জালে ওঠার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
এক কর্মী জানান, গত বছর পুজোর আগে অস্ত্র এবং গুলি পাচারের দায়ে কলকাতা পুলিশ ইছাপুর রাইফেল কারখানারই এক কর্মী শম্ভু ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেছিল। কর্মীদের প্রশ্ন, গত বারের ওই ঘটনার পরেও যে কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফেরেনি, তার প্রমাণ ফের দুই কর্মী এবং কারখানার জঞ্জাল সাফাইয়ের দুই ঠিকাদারের এই গ্রেফতারের ঘটনা।
চক্রের শিকড় যে কারখানার আরও গভীরে রয়েছে, সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত কর্মীদের একাংশ। তাঁদের মতে, কর্তৃপক্ষ হয় বিষয়টি হাল্কাভাবে নিচ্ছেন, তা না হলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পুলিশ অবশ্য আরও একটি সম্ভাবনার কথা বলছে। তাদের মতে, জড়িত কর্মীদের চক্রের পাণ্ডা বা তার সঙ্গীরা ‘ব্ল্যাকমেল’ করছে।
কর্মীরা জানান, গত বার পুজোর আগে যখন শম্ভু এবং ঠিকাদার দীপক সাউকে গ্রেফতার করা হয়, তখনই বোঝা গিয়েছিল, গঙ্গার ধারের কারখানার পাঁচিল দিয়েই অস্ত্র পাচার করা হচ্ছে। ঠিকাদারেরাই চক্রের হয়ে কাজ করছে বলেও বোঝা গিয়েছিল। কর্মীদের প্রশ্ন, তার পরেও কেন ঠিকাদারদের ভূমিকা এবং গতিবিধির উপরে নজরদারি চালানো হল না?