দাঁড়িয়ে থাকা ভগ্নস্তূপ কি ফের সচল হয়ে উঠবে? ফের কি হাল্কা যানবাহন চলাচল করতে পারবে পোস্তা উড়ালপুল দিয়ে? আপাতত এই প্রশ্নগুলিই ঘোরাফেরা করছে প্রশাসনের অভ্যন্তরে। কারণ, পোস্তা উড়ালপুল নিয়ে রাজ্য সরকার গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। শুধু আলোচনাই নয়, প্রস্তাবও জমা পড়েছে এ বিষয়ে। তাই নতুন ভাবে নকশা বানিয়ে পোস্তা উড়ালপুলের ভেঙে পড়া অংশ সারিয়ে সেখানে ফের যানবাহন চালানো যায় কি না, আপাতত তা নিয়েই আলোচনা চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের মার্চে ভেঙে পড়েছিল ওই উড়ালপুলের একাংশ। মারা যান ২৬ জন। তার পরেই বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়ে। সেই সঙ্গে খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শও চায় সরকার। আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটি রাজ্যকে জানিয়ে দেয়, ওই উড়ালপুল দিয়ে আর গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ, সেটি ভেঙে ফেলার পক্ষেই মত দেয় কমিটি। কিন্তু সম্প্রতি প্রশাসনের সেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির বৈঠকে, ভেঙে ফেলার পরিবর্তে পোস্তা উড়ালপুল ফের ব্যবহারযোগ্য করে তোলার স্বপক্ষেই প্রস্তাব জমা পড়েছে বলে সূত্রের খবর। রাইটস হাইওয়ে ডিভিশনের তরফে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ।
ওই কর্তারা জানাচ্ছেন, জমা পড়া প্রস্তাবে পোস্তা উড়ালপুল দিয়ে ছোট গাড়ি ও বাইক চালানোর কথা বলা হয়েছে। তবে তার আগে বাকি উড়ালপুলটি ভাল ভাবে পরীক্ষা করে দেখা হবে। উড়ালপুলের বাকি অংশের ওয়েল্ডিং, বোল্টিং-এর কাজ ঠিক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এর জন্য আর একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গোটা উড়ালপুলটি ভাঙতে প্রায় ৮০-৯০ কোটি টাকা খরচ হবে। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, ভাঙার জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি, রয়েছে আরও খরচ। যেমন ভাঙার কাজ চলাকালীন উড়ালপুল সংলগ্ন সব বাড়ি ফাঁকা রাখতে হবে। না হলে ফের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকবে। সেই কাজেও অনেকটা অর্থ প্রয়োজন। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘উড়ালপুল ভাঙার একটি বড় ঝক্কি রয়েছে।’’
প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ বার তাই ফের ওই উড়ালপুলটি ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ভাবনা ঘোরাফেরা করছে। ভাঙা অংশটি কী ভাবে পুনর্নির্মাণ করা হবে, তারও প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। যে অংশটুকু ভেঙে পড়েছে, সেটি একটি পিলারের উপরে দাঁড়িয়ে ছিল। এ বার সেখানে দু’টি পিলার তৈরি করে ভাঙা অংশটির পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই উড়ালপুলে ফের গাড়ি চলবে কি না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। কিন্তু সেটাও বিবেচনার মধ্যে রাখা হচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, পোস্তা বাজার-সহ নিমতলা ঘাট স্ট্রিট অঞ্চলে যানজট কমানোর উদ্দেশ্যে প্রায় দু’কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই উড়ালপুলের কাজ শুরু হয়েছিল বাম আমলে। প্রথমে প্রকল্প শেষের সময়সীমা ধরা হয় ২০১২ সালে। উড়ালপুল তৈরির প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ১৫৩ কোটি টাকা। কিন্তু জমি-জট, আইনি জটিলতা-সহ একাধিক কারণে প্রকল্প শেষের সময়সীমা পিছিয়ে যায় ২০১৬-র অগস্টে। পরবর্তীকালে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৪ কোটি টাকা। তার পরেই ঘটে যায় বিপর্যয়।