ভাগাড়-কাণ্ডে এ বার ধৃত সিপিএম নেতা

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় সরাফতকে মাংস বিক্রেতা হিসেবেই চিনতেন বাসিন্দারা। তবে, প্রায় প্রতিদিনই কাঁকিনাড়া থেকে কলকাতায় আসতেন সরাফত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

হাতেনাতে: খামারে মিলেছে এ রকমই মরা মুরগি।

তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই যেন বেড়ে যাচ্ছে সেই তদন্তের বিস্তার। ভাগাড়ে পড়ে থাকা মৃত পশুর মাংস কেটে নিয়ে তা বিক্রির ঘটনা যে দু’চার জনের কাজ নয়, দিনে দিনে তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এই মাংস-চক্রের জাল যে আরও কতটা দূর ছড়ানো, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ভাগাড়ের মাংস নিয়ে ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ বার গ্রেফতার করা হল সিপিএমের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরকে। বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণীর বাড়ি থেকে মানিক মুখোপাধ্যায় নামে ওই ব্যক্তিকে পাকড়াও করেন তদন্তকারীরা। ভাগাড়-কাণ্ডে ধৃত কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা সরাফত আলির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই মানিক। তিনি মাংস পাচার-চক্রের অন্যতম পাণ্ডা বলেই দাবি করছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় সরাফতকে মাংস বিক্রেতা হিসেবেই চিনতেন বাসিন্দারা। তবে, প্রায় প্রতিদিনই কাঁকিনাড়া থেকে কলকাতায় আসতেন সরাফত। অধিকাংশ সময়ে সরাফতের সঙ্গে মানিকও থাকতেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। মাংস-চক্রের অন্যতম পাণ্ডা, ধৃত সানি মালিককে জেরা করার পরে সরাফতের সঙ্গী হিসেবে মানিকের নাম উঠে এসেছে। মানিক কল্যাণী, গয়েশপুর, কাঁকিনাড়া এলাকার ভাগাড়ে জড়ো হওয়া মৃত পশুর খবর পাঠাতেন বলে অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিক ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত গয়েশপুর পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। গয়েশপুরে সিপিএমের আঞ্চলিক কমিটির নেতাও ছিলেন তিনি। কাজ করতেন একটি চর্মদ্রব্য প্রস্তুতকারক সংস্থায়। এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত। মানিক আগে থাকতেন গয়েশপুরের সুকান্তনগরে। পরে কল্যাণীর অভিজাত এলাকায় বাড়ি করেন তিনি। পুলিশের অভিযোগ, কাউন্সিলর থাকাকালীনই নানা বেআইনি কাজের সঙ্গে মানিক যুক্ত ছিলেন। এ নিয়ে সে সময়ে পুরসভায় অভিযোগও জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার মানিককে আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, মানিকও পাচার-চক্রের অন্যতম পাণ্ডা।

Advertisement

ফ্রিজারে সংরক্ষিত মাংসও পচাগলা। শুক্রবার, নিউ টাউনে।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, কাঁকিনাড়ার নয়াবাজারে সরাফতের একটি মাংসের দোকান রয়েছে। বিক্রি তেমন না থাকলেও দিনদিন সরাফতের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটছিল। তা নিয়ে আশপাশের দোকানিরাও কিছুটা সন্দেহ করতেন তাঁকে। বুধবার রাতে সরাফত ধরা পড়ার পরে সবাই বুঝতে পারেন, ভাগাড়ের মাংসই ছিল তাঁর সচ্ছলতার চাবিকাঠি।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কাঁকিনাড়া, কল্যাণী ও গয়েশপুর মিলিয়ে যত ভাগাড় আছে, সেখানকার সমস্ত মৃত পশুর মাংস সানির কাছে পাঠাতেন মানিক ও সরাফত। তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘এলাকায় কোনও পশু মরলেই মানিক ও সরাফত তা জানিয়ে দিতেন সানিকে। রাতের অন্ধকারে মৃত পশুর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে নেওয়া হত।’’ তদন্তকারীরা জানান, অধিকাংশ সময়েই পশুর মাংস ভাগাড়েই কাটা হত। সরাফত যে হেতু দক্ষ কষাই, তাই কাজটা তিনিই করতেন। তার পরে বিকেলের দিকে নিজের দোকানের কাজ শেষ হলে সেই মাংস নিয়ে রোজ কলকাতায় আসতেন সরাফত। অধিকাংশ দিনই সঙ্গে থাকতেন মানিক।

পুলিশ জানায়, সানির হয়ে কলকাতার ছোট-বড় বিভিন্ন রেস্তরাঁয় ভাগাড়ের মাংস পৌঁছে দিতেন সরাফত। তার পরে উদ্বৃত্ত মাংস সংরক্ষণের জন্য গোপন ডেরায় নিয়ে গিয়ে তাতে ফর্মালিন মাখিয়ে হিমঘরে রেখে দেওয়া হত। দিনের পর দিন এ ভাবেই চলত ভাগাড়-চক্রের ব্যবসা।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন