সমাজ-পড়ুয়া বন্ধন দৃঢ় করবে সর্বশিক্ষা মিশন

বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘টুইনিং অব স্কুলস’। প্রথমে ১৫টি বরোর প্রতিটি থেকে দু’টি করে মোট ৩০টি স্কুলকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

আত্মকেন্দ্রিকতা ও হীনম্মন্যতা দূর করে স্কুলপড়ুয়ারা যাতে যথার্থ অর্থে সামাজিক হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য উদ্যোগী হল কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশন। এই উদ্দেশ্যে কলকাতা পুরসভার ১৫টি বরোর মোট ৩০টি সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের সপ্তম অথবা অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের একসঙ্গে করে শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে তা চার দেওয়ালের মধ্যেই শুধু নয়, শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ওই পড়ুয়াদের সঙ্গে সমাজের সরাসরি পরিচয় ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন।

Advertisement

বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘টুইনিং অব স্কুলস’। প্রথমে ১৫টি বরোর প্রতিটি থেকে দু’টি করে মোট ৩০টি স্কুলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পরে প্রতিটি স্কুলের সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণির ৩০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে মোট ৬০ জনের একটি দল গঠন করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে মেধাবী, পিছিয়ে পড়া এবং স্কুলছুট পড়ুয়ারাও।

পরবর্তী পর্যায়ে বেছে নেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি সপ্তাহ। সপ্তাহের তিন দিন ওই ৬০ জন পড়ুয়াকে দু’টি স্কুলেই নিয়ে যাবেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি, তাদের নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করবেন তাঁরা। পরিচয় করিয়ে দেবেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। যে এলাকার যে বিশেষত্ব, তার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি যোগাযোগ করানোর দায়িত্ব থাকছে শিক্ষক ও সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিকদের উপরে।

Advertisement

যেমন, মেটিয়াবুরুজ এলাকার জরি শিল্প বা তপসিয়া এলাকার চামড়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবে পড়ুয়ারা। তাঁদের জীবনযাপন ও জীবিকা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে তারা। স্কুলশিক্ষা দফতরের আশা, এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা যেমন দূর হবে, তেমনই মাঠে নেমে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে পরিচয় তাদের মানসিক বিকাশেও সাহায্য করবে।

সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিকেরা আরও মনে করছেন, মেধাবী ও পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা একসঙ্গে ক্লাস করায় তাদের মধ্যে গড়ে উঠবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। যার ফলে ঘুচবে বৈষম্য। বিভিন্ন মনোগ্রাহী বিষয় নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করবেন শিক্ষকেরা। সপ্তাহের শেষ দিনে ওই ৬০ জন পড়ুয়ার অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনাসভা করবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সর্বশিক্ষা মিশন। তাঁদের সন্তানদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া হবে। ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হতে গেলে সবার আগে যে সামাজিক হওয়া প্রয়োজন, সেই বার্তা দেওয়া হবে অভিভাবকদের।

ইতিমধ্যেই ১৩ নম্বর বরোর বেহালা অঞ্চলে এই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বেহালা গার্লস হাইস্কুলের সঙ্গে মেশানো হয়েছে বড়িশা বিবেকানন্দ গার্লস হাইস্কুলকে। আবার গার্ডেনরিচ নুটবিহারী দাস গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে পড়াশোনা করছে গার্ডেনরিচ মুদিয়ালি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীরা।

সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ এই প্রথম। আপাতত শুধু বরো অঞ্চলের স্কুলগুলির মধ্যেই পড়ুয়া আদানপ্রদান হল। পরবর্তীকালে এই প্রচেষ্টা আরও বাড়ানো হবে।’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। এর ফলে সমাজ সম্পর্কে পড়ুয়াদেরও স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন